পশুদের সঙ্গে ব্যবহারে সতর্ক হোন, হবে প্রচার

এখন পশুপাখিদের উত্ত্যক্ত করার জন্য সর্বাধিক দু’হাজার টাকা জরিমানার নিয়ম রয়েছে। গত বছর জরিমানা বাবদ কারও কাছ থেকে ৫০০ টাকা, কারও কাছ থেকে ১২০০ টাকাও আদায় করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকতে চাইছেন না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪৬
Share:

উৎসাহী: বাঘের খাঁচার সামনে জনতার ভিড়। আলিপুর চিড়িয়াখানায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে। সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজও চলছে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে দর্শকদের ‘শুভ বুদ্ধি’র উপরেই ভরসা করতে চাইছেন আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এ বার তাই চিড়িয়াখানা জুড়ে প্রচার করতে চাইছেন তাঁরা। উদ্দেশ্য, পশুপাখিদের প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে দর্শকদের সতর্ক ও সচেতন করে তোলা।

Advertisement

কারণ, চি়ড়িয়াখানার অন্তর্বর্তী সমীক্ষা বলছে, প্রতিদিন সেখানে আসা দর্শকদের একাংশ এমন ভাবে পশুপাখিদের উত্ত্যক্ত করেন যে, তাদের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে। চিড়িয়াখানার তথ্য বলছে, এই প্রবণতা আটকানোর জন্য গত বছর পশুপাখিদের উত্ত্যক্ত করায় ৩৮ জনকে জরিমানা করা হয়েছিল। এখন পশুপাখিদের উত্ত্যক্ত করার জন্য সর্বাধিক দু’হাজার টাকা জরিমানার নিয়ম রয়েছে। গত বছর জরিমানা বাবদ কারও কাছ থেকে ৫০০ টাকা, কারও কাছ থেকে ১২০০ টাকাও আদায় করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকতে চাইছেন না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

তাই চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই চিড়িয়াখানা চত্বর জুড়ে সমস্ত ডাস্টবিনে ছোট ছোট পোস্টার লাগানো থাকবে। তাতে লেখা থাকবে, ‘পশুপাখিদের উত্ত্যক্ত করবেন না’, ‘খাবার দেবেন না’, ‘নোংরা ফেলবেন না’ বা ‘ধূমপান করবেন না’র মতো নানা রকম বার্তা। প্রাথমিক ভাবে প্রায় ৬০০টি এ রকম পোস্টার ডাস্টবিনের চারপাশে লাগানো থাকবে বলে ঠিক হয়েছে। কারণ, নতুন বছরেই দর্শকদের জন্য একগুচ্ছ চমকের ব্যবস্থা করছেন চি়ড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এই প্রথম দর্শকেরা যেমন নিশাচর প্রাণীদের দেখতে পাবেন, তেমনই হায়নাদেরও দেখা মিলবে। ‘নকটারনাল হাউজ’ এবং ‘হায়না এনক্লোজার’ তৈরির কাজ এখন পুরোদমে চলছে।

Advertisement

তবে শুধু চিড়িয়াখানার অন্তর্বর্তী সমীক্ষাই নয়, মনোবিদদের একাংশের পর্যবেক্ষণেও খাঁচাবন্দি পশুপাখিদের নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করার প্রবণতাটি ধরা পড়েছে। তাঁদের মতে, খাঁচায় বন্দি পশুপাখিদের উত্ত্যক্ত করার প্রবণতা আসলে সাময়িক ভাবে হলেও নিজেকে ‘শক্তিশালী’ হিসেবে জাহির করার চেষ্টা। তাঁদের মতে, যে উল্লাসে মানুষ অকারণে গাছের ডালপালা ছিঁড়ে আনন্দ পায়, যে প্রবণতা থেকে বিনা কারণে রাস্তার কুকুর-বেড়ালদের ঢিল ছুড়ে মারে, সেই একই প্রবণতা থেকে খাঁচাবন্দি বাঘ-সিংহকে উত্ত্যক্ত করে কেউ কেউ নিজের ‘বীরত্ব’ দেখান।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান তথা মনস্তত্ত্ববিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল বলেন, ‘‘প্রথম বিষয়টিই হল, শক্তিশালী প্রাণীটি বন্দি আছে। অর্থাৎ, সে সেই মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির থেকে কমজোরি। কেউ মুহূর্তের জন্য হলেও দুর্বল, আমি তার থেকে বেশি শক্তিশালী, তাই তাকে উত্ত্যক্ত করে একটা সাময়িক সুখ পান অনেকে। এই ধরনের লোকেদের অবচেতন মনে কোথাও একটা প্রবল দুর্বলতা কাজ করে, যা সম্ভবত সচেতন মন জানে না।’’ আর এক মনোবিদ রিমা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বন্দি প্রাণীদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা উচিত, এই ধরনের মানুষের মধ্যে সংবেদনশীল সেই বোধটাই তৈরি হয়নি।’’

তাই ওই প্রচারের উদ্দেশ্যই হল, পশুপাখিদের সঙ্গে ব্যবহারে দর্শকদের সতর্ক করে তোলা। তাঁদের সচেতন করা। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে। তা ছাড়া, চিড়িয়াখানায় ‘সাইনেজ’-এ এমন বার্তা রয়েছে। মাইকেও প্রচার চালানো হয়। কিন্তু সব সময়ে একটা ভিসুয়াল মেসেজ পাঠাতে চাইছি আমরা। চিড়িয়াখানা চত্বরে সর্বক্ষণ যদি ওই বার্তাগুলি দেখি, তা হলে আমরা কিছুটা হলেও সচেতন হব বলে আশা করছি।’’

এমনিতে দর্শকদের উৎসাহের অভাব নেই। তার মধ্যে খাঁচায় নেমে বাঘের গলায় মালা পরানোর ঘটনা তো সব থেকে বেশি আলোচিত। কিন্তু তার পরেও পশুপাখিদের উত্ত্যক্ত করা থেকে দর্শকদের একাংশকে কিছুতেই বিরত করা যায় না বলে জানাচ্ছেন চিড়িয়াখানার কর্মীদের একাংশ। কিন্তু সেই উৎসাহে লাগাম পরাতেই এ বার এই প্রচার, বলছেন কর্তৃপক্ষ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন