ভোগান্তি: মিছিলের জেরে আটকে পড়ুয়াদের গা়ড়ি। মঙ্গলবার, ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
মিছিল, সমাবেশ আর বৃষ্টির ত্র্যহস্পর্শে দিনভর ভুগল শহর কলকাতা।
ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার, সপ্তাহের দ্বিতীয় কাজের দিনে রাজনৈতিক মিছিল ও সমাবেশের সঙ্গেই গোদের উপরে বিষফোড়ার মতো যুক্ত হয়েছিল বৃষ্টি। যার জেরে যানজটে নাজেহাল হয়ে হাঁসফাঁস করল উত্তর থেকে দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা। যান চলাচল পুরো বন্ধ না হলেও শ্লথ হল গতি। কিছু ক্ষণের জন্য যানবাহন আটকে রাখতে হল কয়েকটি রাস্তায়। পুলিশ সূত্রের খবর, যানজট কেটে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, এ দিন দুপুর একটা নাগাদ একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার আমানতকারীদের নিয়ে সমাবেশের আয়োজন করা হয় ধর্মতলার রানি রাসমণি রোডে। ওই সমাবেশে যোগ দিতে বেলা ১১টা থেকে দফায় দফায় হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন থেকে কয়েক হাজার মানুষ মিছিল করে সমাবেশস্থলের দিকে এগোতে থাকেন। যার জেরে হাওড়া সেতু, ব্রেবোর্ন রোড, এ জে সি বসু রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড এবং ডোরিনা ক্রসিংয়ে যানজট হয়। রানি রাসমণি রোডের একাংশ বন্ধ থাকায় হাওড়ামুখী যানবাহনের গতি শ্লথ হয়ে যায়। গাড়ি ঘোরানো হয় বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট দিয়ে।
দুপুর আড়াইটে নাগাদ অন্য একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন ‘অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ’-এর কর্মী ও সমর্থকেরা বিবেকানন্দ রোডে জড়ো হন। ইসলামপুরের ঘটনার প্রতিবাদে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করার কর্মসূচি ছিল তাঁদের। সেই কারণে বিধান সরণি থেকে হাতিবাগানমুখী যানবাহন ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। ওই কর্মসূচির জেরেই শ্যামবাজারের পাঁচ মাথা থেকে গিরিশ পার্কমুখী এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংমুখী যানবাহনও ঘোরানো হয়। ডোরিনা ক্রসিংয়ে পৌঁছনোর আগেই টিপু সুলতান মসজিদের সামনে মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন এবিভিপি-র সমর্থকেরা। পুলিশের অভিযোগ, ওই মিছিলকারীরা একটি গাড়ির কাচও ভাঙেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যেতে হয়।
এ দিকে, এ দিনই বিকেল তিনটে নাগাদ ইসলামপুরের ঘটনার প্রতিবাদে লালবাজার অভিযানের ডাক দিয়েছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের ছাত্র সংগঠন। ওই কর্মসূচির জন্য ধর্মতলার পর থেকে কিছু ক্ষণ বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট বন্ধ রাখা হয়। ধর্মতলা থেকে লালবাজারমুখী গাড়ি চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট দিয়ে ঘোরানো হয়। অভিযানকারীদের বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট ও ম্যাঙ্গো লেনের মুখে আটকায় পুলিশ।
এসএফআই-সহ বামপন্থী কয়েকটি ছাত্র সংগঠনও ইসলামপুরের ঘটনার প্রতিবাদে মৌলালিতে জড়ো হয় বিকেল তিনটে নাগাদ। তাদের কর্মসূচি ছিল রাজভবন অভিযান। সংগঠনের কর্মী-সমর্থকেরা এ পি সি রোড থেকে মিছিল করে এস এন ব্যানার্জি রোড ধরে ধর্মতলার দিকে এগোতে থাকেন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ। যার জেরে বন্ধ রাখা হয় এস এন ব্যানার্জি রোডের যান চলাচল। মৌলালি থেকে ধর্মতলামুখী গাড়িগুলি দক্ষিণ দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। যার জেরে মল্লিকবাজার হয়ে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ির অস্বাভাবিক চাপ ছিল। এই কারণে বাধা পায় হাজরা ও ভবানীপুরের যান চলাচলও। মিছিলের পাশাপাশি বৃষ্টিও ভুগিয়েছে শহরবাসীকে। পুলিশ জানিয়েছে, দুপুরের বৃষ্টিতে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড, আশুতোষ মুখার্জি রো়ডের যান চলাচল বাধা পেয়েছে। গাড়ির লম্বা লাইন দেখা যায় হাজরা রোড, গোপালনগর মোড় ও বেকার রো়ডেও।
কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, এ দিনের বেশির ভাগ মিছিল আসে মৌলালি হয়ে। তার প্রভাব পড়ে বেলেঘাটা, সিআইটি রোড, এপিসি রোডের যান চলাচলে।