Adi Ganga

আদিগঙ্গার জোয়ারের জলে প্লাবিত হয় কালীঘাট মন্দির থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন, স্থায়ী সমাধানের খোঁজে পুরসভা

কালীঘাট মন্দির থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবন পর্যন্ত প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। বিশেষ করে তিনটি ওয়ার্ডে প্লাবনের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি— ৮৩ নম্বর ওয়ার্ড, যেখানে কালীঘাট মন্দির অবস্থিত, ৭৩ নম্বর ওয়ার্ড, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী থাকেন, এবং ৮৮ নম্বর ওয়ার্ড, যা সাংসদ মালা রায়ের এলাকার অন্তর্গত।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৫০
Share:

আদিগঙ্গার জোয়ারের জলে প্লাবিত হয় দক্ষিণ কলকাতার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। —ফাইল চিত্র।

আদিগঙ্গায় জোয়ার এলেই বারবার প্লাবন পরিস্থিতি দেখা দেয় দক্ষিণ কলকাতার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়। কালীঘাট মন্দির থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবন পর্যন্ত প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। বিশেষ করে তিনটি ওয়ার্ডে প্লাবনের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি— ৮৩ নম্বর ওয়ার্ড, যেখানে কালীঘাট মন্দির অবস্থিত, ৭৩ নম্বর ওয়ার্ড, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী থাকেন, এবং ৮৮ নম্বর ওয়ার্ড, যা সাংসদ মালা রায়ের এলাকার অন্তর্গত। প্রতি বার জোয়ারের সময় এই অঞ্চলগুলিতে যে ভাবে জল ঢুকে পড়ে, তাতে বাসিন্দাদের নিত্যজীবন বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে।

Advertisement

এই সংক্রান্ত বিষয়ে বারবার অভিযোগ উঠলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি। কিন্তু এ বার সেই সমস্যার মূলে গিয়ে সমাধানের পথে হাঁটল কলকাতা পুরসভা। সূত্রের খবর, সোমবার মেয়র পরিষদের বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন মিলল একটি বিশেষ প্রকল্পের। সিদ্ধান্ত হয়েছে, টালিনালা এব‌ং গঙ্গার সংযোগস্থল দইঘাটে তৈরি হবে একটি আধুনিক ব্যারাজ। সেই সঙ্গে গড়ে তোলা হবে নিকাশি পাম্পিং স্টেশন। প্রকল্পের আনুমানিক খরচ প্রায় ১৩৪ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আসন্ন দুর্গাপুজোর পরেই শুরু হয়ে যাবে নির্মাণকাজ। কালীঘাট রোড, টালিগঞ্জ রোড, কালীঘাট বাজার, বড় গলি, চক্রবর্তীপাড়া, মায়ের সদরঘাট, মিষ্টি গলি, গদার মাঠ থেকে শুরু করে নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিট ফার্স্ট লেন পর্যন্ত একাধিক রাস্তা তলিয়ে যায় জোয়ারের জলে। এমনকি বহু পরিবারের ঘরেও জল ঢুকে যায়। দীর্ঘদিন ধরে এই দুরবস্থা ভোগ করছেন কালীঘাট ও আশপাশের বাসিন্দারা। কিন্তু পুরসভার কাজ শেষ হলে পাকাপাকি ভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন ওই এলাকাগুলির বাসিন্দারা।

পুরসভা সূত্রে খবর, প্রস্তাবিত ব্যারাজটির উচ্চতা হবে প্রায় ২৫ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৪২ মিটার। বানের সময় এই ব্যারাজের গেট বন্ধ রাখলে আর গঙ্গার জল টালিনালায় প্রবেশ করতে পারবে না। ভাটার সময় ব্যারাজ খুলে দেওয়া হবে। বিশেষ করে বর্ষাকালে জোয়ারের সময়ও গেট বন্ধ থাকবে। তখন টালিনালার জল নিয়ন্ত্রিত হবে নতুন পাম্পিং স্টেশনের মাধ্যমে। পুরসভার নিকাশি বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “কোটালের সময় গঙ্গার জলস্তর ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। বৃষ্টি হলে তা আরও বাড়ে। সেই জলই আদিগঙ্গা উপচে আশপাশের এলাকা ভাসায়। তাই বাঁধ দিয়ে জল আটকানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” প্রথমে এই প্রকল্পের দায়িত্ব ছিল নিকাশি দফতরের হাতে। কিন্তু এখন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতর কাজটির বাস্তবায়ন করছে। খরচের বড় অংশ আসবে কেন্দ্রের বিপর্যয় মোকাবিলা খাত থেকে পাওয়া ৫০০ কোটি টাকার তহবিল থেকে।

Advertisement

৮৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, “কালীঘাট এবং আশপাশের মানুষ বছরের পর বছর ধরে জলযন্ত্রণা সহ্য করছেন। কলকাতা পুরসভা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এই সমস্যা থেকে স্থায়ী মুক্তি দিতে। এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে বহু মানুষের দুর্ভোগ দূর হবে। আর কালীঘাট এলাকার মানুষ মুখ্যমন্ত্রী ও মেয়রকে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করবেন।” কালীঘাট এলাকার বাসিন্দাদের আশা, ব্যারাজ ও পাম্পিং স্টেশন তৈরি হলে আর জোয়ারের জল বা বর্ষার বৃষ্টিতে ঘরবাড়ি প্লাবিত হবে না। শারদোৎসবের আগে প্রকল্পে সিলমোহর পড়ায় খুশি এলাকাবাসী। তবে তাঁরা চাইছেন দ্রুত কাজ শুরু হোক, যাতে আগামী বছরের বর্ষার আগেই সমস্যার সমাধান মেলে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শুধু কালীঘাট মন্দির ও আশপাশের এলাকা নয়, দক্ষিণ কলকাতার বহু গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড স্থায়ী ভাবে জলমগ্ন হওয়ার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement