শূন্য বহু চেয়ার, তবু ফের বঙ্কিম!

বৃহস্পতিবার নৈহাটির কাঁঠালপাড়ায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি বিস্মিত যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যসম্রাটের নামে কোনও চেয়ার নেই।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৮ ০৩:০৯
Share:

দেড়শো বছরেরও বেশি পুরনো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশিষ্টজনদের নামে বহু ‘চেয়ার প্রফেসর’ পদ রয়েছে। কিন্তু এক দশকেরও বেশি সময় ধরে খালি পড়ে রয়েছে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি চেয়ার। যেখানে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশিষ্টজনদের সম্মানে একাধিক পদক্ষেপ করেন, সেখানে চেয়ারগুলি পূরণের ক্ষেত্রে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও উদ্যোগই নেই বলে অভিযোগ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার নৈহাটির কাঁঠালপাড়ায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি বিস্মিত যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যসম্রাটের নামে কোনও চেয়ার নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠাচ্ছি।’’ খরচ শিক্ষা দফতরই দেবে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত বছরই প্রায় কুড়িটি চেয়ার পূরণের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ।
তার অধিকাংশতেই নিয়োগ হয়নি বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা। শিক্ষা মহলের মত, বিশিষ্টজনদের নামে চেয়ার রেখেও সেই পদ শূন্য পড়ে থাকার অর্থ পরোক্ষে তাঁদের অসম্মান করা।

কিন্তু কেন বছরের পর বছর ধরে ওই পদ পূরণে গড়িমসি করেন কর্তৃপক্ষ? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের দাবি, ওই পদগুলিতে বসার মতো যোগ্য শিক্ষক সব সময়ে পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনও শিক্ষককে নিয়ে আসতে গেলে যে অর্থের প্রয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তা-ও নেই। যদিও আর একটি মত হল, এমন বহু চেয়ার প্রফেসর ছিলেন, যাঁদের সামান্য অর্থ দেওয়া হত। ফলে অর্থ কোনও সমস্যাই নয়। এই চেয়ার এক বিরল সম্মান। বরং বহু ক্ষেত্রে শিক্ষা জগতে রাজনীতির দাপটে বিরক্ত হয়ে বহু যোগ্য শিক্ষক-অধ্যাপক ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন।

Advertisement

এক শিক্ষক জানান, প্রায় দু’দশক আগে একটি ঐতিহ্যশালী বিভাগে ‘চেয়ার প্রফেসর’ পদে যোগ্যতম প্রার্থীর জায়গা হয়নি শাসক দলের বশংবদ না হওয়ায়। সেই অধ্যাপক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছে়ড়ে দেশের প্রথম সারির এক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। যিনি চেয়ারে বসেছিলেন, তিনিও অকালে প্রয়াত হন। সেই থেকে সেই পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। ‘‘ওই পদে বসার যোগ্য লোক আর মেলেনি,’’ বলছেন বিভাগের এক শিক্ষক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা জানান, গত বছর আশুতোষ ঘোষ উপাচার্য থাকার সময়ে ওই পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তার কিছু পরে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই সমস্ত চেয়ার প্রফেসর পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে বলেই জানান ওই কর্তা।

তবে শিক্ষামন্ত্রীর প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে শাসক ও বিরোধী শিক্ষক সংগঠন, দু’পক্ষই দ্রুত লোক নিয়োগের দাবি তুলেছে। কুটা-র সাধারণ সম্পাদক পার্থিব বসু বলেন, ‘‘শূন্য পদগুলি পূরণ করা প্রয়োজন।’’ শাসক দলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা-র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সুজয় ঘোষ বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। আশা করি, সমস্ত বিভাগে দ্রুত যোগ্য মানুষদের পাওয়া যাবে।’’ উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানান, যেখানে চেয়ার প্রফেসরের জন্য আর্থিক সংস্থান রয়েছে, সেখানে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু যেখানে সংস্থানই নেই, সেই সমস্ত চেয়ারে কেউ নেই। আগে যে পরিমাণ অর্থ এই চেয়ার প্রফেসরদের সম্মান-দক্ষিণা হিসেবে ধার্য করা হয়েছিল, এখন তা অনেক কমে গিয়েছে। তার থেকে প্রাপ্ত সুদের পরিমাণ আরও কম। তাই সামান্য অর্থে সেই পদে কেউ আসতেই চান না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন