পুর-রাজস্বের হিসেব চায় কেন্দ্র, ফের রণংদেহি মমতা

কলকাতা পুরসভার রাজস্ব আদায়ের হিসেব চেয়ে কেন্দ্রের পাঠানো চিঠি ঘিরে ‘আক্রমণের’ নয়া অস্ত্রে শান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানতে চায়, ২০১৫ সালের নভেম্বর এবং ২০১৬ সালের নভেম্বরে কর বাবদ কত টাকা আদায় করেছে কলকাতা পুরসভা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৩
Share:

কলকাতা পুরসভার রাজস্ব আদায়ের হিসেব চেয়ে কেন্দ্রের পাঠানো চিঠি ঘিরে ‘আক্রমণের’ নয়া অস্ত্রে শান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানতে চায়, ২০১৫ সালের নভেম্বর এবং ২০১৬ সালের নভেম্বরে কর বাবদ কত টাকা আদায় করেছে কলকাতা পুরসভা।

Advertisement

শুক্রবার সকালে সেই চিঠি পৌঁছয় পুরসভায়। বিকেলের মধ্যেই তা পৌঁছে যায় মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। তার পরেই নবান্নে সাংবাদিকদের কাছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর দফতর এ সব জানতে চাইতে পারে নাকি! পঞ্চায়েত দফতরের কাছেও কেন্দ্র তথ্য চেয়েছে। ওরা ‘ডাকু সরকার’। কেন্দ্র জনগণের টাকা লুঠ করতে চাইছে। আমি তা হতে দেব না।’’

নোট বাতিলের পরে পুরসভায় আড়াই লক্ষ টাকার বেশি জমা দেওয়া করদাতাদের নাম দু’দিন আগেই চেয়েছে আয়কর দফতর। তা পাঠিয়েও দিয়েছে পুরসভা। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের পাঠানো এ দিনের চিঠিতে পুরসভার কর আদায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর আগ্রহ দেখানোয় কিছুটা বিব্রত পুরসভা।

Advertisement

এক পুর আমলা জানান, বাতিল নোটে কর নেওয়া শুরু হয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের নির্দেশেই। এক দিকে বাতিল নোট গ্রহণ, অন্য দিকে বকেয়া করদাতাদের সুদ মকুবের সুবিধাও দেওয়া হয়। তাতেই পুরসভায় কর জমা দেওয়ার হিড়িক পড়ে। সেই সঙ্গে পুরসভার কর মূল্যায়ন দফতরের অফিসারেরা প্রতিটি ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে সুদ মকুব ও পুরনো নোটে কর দেওয়ার সুবিধার কথা বলতে থাকেন। এই ভাবে কর আদায়ের প্রক্রিয়াকে কালো পথে টাকা আয়ের দূরভিসন্ধি বলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। এ সব নিয়ে পুর মহলেও নানা প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু ওই অভিযোগে আমল দেননি মেয়র ও পুরকর্তারা। তাঁদের কথায়, পুরসভা আইন মেনেই কর আদায় করেছে। টাকা কালো না সাদা, তা দেখার দায় পুরসভার নয়। তখন এক পুর আমলাই জানিয়েছিলেন, আয়কর দফতর যে কোনও সময়ে তার হিসেব নিতে পারে। এমন মনে করার কারণ নেই যে, কালো টাকায় কর দিয়ে কেউ পার পেয়ে যাবে। সে জন্যই পুরসভা আয়কর দফতরকে প্রয়োজনীয় হিসাব পাঠিয়ে দিয়েছে।

এ বার প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নাম করে পরপর দু’বছরের নির্দিষ্ট দু’টি মাসে কর আদায়ের পরিমাণ জানতে চেয়ে চিঠি আসায় পুরসভা ‘অস্বস্তিতে’ পড়তে পারে কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের তীক্ষ্ণ বক্তব্যকেও তাই সেই ভাবেই ব্যাখ্যা করছেন অনেকে।

পুরসভা সূত্রে খবর, এ দিনের চিঠিটি পাঠিয়েছেন নগরোন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিক। সেটি দেখেই ক্ষোভ বাড়ে মুখ্যমন্ত্রীর। পুরসভা ওই চিঠিরও জবাব পাঠাতে প্রস্তুত হচ্ছে। এক আমলার কথায়, পুরসভায় যত ধরনের কর আদায় হয়, প্রতিটি দফতরের ২০১৫ ও ’১৬-র নভেম্বর মাসের আদায় কত, তা সংগ্রহ করা হচ্ছে। দু’-এক দিনেই তা পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে পুর নথি অনুসারে জানা গিয়েছে, ২০১৫-র নভেম্বরে শুধু সম্পত্তিকর বাবদ আয় হয়েছিল ৪৮ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা। এ বছর নভেম্বরে তা প্রায় ৭৬ কোটি টাকা।

পুরসভা সূত্রের খবর, এর আগের চিঠিতে কেন্দ্র জানতে চেয়েছে, ৯ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত, অর্থাৎ, নোট বাতিলের পরবর্তী পর্বে কত জন আড়াই লক্ষ টাকার উপরে কর জমা দিয়েছেন এবং তাঁদের প্যান নম্বর কী। পুরসভার ব্যাখ্যা, কর আদায়ের সময়ে প্যান নম্বর নেওয়া হয় না। তাই প্যান নম্বর ছাড়াই ওই সময়ের মধ্যে যা আদায় হয়েছে প্রত্যেকের নাম ও অ্যাসেসি নম্বর-সহ একটি সিডি পাঠানো হয়েছে।

কিন্তু আয়কর দফতর তো আড়াই লক্ষের উপরে জমা দেওয়া করদাতাদের নাম চেয়েছে? এক পুর আধিকারিকের জবাব, ২৫ হাজারের বেশি কর এক বারে কারও থেকে নেওয়ার ব্যবস্থাই নেই পুরসভার সফ্‌টওয়্যারে। তাই ওই সময়ে কর জমা দেওয়া সকলের নামই পাঠানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন