নিয়ম মেনেই কি চলছিল কনভয়, প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের

এমনিতে ফেরারি, ল্যাম্বরগিনি, জাগুয়ার-এর মতো অতি দ্রুত গতির গাড়িগুলি নিয়ে ‘কনভয়’ বার করার প্রবণতা শহর সংলগ্ন হাইওয়েগুলিতে বাড়ছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৮ ০২:৩৪
Share:

ভগ্নদশা: দুর্ঘটনার পরে সেই ফেরারির ধ্বংসস্তূপ। সোমবার, ডোমজুড় থানা চত্বরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দু’টি গাড়ির মধ্যবর্তী দূরত্ব ঠিক ছিল কি? অতি দ্রুত গতির বিলাসবহুল গাড়িগুলি যে ভাবে এঁকেবেঁকে (জ়িগজ়্যাগ প্যাটার্ন) চলছিল, সেই নকশাতেই দোষ ছিল না তো? রবিবার এসইউভি দুর্ঘটনার পরে এই প্রশ্নও উঠছে নানা মহলে।

Advertisement

এমনিতে ফেরারি, ল্যাম্বরগিনি, জাগুয়ার-এর মতো অতি দ্রুত গতির গাড়িগুলি নিয়ে ‘কনভয়’ বার করার প্রবণতা শহর সংলগ্ন হাইওয়েগুলিতে বাড়ছে। ওই সমস্ত গাড়ির মালিকেরা তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ক্লাবও তৈরি করেছেন। রবিবার শিবাজী রায় বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ওই রকমই ‘কনভয়’ নিয়ে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁর গাড়ি পাকুড়িয়া সেতুর গার্ডওয়ালে ধাক্কা মারে।

গাড়ি বিশেষজ্ঞদের একাংশের অনুমান, শিবাজীদের কনভয় এঁকেবেঁকে চলছিল। ওই নকশার বৈশিষ্ট্যই হল, প্রথম গাড়ির পরে যে দ্বিতীয় গাড়িটি থাকবে, সেটি ডান দিকে। পরপর দু’টি গাড়ি সরলরেখায় থাকবে না। তৃতীয় গাড়িটি আবার প্রথম গাড়িকে অনুসরণ করবে, চতুর্থ গাড়ি দ্বিতীয় গাড়িকে। কনভয়টি এ ভাবেই চলতে থাকবে। যে হেতু এগুলি অতি দ্রুত গতির গাড়ি, তাই এ ক্ষেত্রে দু’টি গাড়ির মধ্যবর্তী দূরত্ব রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাতে কোনও সমস্যা হলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণের জন্য সময় পাওয়া যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই মধ্যবর্তী দূরত্ব ঠিক ছিল কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ফলে শেষ মুহূর্তে সামনের দিক থেকে কোনও ‘বাধা’ আসায় আর নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।

Advertisement

গাড়ি বিশেষজ্ঞ শৌভিক ঘোষ বলেন, ‘‘গাড়ির কনভয়ের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার গতি হলে দু’টি গাড়ির মধ্যে একটি গাড়ির দূরত্ব রাখলেই হয়। কিন্তু গতি যদি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার হয়, তা হলে দু’টি গাড়ির মধ্যে অন্তত আটটি গাড়ির দূরত্ব রাখা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়েছে কি না, সন্দেহ রয়েছে।’’

প্রসঙ্গত, শৌভিকের সংস্থা শহরে গাড়ির কনভয় বার করার পাশাপাশি, গাড়ি সংক্রান্ত খুঁটিনাটি নিয়ে একটি ম্যাগাজিনও প্রকাশ করছে কয়েক বছর ধরে। এই মুহূর্তে সংস্থার সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩৫০। হাইস্পিড গাড়ির কনভয় বেরোনোর নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে বলেও জানাচ্ছেন শৌভিক। নিয়ম মতো সামনে ও পিছনে একটি করে পাইলট গাড়ি রাখতে হয়, যারা পুরো কনভয়ের উপরে নজরদারি চালাবে। কিন্তু হাইওয়েগুলিতে যে গাড়ির কনভয় বেরোয়, তাদের ক্ষেত্রে সেটা থাকে না বলেই জানাচ্ছেন শৌভিক।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ এ-ও জানাচ্ছেন, সাধারণ রাস্তায় এবং হাইওয়েতে গাড়ি চালানো দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। যাঁরা হাইওয়ে দিয়ে উচ্চ গতির গাড়িগুলি চালাচ্ছেন, সংশ্লিষ্ট চালকের তার প্রশিক্ষণ রয়েছে কি না, তা দেখার কোনও পরিকাঠামো নেই। এক গাড়ি বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘শহরে হাইস্পিড গাড়ি চালানো নিয়ে কোনও ওয়ার্কশপ হয় বলে জানা নেই। যাঁরা কিনছেন, তাঁদের সেই গাড়ি চালানোর দক্ষতা রয়েছে কি না, সেটাও তো একটা প্রশ্ন। কারণ, সাধারণ গাড়ি আর হাইস্পিড গাড়ি চালানোর লাইসেন্সও তো এক। কিন্তু সাধারণ রাস্তা ও হাইওয়েতে চালানোটা তো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন