‘ছেলেটা সত্যিই আর ফিরবে না!’

বন্ধুর দাদার বিয়ের মিষ্টি কিনে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে ঘটে যায় বিপত্তি। শনিবার সকালে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় সঞ্জয় বনু (১৯) এবং বিশ্বজিৎ ভুঁইয়া (১৯) নামে ওই দুই তরুণের।

Advertisement

সৌরভ দত্ত ও কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৮
Share:

মর্মান্তিক: বিশ্বজিতের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে বাবা সুশীল ভুঁইয়া (বাঁ দিকে)। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দৌড়ে আসছেন সঞ্জয়ের বাবা-মা (ডান দিকের দু’জন) এবং পরিজনেরা। শনিবার, চিংড়িঘাটায়। নিজস্ব চিত্র

ছেলে বলেছিল, দোকান থেকে ফিরেই পরোটা চাই। মা-ও ছেলের পছন্দের জলখাবার বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। অন্য জন আবার হাতখরচের ৫০ টাকার জন্য বায়না ধরেছিল মায়ের কাছে। কিন্তু কোনও আবদারই রাখা হল না দুই মায়ের!

Advertisement

বন্ধুর দাদার বিয়ের মিষ্টি কিনে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে ঘটে যায় বিপত্তি। শনিবার সকালে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় সঞ্জয় বনু (১৯) এবং বিশ্বজিৎ ভুঁইয়া (১৯) নামে ওই দুই তরুণের।

শান্তিনগরে সঞ্জয়দের একচিলতে ঘরে খবরটা পৌঁছয় বেলা বারোটা নাগাদ। ঘটনাস্থলে ছুটে যান তার বাবা-মা। প্রতিবেশীর কাছে দুর্ঘটনার খবর শুনে চিংড়িঘাটা মোড়ে পৌঁছে যান বিশ্বজিতের মাসি সুষমা দাসও। দেখেন, রাস্তায় পড়ে রয়েছে ভাঙা সাইকেল, ছড়িয়ে রয়েছে মিষ্টি। জানতে পারেন, মৃত্যু হয়েছে দুই বন্ধুরই। তাদের দেহ নীলরতন সরকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

Advertisement

শোনা কথায় তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না ভুঁইয়া এবং বনু পরিবারের। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ কোনওমতে পৌঁছন হাসপাতালে। জানতে পারেন, তত ক্ষণে ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে মৃতদেহ।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুই বন্ধুই বঙ্গবাসী কমার্স কলেজে হিসাবশাস্ত্রের স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্র। গত ৩১ জানুয়ারি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। সেই থেকে বন্ধুর দাদার বিয়ে নিয়েই মেতে ছিল ওরা। বিয়েবাড়িতে কত আনন্দ করবে, তা নিয়ে চলেছে নানা জল্পনা।

হাসপাতালে ছেলের মৃতদেহ দেখার পর থেকে আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলেন না টুম্পাদেবী। কাঁপা কাঁপা গলায় শুধু বললেন, ‘‘ছেলেটা বলল, জলখাবারে পরোটা চাই। সেটাই বানাচ্ছিলাম। ছেলেটা সত্যিই আর ফিরবে না! এত কিছু ঘটে গেল, এখনও কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না।’’ সঞ্জয়ের বাবা নীলরতন বনু সমবায়ের একটি ভেড়িতে কাজ করেন। ছেলের লেখাপড়া নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তাঁর। হাসপাতালে দাঁড়িয়ে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘কী করে যে এত কিছু হয়ে গেল, বুঝতে পারছি না। ট্র্যাফিক পুলিশ একটু নজর রাখলেই বোধহয় আমাদের এমন দিন
দেখতে হত না।’’

শান্তিনগরেই বিশ্বজিতের বাবা সুশীল ভুঁইয়ার সাইকেলের দোকান রয়েছে। সেখানেই খবরটা যায় প্রথমে। ছেলের মৃত্যুর খবর বিশ্বজিতের মাকে কী ভাবে দেওয়া হবে, সেটাই স্থির করতে পারছিলেন না। সুষমাদেবী হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘দিদির কাছে ৫০ টাকা চাইল। বলল বাড়ি ফিরলেই দিতে হবে। ওর ছেলে যে আর বাড়িই ফিরবে না, এ কথা কী ভাবে জানাব!’’ তবে বিশ্বজিতের দাদা দীননাথ ভুঁইয়ার অভিযোগ, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই মারা গেল দুই যুবক। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশের কোনও নজরদারি নেই। তার খেসারত দিল ভাইয়েরা।’’

দুই বন্ধুর মৃত্যুর ঘটনায় স্তম্ভিত বাকি বন্ধুরাও। এ দিন হাসপাতালে বিশ্বজিৎ এবং সঞ্জয়ের বন্ধু অলোক মণ্ডল বলে, ‘‘কাল বিকেলেও এক সঙ্গে ফুটবল খেললাম। এখন দেখছি মুখ থেঁতলে যাওয়া দু’টো দেহ। সব যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন