প্রায় জোর করেই তো পাঠিয়ে দেওয়া হল আমাদের

সায়ন্তনের বাবা পেশায় শিশু চিকিৎসক সুজিত বিশ্বাসের কথায়, ‘‘এ তো রেফারেরই নামান্তর। ন্যাশনালের ডাক্তারেরা গোড়া থেকেই ওদের চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা করেননি। ওঁরা দায়িত্ব পালন করলে আমার ছেলেটা বেঁচে যেতে পারত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩২
Share:

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ।

সায়ন্তন বিশ্বাসের মৃত্যু এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি পরিষেবা নিয়ে আরও এক বার প্রশ্ন তুলে দিল। রবিবার সকালে মুমূর্ষু সায়ন্তনকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে বাইপাসের মেডিকা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেছিলেন তাঁর এক বন্ধু। তাঁর অভিযোগ, ন্যাশনালের এক বা একাধিক চিকিৎসকই পরিকাঠামোর কারণ দেখিয়ে অন্যত্র যাওয়ার জন্য ‘প্রভাবিত’ করেন। ন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন।

Advertisement

ওই দুর্ঘটনায় সায়ন্তনের সহপাঠী শুভদীপ প্রধানের আঘাত সব চেয়ে কম ছিল। তিনিই বন্ডে সই করে বন্ধুকে নিয়ে অন্য হাসপাতালে যান। সোমবার শুভদীপ বলেন, ‘‘প্রায় জোর করেই তো পাঠিয়ে দেওয়া হল আমাদের। জরুরি বিভাগের প্রত্যেকেই বলছিলেন, এখানে থাকলে কিছু হবে না, নিয়ে যাও। এর পর কী করে ঝুঁকি নেব?’’

ন্যাশনালে ওই অল্প সময়ে তাঁর অভিজ্ঞতারও বর্ণনা দিয়েছেন শুভদীপ। বলেন, ‘‘সুদামের মুখের ড্রেসিং করানোর জন্য রেজার দরকার ছিল। হাসপাতাল থেকে একটা খোলা ব্লেড এনে কাটতে শুরু করা হয়। সুদাম নিজে কুড়ি টাকা বার করে আমাকে রেজার কিনে আনতে বলে।’’

Advertisement

সায়ন্তনের বাবা পেশায় শিশু চিকিৎসক সুজিত বিশ্বাসের কথায়, ‘‘এ তো রেফারেরই নামান্তর। ন্যাশনালের ডাক্তারেরা গোড়া থেকেই ওদের চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা করেননি। ওঁরা দায়িত্ব পালন করলে আমার ছেলেটা বেঁচে যেতে পারত। ওই রকম চোট থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে ডাক্তারেরা অন্যত্র যাওয়ার অনুমতি দিলেন?’’

ন্যাশনালের ডাক্তারদের পাল্টা যুক্তি, রোগীর পরিজনেরা অন্যত্র নিয়ে যেতে চাইলে তাঁরা আটকাবেন কীসের ভরসায়। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘সব রকম চেষ্টার পরেও রোগী না বাঁচলে বাড়ির লোকেরা আমাদের উপরেও তো চড়াও হতে পারতেন। যা দিনকাল তাতে আমরাই বা ঝুঁকি নেব কী ভাবে?’’

ন্যাশনালের সুপার পীতবরণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রেফার করার থাকলে ভর্তির আগেই ছেড়ে দেওয়া যেত। হাসপাতালে ভর্তির সময়ে সায়ন্তনের খিঁচুনি ও রক্তপাত হচ্ছিল। চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসাও করেন। কোনও এক ছাত্র জোর করে রিস্ক বন্ডে সই করে অন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য বলে। কর্তব্যরত ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ওই ছাত্রকে বুঝিয়ে বলেছিলেন, এই অবস্থায় সায়ন্তনকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। তা সত্ত্বেও ওঁরা জোর করে বন্ডে সই করে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান। আমরা কাউকে জোর করে আটকে রাখতে পারি না।’’

যদিও সুজিতবাবুর প্রশ্ন, ‘‘ন্যাশনাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে কেন মুমূর্ষু ছেলেটাকে সাধারণ অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যাওয়া হল? স্যালাইন, ব্লাডের ব্যবস্থা না করেই সায়ন্তনকে পাঠিয়ে দেওয়া হল, এর দায় কে নেবে? চিকিৎসকদের দায়বদ্ধতার বড় অভাব থেকে যাচ্ছে।’’

অভিযোগ প্রসঙ্গে সুপার বলেন, ‘‘আমরা কাউকে রেফার করলে নিশ্চয়ই অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দিতাম। কিন্তু কেউ যদি নিজে থেকে বন্ডে সই করে বেরিয়ে যান তা হলে আমরা অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দিতে পারি না। তবে উনি অভিযোগ করলে আমরা বিভাগীয় তদন্ত করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন