মাদক-জালে কলেজের পড়ুয়ারাও

এনসিবি-র পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তবের কথায়, ‘‘শহরের অন্যান্য কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও হয়তো একই ভাবে মাদক সেবন বা বিক্রির সঙ্গে জড়িত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২৯
Share:

প্রতীকী চিত্র।

কলেজপড়ুয়াদের কাছে মাদক পৌঁছে দেওয়ার একটি চক্রের হদিস পেল ‘নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো’ (এনসিবি)। উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তান, ২২ বছরের দুই যুবককে গ্রেফতার করার পরে জানা গিয়েছে, সল্টলেক, রাজারহাট ও খিদিরপুর এলাকার কয়েকটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজের এক বিশাল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে নিয়মিত নিষিদ্ধ মাদক সরবরাহ করেন তাঁরা। শুধু তা-ই নয়, প্রথমে নেশায় চুর হওয়ার পরে চটজলদি কিছু কাঁচা টাকা পাওয়ার জন্য বহু কলেজপড়ুয়া মাদক বিক্রির ব্যবসাতেও নেমে পড়েছেন।

Advertisement

এনসিবি-র পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তবের কথায়, ‘‘শহরের অন্যান্য কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও হয়তো একই ভাবে মাদক সেবন বা বিক্রির সঙ্গে জড়িত। এমনকী, স্কুলের কিছু পড়ুয়াও জড়িত থাকতে পারে। আমরা নিয়মিত কলেজ ও স্কুলগুলিতে সচেতনতা শিবির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

গত রবিবার এনসিবি-র হাতে ধরা পড়েছিলেন মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত তিন জন। তাঁদের মধ্যে রবার্ট ডিক্সন এবং নিখিল লাখওয়ানি শহরে মাদক সরবরাহ করতেন। তাঁদের মোবাইল ঘেঁটে শহরের কিছু তরুণ-তরুণীর ফোন নম্বর পাওয়া যায়। সেই ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেই উঠে আসে নিলয় ঘোষ এবং জেরম ওয়াটসনের নাম।

Advertisement

নিলয়ের বাড়ি সল্টলেকে। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। নিজে ম্যানেজমেন্ট পড়েছেন। একটি ওয়েব পোর্টালে গিয়ে তিনি এমডিএমএ নামে এক ধরনের নেশার ওষুধ কিনতেন। দিলীপবাবু জানিয়েছেন, তিন ভাবে পাওয়া যায় এমডিএমএ। এক, ক্রিস্টাল। দুই, পাউডার। তিন, ক্যান্ডি। ক্রিস্টাল ও পাউডারের বাজারদর গ্রাম প্রতি আট হাজার টাকা। এখন নববর্ষ ও বড়দিনের প্রাক্কালে চাহিদা বেশি থাকায় এই ধরনের নেশার সামগ্রীর দামও চড়তে থাকে। একটি ক্যান্ডির দাম ৮০০ টাকা। এনসিবি সূত্রের খবর, এলএসডি ব্লটও কিনতেন নিলয়। ব্লট প্রতি দাম দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। দিলীপবাবু জানিয়েছেন, এমডিএমএ-র ক্রিস্টাল ও পাউডার জলে গুলে খেয়ে নেশা করা হয়। ক্যান্ডি লজেন্সের মতো চুষে খায়। এলএসডি ব্লট জিভের তলায় রাখতে হয়।

জেরম পার্ক স্ট্রিটে থাকেন। ইভেন্ট ম্যানেজারের কাজ করেন। নিলয় নেট মারফত মাদক নিয়ে এসে অন্যদের সঙ্গে জেরমকেও সরবরাহ করতেন। জানা গিয়েছে, নিজে ইভেন্ট ম্যানেজার হিসেবে বিভিন্ন পার্টির আয়োজন করতেন জেরম। সেই সব পার্টিতেও চলত মাদক সেবন। রবিবার থেকে তাঁদের দু’জনের মোবাইলের উপরে নজর রাখতে শুরু করেন তদন্তকারীরা। সোমবার দুপুরে তাঁদের কথা হয়। রবিবার রাত দুটো নাগাদ সল্টলেকের ৯ নম্বর ট্যাঙ্কের কাছ থেকে মাদক-সহ দু’জনকে হাতেনাতে ধরা হয়। তাঁদের দু’জনের কাছ থেকে সব মিলিয়ে ২৬.৬ গ্রাম এমডিএমএ এবং ১৪৮টি এলএসডি ব্লট পাওয়া গিয়েছে। ২৬.৬ গ্রাম এমডিএমএ-র মধ্যে পাউডার ও ক্রিস্টাল মিলিয়ে ১৪.৫ গ্রাম ছিল। বাকিটা ক্যান্ডি। সঙ্গে ১০ গ্রাম এমডিএমএ থাকলেই অভিযুক্তের ন্যূনতম ১০ বছরের সাজা হওয়ার কথা বলে দিলীপবাবু এ দিন জানান। দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘কোথা থেকে এই মাদক আসত, তা জানতে নিলয়ের ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোন পরীক্ষার জন্য সেন্ট্রাল ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে।’’

বেশ কিছু দিন আগে দিল্লি ও তার আশপাশের কয়েকটি স্কুলের কাছে ওই এমডিএমএ ক্যান্ডি বিক্রি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যায়। লজেন্সের মতো দেখতে এই সব নেশার ওষুধ বাচ্চাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টার আশঙ্কা তৈরি হয়। সতর্ক এনসিবি প্রচার করতে শুরু করে। সেই সময়ে কলকাতাতেও প্রচার করা হয়। দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘এর আগে কলকাতায় কখনও এমডিএমএ সেবনের খবর আমরা পাইনি। এই প্রথম। ক্যান্ডিগুলো একেবারে লজেন্সের মতো দেখতে। সহজেই বাচ্চাদের আকৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন