প্রায়ই ভুল তথ্য বোর্ডে, যাত্রী-হয়রানি

রেলের হিসেবে, দমদম দিয়ে দিনে যাতায়াত করেন প্রায় দশ লক্ষ লোক। নিত্যযাত্রীদের অনেকেই মেট্রো থেকে বেরিয়ে ডিসপ্লে বোর্ড দেখে ট্রেন ধরতে দৌড়ন। কিন্তু সেখানে ভুল তথ্য থাকলে সিঁড়ি ভেঙে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে হতাশ হতে হয় তাঁদের। অনেক সময়ে যে ট্রেন আসছে বলে ঘোষণা করা হয়, দেখা যায় তার আগে অন্য ট্রেন এসে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ০২:০৩
Share:

বিভ্রাট: মাত্র সাত মিনিটের ব্যবধানে একই প্ল্যাটফর্মে দু’টি ট্রেন! ডিসপ্লে বোর্ডের এই তথ্যের সঙ্গে মিল নেই ঘোষণারও। নিজস্ব চিত্র

নির্ঘণ্ট মেনে ট্রেন চলে না বহু দিনই। এ বার দমদম স্টেশনের পরিষেবা নিয়েও ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, মাঝেমধ্যে ডিসপ্লে বোর্ড বিগ়ড়োনো তো রয়েছেই। এ ছাড়া, বহু সময়ে বিভ্রান্তিকর তথ্যও ফুটে ওঠে বোর্ডে। একই প্ল্যাটফর্মে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দু’টি আলাদা ট্রেন আসার তথ্যও দেখা যায়! তার ফলে হয়রানি আরও বাড়ছে। রেল সূত্রের খবর, শিয়ালদহ ডিভিশনের পরিষেবা নিয়ে এমন বিভিন্ন অভিযোগ রেলের কর্তাদের কানেও পৌঁছেছে। কিন্তু তাতে কোনও সুরাহা হবে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর কিন্তু নির্দিষ্ট ভাবে মেলেনি।

Advertisement

রেলের হিসেবে, দমদম দিয়ে দিনে যাতায়াত করেন প্রায় দশ লক্ষ লোক। নিত্যযাত্রীদের অনেকেই মেট্রো থেকে বেরিয়ে ডিসপ্লে বোর্ড দেখে ট্রেন ধরতে দৌড়ন। কিন্তু সেখানে ভুল তথ্য থাকলে সিঁড়ি ভেঙে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে হতাশ হতে হয় তাঁদের। অনেক সময়ে যে ট্রেন আসছে বলে ঘোষণা করা হয়, দেখা যায় তার আগে অন্য ট্রেন এসে গিয়েছে। আবার অনেক সময়ে হঠাৎ করে প্ল্যাটফর্ম বদলের ঘোষণা করার ফলেও ভোগান্তি হয় যাত্রীদের। এক প্রৌঢ়যাত্রীর অভিযোগ, সাবওয়ের সিঁড়ি দিয়ে বৃষ্টির সময়ে জল-কাদায় ওঠানামা করাই দায়। পা পিছলে বিপদের আশঙ্কাও ষোলো আনা।

বস্তুত, বছরখানেক আগে ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঘটা করে চলমান সিঁড়ি তৈরি করেছিল রেল। কিন্তু সেই সিঁড়ি স্তব্ধ হয়েই রয়েছে। তার ফলে ভিড়ের মধ্যে ওই অপরিসর খাড়াই সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করতে হয় যাত্রীদের। এক যাত্রীর কথায়, ‘‘ওই সিঁড়ি তৈরি করে আমাদের আরও অসুবিধায় ফেলেছে রেল।’’

Advertisement

ট্রেন চলাচলের পরিস্থিতি কেমন?

নিত্যযাত্রীরা বলছেন, শিয়ালদহ ডিভিশনের বনগাঁ ও মেন লাইনের ট্রেন নিয়ে কিছু না বলাই ভাল। বেশির ভাগ দিনই ট্রেন সময়ে চলে না। বনগাঁ শাখার ট্রেন এলে বহু ক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। যেমন, শনিবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটের বারাসত লোকাল দমদমে পৌঁছেছে ৯টা ৫০ নাগাদ। ৯টা ৫৩ মিনিটের রানাঘাট লোকাল দমদমে এসেছে রাত ১০টা ১৭ মিনিটে। রেল সূত্রের খবর, হরীন্দ্র রাও পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব নিয়েই সব ডিভিশনের কর্তাদের সময় মতো ট্রেন চালাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। শিয়ালদহ ডিভিশনের কর্তারা অবশ্য ওই নির্দেশ এখনও পালন করে পারেননি।

সম্প্রতি এক সপ্তাহে তিন-তিন বার চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা করে ব্যাহত হয়েছে শিয়ালদহের ট্রেন পরিষেবা। লক্ষ লক্ষ মানুষ সন্ধেবেলা ট্রেনে চেপে বাড়ি পৌঁছেছেন মাঝরাতেরও পরে। ২৫ মিনিটের দূরত্ব যেতে সময় লেগেছে তিন ঘণ্টা! ওই ঘটনার পরে রেলকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এই দুরবস্থা শুধু ওই তিন দিনের নয়, গত দেড়-দু’বছর ধরে লাগাতার এমন ভাবেই ট্রেন চলছে।

পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার অবশ্য সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অনুযোগ করেন, ‘‘সামান্য কারণেই রেলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। সমস্যাটা কেউ বুঝতেই চাইছেন না।’’ সমস্যা কী? জিএমের কথায়, ‘‘পরিকাঠামোর তুলনায় অনেক বেশি ট্রেন চলছে। ট্রেনের তুলনায় আবার যাত্রী অনেক বেশি। ফলে, ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণের সময়টুকুও মিলছে না।’’

কিন্তু এই পরিকাঠামোর উপরে ভরসা করেই তো শিয়ালদহে পরপর পাঁচ বছর সময় মেনে ট্রেন চলেছে। এমনকী, বছর দু’য়েক আগেও নিত্যযাত্রীদের এত অভিযোগ ছিল না। তা হলে এখন কেন এই হাল?

শিয়ালদহের কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, ডিভিশনের শীর্ষ কর্তারা কোনও সমস্যাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না। যার জন্য এমন অবস্থা হয়ে রয়েছে। শুধু ট্রেন চলাচলই নয়, লাইন, সিগন্যাল ও গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের হালও খারাপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন