গোলমালের পরে পুলিশি প্রহরা। শুক্রবার, ট্যাংরায়। নিজস্ব চিত্র
কার মাইকের জোর বেশি!
এ নিয়ে প্রতিযোগিতা এবং তা থেকে গোলমালে জড়াল দুই গোষ্ঠী। শুক্রবার হোলির দিন ট্যাংরার মথুরবাবু লেনের এই ঘটনায় তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে এ দিন রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
দু’পক্ষের মারামারিতে কয়েক জন আহত হলেও তাঁদের আঘাত গুরুতর নয় বলেই জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার দুপুর তিনটে নাগাদ ঝামেলার সূত্রপাত। মথুরবাবু লেনে এ দিন সকাল থেকেই তারস্বরে মাইক বাজিয়ে হোলি খেলছিলেন স্থানীয়েরা। পুলিশ কয়েক বার এসে নিষেধ করে যায়। অভিযোগ, এর পরে অমল গায়েন নামে এক স্থানীয় তৃণমূল নেতার লোকজন এসে মাইক বন্ধ করার নির্দেশ দেন। তাঁদের দাবি ছিল, এই আওয়াজের জন্য তাঁদের মাইকের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। এই কথার প্রতিবাদ করেন জয়দেব দাস নামে এক স্থানীয় ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্য অমলবাবুদের গালিগালাজ করার অভিযোগ ওঠে। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, এ নিয়েই দু’পক্ষের হাতাহাতি শুরু হয়।
ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, অমলবাবু তখন পাশের পাড়া থেকে বেশ কিছু লোকজন ডেকে আনেন। তারা সকলে মিলে জয়দেববাবুকে রাস্তায় ফেলে মারধর করে। জয়দেববাবুর পক্ষেও তখন আরও কিছু লোক এসে জড়ো হয়। এর পরেই দু’পক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। খবর পৌঁছয় পুলিশে। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ট্যাংরা থানার বিশাল পুলিশবাহিনী। অমল গায়েন, জয়দেব দাস এবং শম্ভু মণ্ডল নামে এক স্থানীয় যুবক-সহ বেশ কয়েক জনকে আটক করেছে পুলিশ।
এ দিন এলাকায় পৌঁছলে অমলবাবুর পক্ষে রাজু মণ্ডল নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, সকাল থেকেই জয়দেববাবুদের আস্তে মাইক বাজাতে অনুরোধ করা হচ্ছিল। কিন্তু ওঁরা শোনেননি। তাঁর দাবি, ‘‘মাইকের আওয়াজে আমাদের বক্স বাজানোই যাচ্ছিল না! আমরা ওদের নিষেধ করায় গালিগালাজ শুরু করে দেয়।’’ তার আরও অভিযোগ, এক মহিলাকেও রাস্তায় ফেলে মারধর করে জয়দেবেবাবুদের লোকজন। রাজুবাবুর দাবি, ব্যবসার আ়ড়ালে আদতে এলাকায় মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত জয়দেব।
অন্য দিকে জয়দেববাবুর মা রীনা দাস শুক্রবার দাবি করেন, ‘‘আমার ছেলেকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক দিন মাইক বাজিয়ে সামান্য আনন্দ করছিলাম সেখানে হামলা চালাল অমলের লোকজন। ওরা রাজনীতি করে বলে পুলিশও ওদের কথা শুনছে।’’
যদিও ট্যাংরা থানার তদন্তকারী আধিকারিক জানান, আটক হওয়া প্রত্যেকেই মত্ত অবস্থায় ছিলেন। ওই পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘কার মাইক জোরে বাজবে এ নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।’’
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, মত্ত অবস্থায় রং মেখে বেপরোয়া ভাবে বাইকে সওয়ার অনেকেই। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘এই এলাকা এরকমই। প্রায়ই ঝামেলা লেগে থাকে। কাল থেকে এমন অবস্থা চলছে। অনেকেই বেসামাল। কিছু করার নেই।’’ ইতিমধ্যেই এক বাইকে সওয়ার চার যুবক পুলিশের তাড়া খেয়ে পড়ে গেলে তাদেরও ধরে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।
এর মধ্যেই গলিপথে উচ্চস্বরে চটুল হিন্দি গান বাজাতে বাজাতে বেপরোয়া ভাবে চলে যায় একটি সাদা সেডান গাড়ি। সেই গাড়িটিকে অবশ্য পুলিশ ধরতে পারেনি।