মুরারীপুকুর রোড

এসেছে অনেক বদল, তবু রয়েছে সুখ-দুঃখে পাশে থাকার অভ্যাস

অলিগলি-প্রশস্ত পথ, নতুন পুরনো বাড়ি-বহুতল, পরিচিত মুখ আর নানা অম্লমধুর সম্পর্ক নিয়ে আমাদের পাড়া মুরারীপুকুর রোড। পাশের সাতকড়ি মিত্র লেন কিংবা বাগমারি রোডের একাংশ এ পাড়ার চৌহদ্দির মধ্যেই পড়ে।

Advertisement

গীতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০১
Share:

ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

অলিগলি-প্রশস্ত পথ, নতুন পুরনো বাড়ি-বহুতল, পরিচিত মুখ আর নানা অম্লমধুর সম্পর্ক নিয়ে আমাদের পাড়া মুরারীপুকুর রোড। পাশের সাতকড়ি মিত্র লেন কিংবা বাগমারি রোডের একাংশ এ পাড়ার চৌহদ্দির মধ্যেই পড়ে। মুরারীপুকুর মানেই অরবিন্দ ঘোষের নাম জড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক বোমা মামলা। আজও রয়েছে সেই বোমার মাঠ।

Advertisement

১৯৭৮ থেকে এ পাড়ায় বাস। এই এলাকার সঙ্গে যোগ তারও আগে থেকে। শুরুর দিনগুলি খুব সুখপ্রদ ছিল না। তখন সমাজবিরোধীর দৌরাত্ম্য ছিল এলাকায়। আমাদের আবাসন তৈরির সময়ে মাঝে মধ্যেই চুরি যেত ইমারতি দ্রব্য। কয়েক জনকে সন্দেহ হত। তাঁদেরই এক জনকে পাহারার দায়িত্ব দেওয়ায় বন্ধ হয়েছিল চুরি।

অন্যান্য পাড়ার মতো এখানেও মিলছে উন্নত পরিষেবা। নিয়মিত রাস্তা পরিষ্কার, জঞ্জাল সাফাই হয়। রাস্তায় এখন জোরালো আলো বসেছে। নিকাশি ব্যবস্থা আগের থেকে উন্নত হয়েছে। তবে কিছু সমস্যাও রয়ে গিয়েছে। যেমন, অল্প বৃষ্টিতে সাতকড়ি মিত্র লেনের একাংশে এখনও জল দাঁড়িয়ে যায়। মানিকতলা মেন রোড সংলগ্ন বাগমারি রোডের মুখ থেকে পাড়ার ভিতরে যাওয়ার কোনও অটোরুট নেই। মেলে না রিকশাও। আরও এক সমস্যা পার্কিং। রাত যত বাড়ে, রাস্তা জুড়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। ফলে স্থানীয়দের গাড়ি নিয়ে ঢুকতে-বেরোতে সমস্যা হয়।

Advertisement

বর্তমানে মিশ্র সংস্কৃতির এই পাড়া। আমাদের আবাসন ও সংলগ্ন অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে এখনও যোগাযোগটা ভাল রয়েছে। এমনকী একসঙ্গে পিকনিকেও যাওয়া হয়। আমাদের আবাসন তৈরির পর থেকে কালীপুজো, সরস্বতী পুজো উপলক্ষে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে আসছে আজও সেটি হয়।

রকগুলি হারিয়ে গিয়েছে। চায়ের দোকানে, বাড়ির সামনে বিক্ষিপ্ত ভাবে আড্ডা চললেও তর্কপ্রিয় মানুষের অভাবে প্রাণ খোলা আড্ডাটা হারিয়ে গিয়েছে। আরও একটি কারণ যুবকদের বড় অংশ কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। নিঃসঙ্গ অভিভাবকদের সময় কাটে অজানা অনিশ্চয়তায়।

কমেছে খেলাধুলো। ছুটির দিনে পাড়ার রাস্তায় কিছু ছেলেকে খেলতে দেখা যায়। আগে পাড়ার জলসায় আসতেন বহু নামী শিল্পী। পাড়ার এমনই এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মাদার টেরিজা। তাঁকে দেখতে উপচে পড়েছিল ভিড়। সেই আকর্ষণ হারালেও আজও কিছু অনুষ্ঠান হয়।

নিজের অজান্তে জীবনের আনাচ-কানাচে জড়িয়ে রয়েছে পাড়াটা। সেটা উপলব্ধি করা যায়। জীবনের নানা পরিস্থিতিতে এ পাড়া আমাকে দিয়েছে মনোবল, সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা। সেটাই বড় প্রাপ্তি।

লেখক আইনজীবী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন