ক্ষোভের উত্তাপ বদলে গেল ধন্যবাদের উষ্ণতায়

পাঁচ দিনের মধ্যেই একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেলেন বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:২৪
Share:

দমকল ও পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে মিছিল বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ীদর। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

পাঁচ দিনের মধ্যেই একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেলেন বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

দিন পাঁচেক আগের ঘটনা। বুধবার দুপুর দু’টো। ক্যানিং স্ট্রিটের সামনে বাগড়ি মার্কেটের এ ব্লকের তিনতলা, চারতলা, পাঁচতলায় তখনও বিভিন্ন জায়গা থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ক্যানিং স্ট্রিটে ওই ধোঁয়া দেখিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন বাগড়ির দোকানদারেরা। রীতিমতো পুলিশ ও দমকলরে উদ্দেশ্যে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তাঁরা অভিযোগ জানাচ্ছিলেন, আগুন লাগার পরে চার দিন কেটে গেলেও দমকল ও পুলিশ প্রশাসন আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। প্রশ্ন তুলছিলেন ওদের পরিকাঠামো নিয়ে। অভিযোগ ছিল, দেরি করে দমকল আসে। পুলিশও এসেছিল দেরি করে। তাই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুত। ওই ক্ষোভ শুধু ক্যানিং স্ট্রিটেই নয়, বাগড়ির আশপাশে জটলা করা প্রায় সব ব্যবসায়ীরই এক অভিযোগ ছিল। আগুন কেন নিভছে না, সেই প্রশ্নেই উত্তপ্ত ছিল বাগড়ি।

বুধবারের পরে এক সপ্তাহও কাটেনি। সোমবার গোলাপ ফুলের ডালি নিয়ে বাগড়ির ব্যবসায়ীরা ধন্যবাদ জানাতে মিছিল করে গেলেন বড়বাজার থানায়। দ্রুত আগুন নেভানোর জন্য তাঁরা ধন্যবাদ দিলেন দমকলকে। আগুন লাগার পরের কয়েক দিন সুষ্ঠু ভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য ধন্যবাদ জানালেন বড়বাজার থানার অফিসারদেরও। পুলিশ কমিশনার মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে ধন্যবাদজ্ঞাপনও করলেন তাঁরা। হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডেও দেখা গেল পুলিশ, দমকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বার্তা।

Advertisement

এ দিকে, এক সপ্তাহের মধ্যে বাগড়ির একাংশ ব্যবসায়ী পুরো একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ায় অবাক ব্যবসায়ী মহলের আর এক অংশ। কেন এই সুর বদল? গত চার দিনে দমকল ও পুলিশকে কী এমন কাজ করতে দেখলেন যে, তাতে

তাঁরা মত বদলে ফেললেন? ধন্যবাদজ্ঞাপন মিছিলে ছিলেন বাগড়ি মার্কেট সেন্ট্রাল কলকাতা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মহম্মদ কাসেম। তিনি বলেন, ‘‘আসলে তখন পুরো মার্কেটে আগুন জ্বলছিল। আমাদের বুকের ভিতরেও যেন জ্বলছিল আগুন। তখন আমরা আবেগে অনেক কথা বলে ফেলেছিলাম। কিন্তু দেখা গেল, দমকল ও পুলিশ খুব ভাল কাজ করেছে। আগুন যদি ঠিক সময়ে দমকল না নেভাত, তা হলে পুরো বাগড়িই জ্বলে খাক হয়ে যেত।’’ শুধু মহম্মদ কাসেমই নন, বিনোদ বসন্তদানি নামে এক ব্যবসায়ীর

মতে, ‘‘দমকল ঠিক সময়ে এসেছিল বলেই আগুন দ্রুত নিভেছে।’’ তা হলে তখন কেন দমকলের দেরি করে আসার অভিযোগ তুলেছিলেন? এর উত্তরে বসন্ত বলেন, ‘‘দমকলের আসতে তো একটু সময়

লাগবেই।’’ বসন্তবাবু জানান, পুরসভা যেন বাগড়ি পরিষ্কার ও মেরামতির কাজ দ্রুত করে তাঁদের হাতে বাজারটা তুলে দেয়, এ রকম একটা আবেদন তাঁরা জানাবেন। তা হলে অ্যাসোসিয়েশনই বাজারের বাকি পরিকাঠামো তৈরি করে দ্রুত দোকান খুলে ফেলতে পারবে।

এই মিছিল দেখে অবাক বড়বাজার থানার ওসি সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়। বড়বাজার থানায় বাগড়ি মার্কেটের এক ব্যাবসায়ীর ছেলের হাত থেকে ফুলের তোড়া নিয়ে রীতিমতো আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য এ রকম ভাবে মিছিল করে মানুষদের থানায় আসার ঘটনা ২৭ বছরের কর্মজীবনে আগে দেখিনি। বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের এই সৌজন্য দেখানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি দমকল বাহিনীকেও এই সৌজন্যের কথা জানিয়ে দেব।’’

তবে ক্ষোভের ধিকিধিকি আগুন যে কোনও কোনও ব্যবসায়ীর মধ্যে রয়েই গিয়েছে, তা বাগড়ির আশপাশে কান পাতলেই টের পাওয়া যায়। ক্ষোভের কথা বললে অ্যাসোসিয়েশনের কোপে পড়তে পারেন এই আশঙ্কায় নাম না জানিয়ে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘ওঁরা হয়তো আগুন থেকে সব জিনিস বার করতে পেরেছেন, তাই ধন্যবাদ জানাতে গিয়েছেন। আমার এ ব্লকে ছ’টা দোকান ছিল ঝুটো গয়নার। সব পুড়ে খাক। দমকল-পুলিশ আরও তৎপর কি হতে পারত না?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন