Calcutta Medical College

‘দাদাকে কী ভাবে উদ্ধার করেছি তা ঈশ্বরই জানেন!’

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ১৩:৩৭
Share:

ভাইয়ের তৎপরতায় উদ্ধার দাদা বাসুদেব রঞ্জিত। নিজস্ব চিত্র। 

মা কল্পনা চট্টোপাধ্যায় বেশ কয়েক দিন ধরেই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি রয়েছেন। দিনের বেলা মায়ের দেখভাল করেন। আর রাতটা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরেই শুয়েই কাটিয়ে দেন হুগলির গুড়াপের বাসিন্দা কেদারনাথ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু, বুধবার সকালে আচমকাই ঘুম ভাঙতে দেখেন, যে ওয়ার্ডে তাঁর মা ভর্তি রয়েছেন, সেই মেডিসিন বিভাগ থেকে কালো ধোঁয়া বার হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান তিনি।

Advertisement

চিৎকার করে হাসপাতালে কর্মীদের জানান দেন, আগুন লেগেছে। কোনও রকমে মায়ের বেডের কাছে পৌঁছন কেদারনাথ। তার পর নিজেই পাঁজাকোলা করে বছর সত্তরের মাকে তুলে নেন। তার পর বাইরে বেরিয়ে আসেন। কেদারনাথের কথায়, ‘‘ভিতরে তখন অন্য রোগীরা আতঙ্কে চিৎকার করছেন। মাকে বাইরে নিরাপদ জায়গায় রেখে ফের ছুটে যাই। আরও কয়েক জন রোগীকে ও ভাবেই বাইরে নিয়ে আসি। আমরা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করার পর হাসপাতালে গ্রুপ ডি কর্মীরা এসে রোগী উদ্ধারের কাজ শুরু করেন।’’

এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ যখন মেডিক্যাল কলেজে আগুন লাগে, রমেশ রঞ্জিত তখন দাদার জন্য ওষুধ কিনতে বাইরে বেরিয়ে ছিলেন। দাদা বাসুদেব রঞ্জিত ডেঙ্গি নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি। চিকিৎসকেরা তাঁকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায়। কারণ বছর পঁয়তাল্লিশের বাসুদেবের জ্বর কিছুতেই নামছে না। আগুন লাগার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে চলে আসেন রমেশ। তত ক্ষণে হাসপাতালে হুড়োহুড়ি বেধে গিয়েছে। দাদাকে কী ভাবে উদ্ধার করবেন, সেই আতঙ্কে কান্নাকাটি শুরু করে দেন তিনি। রমেশ বলেন, ‘‘তখনই এগিয়ে আসেন হাসপাতালেরই এক গ্রুপ ডি কর্মী। আমাকে নিয়ে সোজা উঠে যান মেডিসিন বিভাগের পাশের ওয়ার্ডে। দু’জনে মিলে মুখে অক্সিজেন মাস্ক বাঁধা দাদাকে বাইরে বার করে আনি।’’ এর পর বাসুদেবকে নিয়ে যাওয়া হয় এমার্জেন্সি বিভাগে।

Advertisement

ছেলের তৎপরতায় উদ্ধার গুড়াপের বাসিন্দা কল্পনা চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

একই অভিজ্ঞতা উপেন্দ্রকুমার প্রসাদের। কলেজ স্ট্রিট এলাকায় বাড়ি ভাড়া তাঁদের পরিবার থাকে। পেয়ে ব্যথা নিয়ে তাঁর দাদা উপেন্দ্রকুমার কয়েক দিন আগে ভর্তি হন মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগে। এ দিন সকালে উপেন্দ্রকুমার দাদাকে হাসপাতালে দেখতে এসেছিলেন। ঠিক সেই সময়ে ধোঁয়া ঢুকতে শুরু করে মেডিসিন বিভাগে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দাদাকে কোনও রকমে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে নীচে নামিয়ে আনেন তিনি। উপেন্দ্রকুমারের কথায়, ‘‘কোথায় আগুন লেগেছিল জানি না। কিন্তু, দাদাদের ওয়ার্ডটা পুরো কালো ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল। কী ভাবে যে ওকে নিয়ে বাইরে নিয়ে এসেছি, তা ঈশ্বরই জানেন!’’

দেখুন ভিডিয়ো

আরও পড়ুন: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আগুন, আতঙ্কে হুড়োহুড়ি, রাস্তায় নামিয়ে আনা হল রোগীদের

এ দিন সকালে মেডিক্যাল কলেজে আগুন লাগার পর পরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা হাসপাতালে। বিভিন্ন বিভাগ থেকে রোগীদের উদ্ধার করে এমার্জেন্সিতে নিয়ে আসা হয়। কাউকে চাদরে মুড়ে, কাউকে হাঁটিয়ে, কাউকে হুইলচেয়ার বা স্ট্রেচারে করে নিয়ে এসে রাখা হয় ওই বিভাগের মেঝেতেই। মুহূর্তের মধ্যেই উপচে পড়ে এমার্জেন্সি বিভাগ। প্রায় আড়াইশো জন রোঘীর ভিড়ে তখন সেখানে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। তার মধ্যেই প্রতি দিনকার মতো বাইরে থাকে আসতে থাকেন রোগীরা। তাঁদের মধ্যে মুমূর্ষু রোগীরাও ছিলেন। কিন্তু, এমার্জেন্সিতে তখন তাঁদের দেখার কোনও ব্যবস্থা নেই। কাজেই প্রায় সকলকেই ফিরিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় তাঁদের।

আরও পড়ুন: ফরেন্সিক আসার আগেই ধুয়েমুছে সব সাফ

আগুন লাগার পর। ছবি: পিটিআই

দুপুর পর্যন্ত জানা যায়নি, আগুন কী ভাবে লেগেছিল। পাশেই দমকল কেন্দ্র থাকার ফলে কর্মীরা তাড়াতাড়ি আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেছিলেন। ঘণ্টা পাঁচেকের মধ্যে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এলেও পুলিশ এবং দমকলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রোগী উদ্ধারের কাজে তাঁরা তেমন ভাবে তৎপর হননি। কেদারনাথের অভিযোগ, ‘‘দমকলকর্মীরা এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। কিন্তু, রোগীদের কী ভাবে উদ্ধার করা হবে, তা নিয়ে প্রথমে তেমন কোনও হুঁশ কারও ছিল না।’’

(শহরের প্রতি মুহূর্তের হেডলাইন, কলকাতার যে কোনও ব্রেকিং নিউজ পেতে ক্লিক করুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন