অন্য শহর

ঠাঁইহীন প্রেম খুঁজে নেয় ‘ভাল-বাসা’

ওঁরা এ শহরের প্রেমিক-প্রেমিকা! কংক্রিটের শহরে সাজানো বাগান ময়দান, গঙ্গার পাড় আছে। কিন্তু প্রেমের ঠাঁই নেই। তবু তারই মাঝে ওঁরা তৈরি করে নেন নিজেদের ‘ভাল-বাসা’।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ০৩:২৬
Share:

অনধিকার: যুগলের অন্তরঙ্গতায় উঁকিঝুঁকি। ছবি: সুমন বল্লভ

ওঁরা এ শহরেই থাকেন। তবুও মেঘলা দিনে, শীতের দুপুরে বা বসন্তের পড়ন্ত বিকেলে নিজভূমেই ‘পরবাসী’ হয়ে যান! রাস্তায়, গঙ্গার পাড়ে সহনাগরিকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।

Advertisement

ওঁরা এ শহরের প্রেমিক-প্রেমিকা! কংক্রিটের শহরে সাজানো বাগান ময়দান, গঙ্গার পাড় আছে। কিন্তু প্রেমের ঠাঁই নেই। তবু তারই মাঝে ওঁরা তৈরি করে নেন নিজেদের ‘ভাল-বাসা’। কখনও ভিক্টোরিয়ার বাগানে, কখনও প্রিন্সেপ ঘাটে, কখনও বা মিলেনিয়াম পার্কে।

তা-ও শান্তি নেই। মধ্য কুড়ির এক তরুণী সে দিন গঙ্গার পাড়ে প্রেমিকের সঙ্গে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিলেন। পাশ দিয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধ দম্পতি বলে গেলেন ‘আদিখ্যেতা!’। ‘‘উত্তর দিতেই পারতাম। কিন্তু ও হাত চেপে নিষেধ করল,’’ বলছেন ওই তরুণী।

Advertisement

বসন্তের দুপুরে প্রিন্সেপ ঘাটের থামের আড়ালে সদ্য কলেজ পেরনো এক যুগলের নিভৃত আলাপচারিতা চলছিল। হঠাৎই স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে সেখানে হাজির এক দম্পতি! সন্তানকে জেমস প্রিন্সেপের ব্রাহ্মী লিপি পাঠোদ্ধারের ইতিহাস শোনাতে ব্যস্ত তাঁরা। এমন আচমকা হানাদারিতে ত্রস্ত যুগল হাঁটা দিলেন। যেতে যেতে মন্তব্য, ‘‘ব্রাহ্মী লিপির ইতিহাস শোনানোর সময় পেল না!’’

এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি টাটকা বহু পড়ুয়ার। হাওড়ার এক যুবতী বলছেন, ‘‘কলেজ জীবনে বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে ভিক্টোরিয়ায় যেতাম। মাত্রাছাড়া কিছুই হত না। কিন্তু তাতেও লোকের যা নজর! নিজেদেরই লজ্জা লাগত।’’ এখনও বিকেলে পাঁচিলের উপর দিয়ে ভিক্টোরিয়ার বাগানে উঁকি দেওয়া কিছু লোকের নিত্য রুটিন।

এক দশক আগে দোলের আগের সন্ধ্যায় ময়দানের আঁধার বেছে নিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আলিপুর ক্যাম্পাসের এক যুগল। এমনই কপাল, সে দিন ওই আঁধার দিয়েই হস্টেলে ফিরছিল ক্যাম্পাসের ‘তিন মূর্তি’। ব্যস, দোলের ছুটির পরে ক্যাম্পাস খুলতেই সেই সন্ধ্যার ঘটনা নিয়ে কত কিছু। সেই ‘তিন মূর্তি’র এক সদস্য আজ স্মৃতিতে ডুব দিয়ে বলছেন, ‘‘অসম্মান করতে নয়। নিছকই মজা করতে ওদের পিছনে লাগা হয়েছিল।’’

পার্কের নিরাপত্তারক্ষীরাও সুযোগ পেলে প্রেমিক যুগলদের অসম্মান করার সুযোগ ছাড়েন না। বছর কয়েক আগে হবু স্ত্রীর সঙ্গে সন্ধ্যার মোহর কুঞ্জে বসে ছিলেন এক যুবক। রোম্যান্টিকতায় বোধ হয় একটু বেশিই কাছে চলে গিয়েছিলেন। ‘‘পিছন থেকে এক মহিলা রক্ষী এসে যে ভাষায় কথা বললেন, আর বসে থাকতে পারিনি,’’ বললেন সেই যুবক।

তবে ইদানীং সেই ছবি বদলাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে ছক বাঁধা লিঙ্গ সমীকরণও। সমলিঙ্গের প্রেমিক-প্রেমিকাদেরও হামেশাই দেখা যায়। সম্পর্কের বেড়াজালের বাইরেও তো গজিয়ে ওঠে অন্য ভাল লাগা।

প্রিন্সেপ ঘাটেই সন্ধেবেলা প্রেমিকার সঙ্গে নিরুচ্চারিত প্রেমে ভেসেছিলেন এক যুবক। সেই প্রেমে নজর দেননি রক্ষীরা। দূরে দাঁড়িয়ে দেখেছিলেন এক বৃহন্নলা। ক’দিন পরে সেই যুবককে একলা পেয়ে নিজেই এগিয়ে এসে বলেছিলেন, ‘‘ওই মেয়েটার তোর মতো আরও অনেক প্রেমিক আছে। সতর্ক থাকিস।’’

গোপন কথাটি গোপনে রাখা যেত না? লিঙ্গ সমীকরণের তৃতীয় গোত্রে থাকা মানুষটা বলে ওঠে, ‘‘সত্যিই ছেলেটা খুব ভাল। মেয়েটা ওকে ঠকাচ্ছে। তাই সাবধান করে দিলাম।’’

চেনা ছকের বাইরে গিয়ে এটাও কি প্রেম নয়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন