প্রশ্নে পুলিশি ভূমিকা

ছিঁড়ে নেওয়া হল যুবকের কান, অভিযোগ নিতেই পার ১২ ঘণ্টা

ঘটনা ঘটেছিল শনিবার রাতে। তার ১২ ঘণ্টা পরে স্থানীয় কাউন্সিলরের হস্তক্ষেপে অভিযোগ নিল দমদম থানার পুলিশ। খাস কলকাতার বুকে এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে। রবিবার ঘটনার কথা জানাজানি হতে অবশ্য তড়িঘড়ি গ্রেফতার করা হয়েছে মূল অভিযুক্ত-সহ দু’জনকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২২
Share:

ঘটনা ঘটেছিল শনিবার রাতে। তার ১২ ঘণ্টা পরে স্থানীয় কাউন্সিলরের হস্তক্ষেপে অভিযোগ নিল দমদম থানার পুলিশ। খাস কলকাতার বুকে এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে। রবিবার ঘটনার কথা জানাজানি হতে অবশ্য তড়িঘড়ি গ্রেফতার করা হয়েছে মূল অভিযুক্ত-সহ দু’জনকে। তাঁদের নাম জয়ন্ত কুণ্ডু ও সুশান্ত কুণ্ডু।

Advertisement

ঘটনাটি ঠিক কী? প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান থেকে পুলিশ জেনেছে, ওই রাতে সাড়ে ১১টা নাগাদ দমদম ক্যান্টনমেন্ট এলাকার তিন নম্বর রেলগেটের কাছে লাইনের ধারে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আগুন পোহাচ্ছিলেন স্থানীয় যুবক বিশ্বজিৎ বালা। কিছুটা দূরেই সঙ্গীদের নিয়ে বসেছিলেন বিশ্বজিতের প্রতিবেশী জয়ন্ত। বিশ্বজিতের বন্ধুদের দাবি, আগুনে যে সব কাগজ ফেলা হচ্ছিল, সেগুলির মধ্যে থাকা একটি চকলেট বোমা তখন কোনও ভাবে ফেটে যায়। কেন বিশ্বজিতেরা চকলেট বোমা ফাটাল, তা জানতে চেয়ে শুরু হয় দু’পক্ষে বচসা। জয়ন্তের সঙ্গীদের অভিযোগ, তাঁদের হুমকি দিতেই বোমাটি ফাটানো হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, বিবাদ চলাকালীন জয়ন্ত বাঁশ দিয়ে মারতে যায় বিশ্বজিৎকে। তিনি রুখে দিলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এর পরে আচমকাই জয়ন্ত ছুটে এসে বিশ্বজিতের কান কামড়ে ছিঁড়ে নেন বলে অভিযোগ। গুরুতর জখম অবস্থায় বিশ্বজিৎকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে রেফার করে দেওয়া হয় এসএসকেএমে। ওই হাসপাতালেই এখন ভর্তি আছেন তিনি।

দমদম থানায় খবর দেওয়া হলে রাতেই আসে পুলিশ। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সব শুনেও পুলিশ অভিযুক্তের পক্ষ নিয়েই কথা বলতে থাকে। তাঁদের আরও অভিযোগ, প্রতিবাদ জানালে পুলিশ লাঠিও চালায়। বিশ্বজিতের স্ত্রী রমাদেবী বলেন, ‘‘পুলিশ ফিরে যাওয়ার সময়ে আমাকে বলে সঙ্গে আসতে। অভিযোগ লেখানোর জন্যে ডেকেছে ভেবে আমি পুলিশের গাড়িতে উঠে পড়ি। কিন্তু কিছু দূরে যাওয়ার পরেই গাড়ি থেকে আমাকে নামিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, নিজেদের মধ্যে বিষয়টি মিটমাট করে নিতে।’’ যদিও সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে পুলিশ।

Advertisement

এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, জয়ন্তর বাবা জীবন কুণ্ডুর বাড়িতে বসে জুয়ার আসর। পাশাপাশি, এলাকায় চলে নানা অসামাজিক কাজও। এই নিয়ে বারবার পুলিশ, পুরসভাকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। বাসিন্দাদের দাবি, বিশ্বজিৎ এই সব কিছুর প্রতিবাদ করায় তাঁর সঙ্গে জয়ন্তর বিরোধ তৈরি হয়েছিল। পুরসভা এবং পুলিশের একাংশের সঙ্গে জীবনবাবুদের আঁতাত আছে বলেও অভিযোগ তোলেন স্থানীয়েরা। তাঁদের দাবি, পুলিশ নিয়মিত ‘মাসোহারা’ পায় এখান থেকে।

রবিবার ঘটনার কথা জানাজানি হতেই স্থানীয় কাউন্সিলর, সিপিএমের মনীষা বিশ্বাস বাসিন্দাদের নিয়ে থানায় গিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবি জানান। এর পরেই পুলিশ অভিযোগ নেয়। যদিও কাউন্সিলর মনীষাদেবীর বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয়েরা। তাঁদের অভিযোগ, এলাকায় জুয়ার আসর চলছে জেনেও কাউন্সিলর মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন। ঘটনার কথা কাউন্সিলরকে সকালে জানানো হলেও তিনি কেন দুপুরে থানায় গেলেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। যদিও এ বিষয়ে মনীষাদেবী বলেন, ‘‘আমার যা করার তা করেছি। থানায় অভিযোগ লিখিয়ে এসেছি। দোষীদের গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে। এর বেশি আর কিছু বলব না।’’

ঘটনা প্রসঙ্গে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন ২) ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, ‘‘সকালেই ঘটনার কথা জেনেছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। কেন পুলিশ ১২ ঘণ্টা পরে অভিযোগ নিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোথাও কোনওরকম গাফিলতি ছিল কি না, সেটাও তদন্ত করে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন