ভিক্টোরিয়ায় ড্রোন, গারদে চিনা নাগরিক

যদিও আইন অনুযায়ী ফৌজি এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯ ০৩:৩৬
Share:

ধৃত চিনা নাগরিক। —নিজস্ব চিত্র।

অদূরেই ফোর্ট উইলিয়াম। সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতর। তাদের নাকের ডগায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বরে ড্রোন উড়িয়ে ছবি তুললেন এক চিনা নাগরিক! যদিও আইন অনুযায়ী ফৌজি এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ।

Advertisement

লি চাওয়েই নামে ওই চিনা পর্যটক পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন ঠিকই। তবে নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনির গেরো আসলে কতটা ফস্কা, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে তাঁর ওড়ানো ড্রোন!

শনিবার দুপুরে ভিক্টোরিয়া-চত্বরে ড্রোন ওড়ার পরে পুলিশ অবশ্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শনিবার রাতে হেস্টিংস থানায় পৌঁছন সেনাবাহিনী, স্বরাষ্ট্র দফতর, আইবি, এসবি, সিআইডি-র কর্তারা। পুলিশ জানায়, লি-কে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ (সরকারি নির্দেশ অমান্য), ২৮৭ (যন্ত্রপাতির বেপরোয়া ব্যবহার), ৩৩৬ (যন্ত্রের ব্যবহারের কারও ক্ষতি করা), ‘ফরেন অ্যাক্ট’ বিদেশি নাগরিক আইনের ১৪ বি এবং ১৪সি (ভিসায় উল্লিখিত নির্দেশিকা অমান্য করা) এবং এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্টের ১১এ (ফৌজি এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ড্রোন বা অন্য কিছু ওড়ানো) ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পুলিশ জানায়, শনিবার দুপুরে দুই বান্ধবীকে নিয়ে ভিক্টোরিয়া-চত্বরে ঢুকেই লি চলে যান দক্ষিণ দিকের বাগানে। সপ্তাহান্তে ভিক্টোরিয়ায় ভিড় হলেও দক্ষিণ দিকটি সাধারণত একটু নিরিবিলি থাকে। দুই বান্ধবীকে নিয়ে রিমোটের সাহায্যে সেখানে ড্রোন ওড়াতে শুরু করেন লি। দেখতে পেয়ে সিআইএসএফ বা শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর এক অফিসার তাঁকে ড্রোন নামাতে বলেন। কিন্তু লি তাঁর কথা শোনেননি। ওই অফিসার ভিক্টোরিয়ার ভিতরে সিআইএসএফের অফিসে খবর দেন। লি এবং তাঁর দুই বান্ধবীকে ওই অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর যায় ভিক্টোরিয়া-কর্তৃপক্ষ, পুলিশের কাছে। ভিক্টোরিয়াতেই পুলিশ লি এবং তাঁর দুই বান্ধবীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তাঁদের কাছে পাওয়া যায় একটি মাইক্রো ড্রোন, রিমোট এবং মোবাইল ফোন। ড্রোনের ক্যামেরা কী ছবি তুলছে, তা মোবাইলে দেখছিলেন লি। পুলিশ অফিসারেরা সেগুলো পরীক্ষা করে দেখেন, ড্রোনের সাহায্যে মূলত ভিক্টোরিয়ার গম্বুজের ছবি তুলছিলেন লি। কেন তুলছিলেন? বলতে রাজি হননি লি। পুলিশ শনিবারেই পুরো বিষয়টি চিনা দূতাবাসকে জানায়।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, চিনের শেনজেন এলাকার বাসিন্দা লি একটি জিম চালানোর সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে ক্যাসিয়ো কোম্পানির জিনিসপত্র বিক্রি করেন। শনিবার তিনি মালয়েশিয়া থেকে কলকাতায় আসেন। গোয়েন্দারা জেনেছেন, শনি-রবি কলকাতায় কাটিয়ে সোমবার বারাণসী হয়ে দিল্লি যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন লি। সেখান থেকে আরও কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে শ্রীলঙ্কা যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। ইতিমধ্যেই ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আইসল্যান্ড, জাপানের মতো বেশ কয়েকটি দেশ ঘুরেছেন তিনি।

রবিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে লি বিচারককে জানান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াতেও তিনি ড্রোনের সাহায্যে ছবি তুলেছেন। কেউ বাধা দেয়নি। তিনি জানতেন না, ভিক্টোরিয়ায় ড্রোনের সাহায্যে ছবি তোলা নিষিদ্ধ। ওই চিনা পর্যটকের আইনজীবী অভিজিৎ দাস জানান, লি-র জামিনের আবেদন জানানো হয়েছিল। বিচারক জানিয়ে দেন, পুরো বিষয়টির সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা জড়িত। তাই জামিনের প্রশ্ন নেই। অভিযুক্তকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন