Kolkata Municpal Corporation

কলকাতা পুরসভায় সাপ, বনকর্মীদের না ডেকেই মেরে ফেলার অভিযোগ 

কলকাতা পুরসভার সদর দফতরের ট্রেজ়ারি বিভাগে সোমবার ছ’ফুট লম্বা একটি দাঁড়াশ সাপকে ঘিরে প্রবল আতঙ্ক ছড়াল। এ দিন সকালে ওই বিভাগে কর্মীরা ঢুকতেই ভিতরে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা সতর্ক করে দেন, ভিতরে একটি বড়সড় সাপ রয়েছে।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৪ ০৬:৪৭
Share:

কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।

ইঁদুরের পরে এ বার সাপ কলকাতা পুর ভবনে!

Advertisement

কলকাতা পুরসভার সদর দফতরের ট্রেজ়ারি বিভাগে সোমবার ছ’ফুট লম্বা একটি দাঁড়াশ সাপকে ঘিরে প্রবল আতঙ্ক ছড়াল। এ দিন সকালে ওই বিভাগে কর্মীরা ঢুকতেই ভিতরে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা সতর্ক করে দেন, ভিতরে একটি বড়সড় সাপ রয়েছে। কর্মীরা দেখেন, বিশাল সাপটি ট্রেজ়ারার সুস্মিতা কুণ্ডুর অফিসঘরে এসি-র ভিতরে গুটিয়ে বসে রয়েছে। এই খবর জানাজানি হতেই গোটা পুর ভবনে সর্পাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ট্রেজ়ারি বিভাগে ভয়ে তখন কেউ ঢুকতে পারছিলেন না। খবর দেওয়া হয় কেয়ারটেকারকে। কেয়ারটেকার ও তাঁর বিভাগের কর্মীরা ছুটে আসেন। এ সব ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী, সাপ ধরার কাজ বন দফতরের। তাই পুরসভার তরফে বিষয়টি জানানোর কথা ছিল বন দফতরকে।

এ দিন পুর সচিব স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘সাপ ধরার জন্য বন দফতরকে ফোন করতে বলেছিলাম পুর কমিশনারের ওএসডি-কে। বন দফতরের লোকজন এলে ওঁরা নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে দেখা করতেন।’’ পুর কমিশনারের ওএসডি শৌভিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাকে সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছিল, সাপ ধরার জন্য যেন বন দফতরকে খবর দিই। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই আবার বলা হয়, বন দফতরকে জানাতে হবে না। সচিবালয়ের তরফেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

Advertisement

কিন্তু কী ব্যবস্থা করা হয়েছে? সাপটি তা হলে কোথায় গেল? পুরসভার কেয়ারটেকার চন্দ্রাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাপটিকে আমাদের কর্মীরা ধরে পাশে কোথাও রেখে এসেছেন।’’ কিন্তু সাপ তো বন দফতরের ধরার কথা। তা হলে আপনারা ধরে সেটিকে কোথায় ফেললেন? এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান কেয়ারটেকার। পুরসভা সূত্রের খবর, কেয়ারটেকারের কর্মীরা সাপটিকে মেরে ফেলেছেন। এ কথা জানিয়েছেন ট্রেজ়ারি বিভাগ লাগোয়া এস এন ব্যানার্জি রোডের ফুটপাতের হকারেরা। এমনই এক হকার বললেন, ‘‘নিরাপত্তারক্ষীরাই বলছিলেন যে, সাপটিকে মেরে ফেলা হয়েছে।’’ এ দিন এক নিরাপত্তারক্ষী সাপটিকে মেরে ফেলার কথা স্বীকারও করেন।

নিয়ম মতো সাপ বা যে কোনও বন্যপ্রাণী উদ্ধার করতে হলে বন দফতরের শুল্কহীন নম্বরে (১৮০০৩৪৫৫২০৪) ফোন করে জানাতে হয়। এ দিন সন্ধ্যায় সেই নম্বরে ফোন করে জানা গেল, পুরসভা থেকে কোনও সাপ তারা উদ্ধার করেনি। কেউ ফোনও করেননি। পুরসভার ট্রেজ়ারি বিভাগে থাকা সাপটিকে যে মেরে ফেলা হয়েছে, তা এ দিন কর্মীদের অনেকেই স্বীকার করে নেন। এ প্রসঙ্গে প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায় বলেন, ‘‘একমাত্র আত্মরক্ষার্থে এই ধরনের সাপকে মারা যেতে পারে। কিন্তু অকারণে মারলে তা চরম গর্হিত ও জেলযোগ্য অপরাধ।’’ বন দফতরের এক আধিকারিক জানান, দাঁড়াশ এমনিতে নির্বিষ সাপ। তবে তার লেজের ঝাপটা গায়ে লাগলে তা থেকে চর্মরোগ হতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক দিন ধরে মরা ইঁদুরের পচা গন্ধে নিজের ঘরে ঢুকতে পারছিলেন না কলকাতা পুরসভার যুগ্ম কমিশনার জ্যোতির্ময় তাঁতি। এ দিনও তিনি অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন। এ দিনও তাঁর ঘরে দুর্গন্ধের চোটে ঢোকা গেল না। দেখা গেল, ফল্‌স সিলিং থেকে মোটা মোটা পোকা নীচে পড়ছে। কর্মীরা জানাচ্ছেন, ওই ফল্‌স সিলিংয়ের উপরেই প্রচুর মরা ইঁদুর রয়েছে। কেয়ারটেকারের কর্মীরা আসছেন, কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না। সব মিলিয়ে ইঁদুর, সাপ নিয়ে যথেষ্ট আতঙ্কে পুরসভার কর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন