শিবির মঞ্জুর ব্লাড ব্যাঙ্কের

মুমূর্ষু রোগী ধুঁকছেন আইসিইউ-তে। রক্ত দরকার। বাড়ির লোক হন্যে হয়ে ছুটছেন দাতা জোগাড়ের জন্য। কারণ, বাইরের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে আনা রক্ত রোগীকে দেবে না হাসপাতাল। দিনের পর দিন কোথা থেকে পাওয়া যাবে দাতা?

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭ ০৪:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি

মুমূর্ষু রোগী ধুঁকছেন আইসিইউ-তে। রক্ত দরকার। বাড়ির লোক হন্যে হয়ে ছুটছেন দাতা জোগাড়ের জন্য। কারণ, বাইরের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে আনা রক্ত রোগীকে দেবে না হাসপাতাল। দিনের পর দিন কোথা থেকে পাওয়া যাবে দাতা?

Advertisement

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিচ্ছেন, এটা তাঁদের দেখার কথা নয়। তাঁরা যে হেতু রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে পারেন না, তাই তাঁদের কাছে রক্ত মজুত থাকে না। রক্তদাতা জোগাড় করার দায়িত্ব তাই রোগীর পরিবারকেই নিতে হবে।

রোগী-হয়রানির এই চির চেনা ছবিটা হয়তো এ বার বদলাতে চলেছে। রক্তদান আন্দোলনকারীদের দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে অবশেষে সমস্ত ব্লাড ব্যাঙ্ককেই রক্তদান শিবির আয়োজন করার অনুমতি দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দিল্লিতে সম্প্রতি এক বৈঠকে বিশদ আলোচনার পরে এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন’ এবং ‘ন্যাশনাল এডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন’ (ন্যাকো)-এর কর্তারা ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন।

Advertisement

নতুন নিয়ম ঘোষণা হলে সব ব্লাড ব্যাঙ্কই নিজেদের মতো করে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে পারবে এবং সেই শিবির থেকেই থেকেই তারা নিজেদের পরীক্ষিত রক্ত রোগীদের দিতে পারবে। অর্থাৎ, রক্তের মান নিয়ে সংশয় থাকার কারণ দেখিয়ে যে হাসপাতালগুলি বাইরের ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্ত রোগীকে দিতে চায় না, তারা এ বার নিজেদের আয়োজিত রক্তদান শিবির থেকেই রক্ত নিতে পারবে। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, এতে সব চেয়ে বেশি উপকৃত হবেন ক্যানসার রোগীরা এবং দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতেরা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘রক্তের ক্যানসারের চিকিৎসায় প্রচুর রক্ত লাগে। একাধিক ক্যানসার হাসপাতাল বাইরের ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্ত নেয় না। তারা দাতা আনতে বলে। কিন্তু এক জন রোগীর পরিবার কোথা থেকে অত দাতা আনবেন? যাঁরা এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে চিকিৎসা করাতে যান, তাঁদের অবস্থা তো আরও সঙ্গিন। নতুন নিয়ম চালু হলে এই সব পরিবারে ভোগান্তি অনেকটাই কমবে।’’

আগে রক্ত সংক্রান্ত দায়িত্বের প্রায় পুরোটাই ছিল ন্যাকো-র অধীন। এখন অবশ্য ন্যাকো-র পাশাপাশি পরিকাঠামোগত দিকটি দেখে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন। আর রক্ত সঞ্চালনের পরে কোনও সমস্যা দেখা দিলে তা দেখে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োলজিক্যালস’ (এনআইবি)। এ দেশে ব্লাড ব্যাঙ্কের সংখ্য ২৭৬০। এর মধ্যে ১১২৬টি ন্যাকো স্বীকৃত। পশ্চিমবঙ্গে মোট ব্লাড ব্যাঙ্কের সংখ্যা ১৩৫। এর মধ্যে ৬০টি ন্যাকো-স্বীকৃত। যে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি ন্যাকোর স্বীকৃত নয়, সেগুলি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে পারে না।

ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া জি এন সিংহ জানিয়েছেন, সবাইকে রক্তদান শিবির করার অনুমতি দেবেন তাঁরা। এপ্রিলের মধ্যেই সেই নতুন নিয়ম চালু হয়ে যাবে। ফলে রোগীর বাড়ির লোকজনকে আর রক্তদাতা জোগাড়ের জন্য কোনও ভাবেই চাপ দেওয়া
যাবে না।

রক্তদান আন্দোলনের নেতা অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘রক্তদান নিয়ে এত হইচই, এত প্রচার, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার এত চেষ্টা— সবই বিফলে যায় যদি সাধারণ মানুষকে রক্ত পেতে গিয়ে এতটা চাপের মুখোমুখি হতে হয়। নতুন নিয়ম যত তাড়াতাড়ি চালু হয়, ততই মানুষের মঙ্গল। কোনও হাসপাতালই তা হলে আর অজুহাত খাড়া করতে পারবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন