ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে গোটা মেডিক্যাল কলেজ।—ফাইল চিত্র
অগ্নিকাণ্ডের পরে কেটে গিয়েছে আটটা দিন। কিন্তু ওই ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ-সহ বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি।
গত ৩ অক্টোবর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাসি বিভাগে আগুন লাগে। ওই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়। কিন্তু আট দিন পরেও সেই কমিটির রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি। বৃহস্পতিবার হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। তবে, রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি। শনিবারের আগে কিছুই হবে না।’’
হাসপাতাল সূত্রের খবর, অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরে পাঠিয়ে দিতে হবে। কিন্তু শনিবার স্বাস্থ্য ভবন বন্ধ থাকে। শনিবারের পরেই পুজোর ছুটি শুরু হয়ে যাচ্ছে। ফলে, দিন পনেরো পরে ওই রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরে পৌঁছবে। তার পরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ঘটনার দিন পাঁচেকের মধ্যেই রিপোর্ট তৈরি করে স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানোর কথা কর্তৃপক্ষ জানালেও কেন এত দেরি হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মেডিসিন, কার্ডিয়োলজি বিভাগের প্রধান, ডেপুটি সুপার, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ-সহ সাত জনকে নিয়ে তদন্ত কমিটি তৈরি হয়। গত ৪ অক্টোবর থেকেই তাঁরা অভ্যন্তরীণ তদন্তের কাজ শুরু করেন। অগ্নিকাণ্ডের পরে ফরেন্সিক দলের সদস্যেরা ঘটনাস্থল থেকে থালা-বাটি, এমনকি মোবাইলও পেয়েছিলেন। যার ফলে অন্তর্ঘাতের মতো অভিযোগ দৃঢ় হচ্ছিল। হাসপাতালের যাবতীয় ওষুধ মজুত থাকে ফার্মাসি বিভাগে। অগ্নিকাণ্ডের জেরে প্রায় সাত কোটি টাকার ওষুধ নষ্ট হয়ে যায় বলে অভিযোগ।
হাসপাতালের একাংশের অভিযোগ, সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে ওষুধ কেনার হিসেব নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল। হিসেবে গোলমালের অভিযোগও তুলেছিলেন কেউ কেউ। এর পরেই ওষুধ পুড়ে যাওয়া এবং ওষুধ কেনার নথি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনায় অভিযোগ আরও জোরালো হয়।
হাসপাতালের একাংশ জানাচ্ছেন, গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ে রিপোর্ট জমা দিল না, সেই ধোঁয়াশা কাটছে না। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, যে কোনও দুর্ঘটনার পরেই দায়িত্বে থাকা কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিংবা তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপ করা হয়। যেমন, কয়েক বছর আগে শিশু বিভাগে দুই সদ্যোজাতের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনার পরের দিনই দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক, নার্স, জুনিয়র চিকিৎসক-সহ কয়েক জনকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়।
কিন্তু হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের জেরে কয়েক কোটি টাকার ওষুধ ও জিনিসপত্র নষ্ট হওয়ার আট দিন পরেও দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে রিপোর্ট তৈরির কাজ কেন হল না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে।