পুজোয় নিরাপত্তা বাড়াতে এ বারও সিসিটিভি ক্যামেরাকেই হাতিয়ার করছে লালবাজার। বুধবার বিকেলে শহরের পুজো কমিটিগুলিকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন কলকাতা পুলিশের কর্তারা। হাজির ছিলেন দমকল, পুরসভা, সিইএসসি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারাও। লালবাজার সূত্রে খবর, বৈঠকে শহরের পুজো কমিটিগুলিকে মণ্ডপ এবং সংলগ্ন এলাকায় সিসিটিভি লাগাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বস্তুত গত বছর থেকেই পুজো কমিটিগুলিকে সিসিটিভি বসাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, গত বছর যারা বসায়নি, এ বার তাদেরও বসাতে বলা হয়েছে। যারা সিসিটিভি লাগিয়েছিল, এ বার তাদের সেই সংখ্যা বাড়াতে বলা হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার এক পুজো কমিটি গত বছর ৮টি ক্যামেরা বসিয়েছিল। এ বার বসাচ্ছে ১২টি।
পুজো, মহরম নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই সমন্বয়ের বৈঠক করেছেন। পুজো নিয়ে উদ্যোক্তাদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। তার পরে সমন্বয় আরও বাড়াতে এই বৈঠক করেন প্রশাসনিক কর্তারা। বৈঠক শেষে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, ‘‘পুজো যাতে নির্বিঘ্নে হয়, তাই এ দিন সবাই মিলে বৈঠক করা হয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, এ বার থেকে অনলাইনে অনুমোদনও দেওয়া শুরু হয়েছে।
পুলিশের নজরে রয়েছে বিভিন্ন মণ্ডপের ভিড়ও। গত বছর বড় পুজোর ভিড়ের ধাক্কায় টালমাটাল হয়ে গিয়েছিল পুলিশি বন্দোবস্ত। শেষে পরিস্থিতি সামলাতে পঞ্চমীর রাত থেকে ওই পুজোয় দর্শক ঢোকা বন্ধ করে দেয় লালবাজার। এ বার ভিআইপি কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের মণ্ডপের আয়তন ও দর্শকধারণ ক্ষমতা মাথায় রাখতে বলা হয়েছে।
পুজো কমিটি সূত্রে খবর, এ দিনের বৈঠকে পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে পরিকাঠামোর খামতি নিয়েও নানা অভিযোগ উঠেছে। যেমন গার্ডেনরিচ এলাকার একটি পুজো কমিটির কর্তারা বৈঠকে জানান, ওই এলাকায় রাস্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়। পুজোর ভি়ড়ে কোনও বিপদ ঘটলে দমকল পৌঁছতে দেরি হয়ে যাবে। গার্ডেনরিচ থানার কাছে দমকল রাখার দাবি জানান তাঁরা। পার্ক সার্কাসের একটি পুজো কমিটির আবার অভিযোগ পুর প্রশাসনের দিকে। তাঁরা জানিয়েছেন, বেহাল নিকাশির ফলে পুজোর জায়গা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। মধ্য কলকাতার একটি পুজোর কর্তারা রাস্তার দুর্দশা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। উত্তর কলকাতার একটি পুজোর এক কর্তা আবার বলছেন, অনলাইনে অনুমতি দেওয়া শুরু হলেও তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।
নিউ আলিপুরের একটি পুজোর কর্তাদের দাবি, বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত যেমন পুলিশ অফিসারেরা ডিউটি করেন, তেমনি থাকতে হবে সকালেও। এর পরেই অবশ্য উপস্থিত পুলিশ অফিসারেরা উসখুশ শুরু করেন। কেউ কেউ কড়া চোখে তাকাতেও ছাড়েননি। বেহালার একটি পুজো আবার অভিযোগ তুলেছে প্রতিবেশী একটি পুজোর দিকে। তাদের বক্তব্য, নিয়ম ভেঙে রাস্তা আটকে ভিড় টেনে নিচ্ছে ওই পুজো কমিটি। এ ব্যাপারে পুলিশের হস্তক্ষেপও চেয়েছেন তাঁরা। কেউ আবার বলেছেন, রেড রোডে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় কারা সুযোগ পাবেন তা নিয়েও বিভ্রান্তি পুরোপুরি কাটেনি।
লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন, সব অভিযোগই নথিবদ্ধ করা হয়েছে। আলোচনা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সেগুলি সমাধান করা হবে।