উলটপুরাণ: নামা তো দূর অস্ত্, উল্টে হু হু করে ঢুকছে গঙ্গার জল। সোমবার, মহাজাতি সদনের কাছে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
রবিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে শহরে জল জমছিলই। সোমবার সকালে গঙ্গায় জোয়ার আসতেই অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ঘাটগুলিতে ছুটে যান মেয়র ও মেয়র পারিষদেরা। কারণ, আবহাওয়া দফতর জানিয়ে দিয়েছে, জোয়ারের ফলে গঙ্গার জল ১৮ ফুট উপরে উঠবে। এমনিতেই বৃষ্টির জলে বিপর্যস্ত নিকাশির হাল। সঙ্গে জোয়ারের জল এক ধাক্কায় এতটা বেড়ে যাওয়ায় বানভাসি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় আদিগঙ্গা-সহ খালপাড়ের বহু এলাকায়। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি সংলগ্ন কালীঘাট এলাকাও জলমগ্ন হয়ে পড়তে পারে বলে জানা যায়। পরিস্থিতি সামলাতে পুর প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। নিজে বেলা দেড়টা নাগাদ পৌঁছন বাজে কদমতলা ঘাটে। বন্ধ করে দেওয়া হয় শহরের জল গঙ্গায় ফেলার লকগেট।
পুরসভা সূত্রে খবর, শনিবার থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি হচ্ছিল। রবিবার সারা রাত চলে বর্ষণ। সোমবার সকালে দেখা যায়, কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ— অসংখ্য রাস্তা জলের নীচে। উত্তরের চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট, মহাত্মা গাঁধী রোড, কলেজ স্ট্রিট থেকে দক্ষিণের লাউডন স্ট্রিট, রাজা সন্তোষ রোড, কসবা, নিউ রোড, মোমিনপুর, নিউ আলিপুরের জি ব্লক-সহ অনেক জায়গায় জল জমে যায়। সব চেয়ে খারাপ অবস্থা রাজ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বেহালায়। ১২৯ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রনগরে গিয়ে দেখা যায়, মহেন্দ্র ব্যানার্জি রোড সাব পোস্ট অফিসের ভিতরে হাঁটু জল। চেয়ারে পা তুলে কাজ চালাচ্ছেন তিন কর্মী। তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘একটু বেশি বৃষ্টি হলেই জল ঢুকে যায়। এ ভাবেই অভ্যস্ত হতে হয়েছে।’’
উল্টো দিকে এক মিষ্টির দোকান। প্রায় দু’ফুট জলের নীচে দোকানের চাতাল। শো-কেসে থরে থরে মিষ্টি। দোকানি আক্ষরিক অর্থেই মাছি তাড়াচ্ছেন। যত দূর চোখ যায়, শুধু জল আর জল। রবীন্দ্রনগরের তিন ও চার নম্বর গলি, সবই জলমগ্ন। কোথাও হাঁটু, কোথাও বা তার থেকেও বেশি। রিকশাচালক তুহিন বললেন, ‘‘শনিবার থেকে এই অবস্থা। বছরের পর বছর এ ভাবেই চলছে।’’ চিত্র সাংবাদিককে দেখে পাশ থেকে এক যুবকের টিপ্পনি, ‘‘বছর বছর অনেক ছবিই তো তুললেন! কিছুই তো বদলাল না।’’ ওই যুবক বলেন, ‘‘আরও একটু এগোন। বেগোর খালের দিকে। দেখবেন, বাসিন্দারা গামছা পরে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন-ঢুকছেন। কোমর পর্যন্ত জল। গামছা ছাড়া উপায় নেই।’’
কী করছে পুর প্রশাসন? রবীন্দ্রনগরের ওই এলাকা থেকে দু’কিলোমিটার দূরে পর্ণশ্রী পল্লি। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজেও পর্ণশ্রীর বাসিন্দা। তা সত্ত্বেও বছরের পর বছর তাঁর প্রতিবেশীদের জমা জলে ভুগতে হয় কেন? মেয়র বলছেন, এই দুর্ভোগ সাময়িক। আর মেয়র পারিষদ (নিকাশি) বলছেন ঠিক উল্টো। তাঁর সাফ কথা, ‘‘দুর্ভোগ আরও বাড়বে।’’
পুরসভার অফিসারদের অভিযোগ, নিকাশির কাজে গাফিলতির জন্যই জল বেরোচ্ছে না। তারকবাবুর সাফাই, শহর থেকে নিকাশির জল টেনে ফেলা হয় খালে। এখন খালগুলিও টইটম্বুর। তাই জল বেরোচ্ছে না। তার উপরে বৃষ্টি বাড়ছে। জোয়ারে গঙ্গার শহরে ঢুকে পড়ছে।
তা হলে করণীয় কী? পুরসভা বলছে, অপেক্ষা। বৃষ্টি কমলেই জল ধীরে ধীরে নামবে।
আর না কমলে? সেই ভয়েই সিঁটিয়ে বহু এলাকা। যেমন, খিদিরপুরে ফ্যান্সি মার্কেটের কাছে রামনাথ লেন। সেখানে এ দিন নৌকা চলেছে।