দিদির বিয়ের পরে দুর্ঘটনায় মৃত্যু ভাইয়ের

সন্তোষপুর অ্যাভিনিউয়ে মঙ্গলবার ভোরে একটি লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয় বাপন পুরকায়েত (২১) নামে ওই যুবকের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৯ ০১:৩৭
Share:

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর পরিজনেরা। মঙ্গলবার সকালে, সন্তোষপুরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

দিদির বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে রাত দু’টো নাগাদ ভাই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। বলে গিয়েছিলেন, বন্ধুদের সঙ্গে মোটরবাইক নিয়ে ক্লাবে যাচ্ছেন। বাড়ির সদস্যেরা যখন ঘুমন্ত, তখনই পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল ভাইয়ের।

Advertisement

সন্তোষপুর অ্যাভিনিউয়ে মঙ্গলবার ভোরে একটি লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয় বাপন পুরকায়েত (২১) নামে ওই যুবকের। তিনি সার্ভে পার্ক থানা এলাকার সন্তোষপুরের ইস্ট রাজাপুরের বাসিন্দা ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোর পাঁচটা নাগাদ সন্তোষপুর অ্যাভিনিউয়ে লেক ইস্ট রোডের কাছে লরির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় দ্রুত গতিতে থাকা বাপনের মোটরবাইকের। লরির ধাক্কায় রাস্তার এক দিকে ছিটকে পড়েন তিনি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। লরির ধাক্কায় দুমড়ে গিয়েছে মোটরবাইকটির সামনের অংশ। মৃতের মাথায় হেলমেট ছিল না বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সোমবার বিয়ে হয়েছে বাপনের দিদি রিঙ্কির। মঙ্গলবার সকালে বাসি বিয়ের অনুষ্ঠানের পরে তাঁর শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই দুর্ঘটনার খবর এসে পৌঁছয় পুরকায়েত পরিবারের বড় ছেলে বাবুসোনার কাছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়, দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছতে। এ দিন বাবুসোনা জানান, পুলিশের ফোন আসার কিছু পরেই প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও তিনি ভাইয়ের দুর্ঘটনার খবর জানতে পারেন। পাঁচ যুবকের সঙ্গে বাপন ঘুরতে বেরোলেও লরির সঙ্গে ধাক্কা লাগার পরে ওই বন্ধুরা ঘটনাস্থলে আসেননি বলে অভিযোগ। পাঁচ বন্ধুর এক জন গুড্ডু হালদারের দাবি, তাঁদের মোটরবাইকটি কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিল। বিকট শব্দ শুনে তাঁরা পিছনে ফিরে এসে দেখেন বাপন রাস্তার উপরে পড়ে রয়েছেন। পুলিশ এসে যাওয়ায় গুড্ডু পাড়ায় এসে খবর দেন বলে দাবি করেছেন।

Advertisement

সোমবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ পাড়ার ক্লাবে রিঙ্কির বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হয়। এর পরে অতিথিদের আপ্যায়ন শেষ হতে হতে বারোটা বেজে যায়। বাড়ির সকলে ঘুমোতে গেলে ছ’মাস আগে কেনা মোটরবাইক নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেরোন বাপন। এ দিন সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাপনের তিন দিদি, মা-সহ পরিবারের অন্য সদস্যেরা। তাঁর অসুস্থ বাবা শয্যাশায়ী। পরিবারের ছোট ছেলের মৃত্যুর খবর মেলার পরে শ্বশুরবাড়ি যাওয়া বাতিল হয়েছে সদ্য বিবাহিতার। কাঁদতে কাঁদতে রিঙ্কি বলেন, ‘‘রাত দুটো নাগাদ ভাই বাড়ি থেকে বেরোল। বলল, দিদি তুই বিশ্রাম নে। আমার ঘুম পাচ্ছে, ক্লাবে যাচ্ছি। সেই যে গেল আর ফিরল না।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, বাপনের সঙ্গে ছিলেন এলাকার আরও পাঁচ যুবক। তিনটি মোটরবাইকে চেপে এ দিন ভোরে তাঁরা দ্রুত গতিতে যাচ্ছিলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাইক নিয়ে রেস করছিলেন তাঁরা। পুলিশ জানায়, ভোর ৪টে ৫৮ মিনিট

নাগাদ সন্তোষপুরের খালপাড়ের রাস্তা দিয়ে জোড়া ব্রিজ, সন্তোষপুর অ্যাভিনিউ হয়ে সুকান্ত সেতুর দিকে যাচ্ছিল ওই তিনটি মোটরবাইক। একটি বাইকে বাপন একাই ছিলেন। বাকি দু’টি বাইকে পাঁচ জন যুবক ছিলেন। এলাকার একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ জানতে পেরেছে, দু’টি মোটরবাইক দ্রুত গতিতে সুকান্ত সেতুর দিকে এগিয়ে গেলেও বাপনের মোটরবাইকটির

সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় একটি লরির। ঘটনার পরেই এলাকার লোকজন ছুটে আসেন। ওই সময়ে সেখানে টহলদারি করছিলেন সার্ভে পার্ক থানার এক অফিসার। তিনি ভিড় দেখে এগিয়ে যান। পরে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা বাপনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন