Dengue Fear

ডেঙ্গির মরসুমে চিন্তা বাড়িয়ে এখনও খোলা নর্দমা শহর জুড়ে

উত্তর কলকাতার কালীকুমার ব্যানার্জি লেনের এমনই একটি নর্দমা নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ সামনে এসেছে। তাঁদের দাবি, সেখানে রাস্তার এক দিক জুড়ে রয়েছে বিশাল নর্দমা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৫৪
Share:

অপরিষ্কার: কলকাতা পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বাড়ির পাশেই খোলা নর্দমা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে শহরে। প্রায় প্রতিদিনই আসছে মৃত্যুর খবর। করোনা পরিস্থিতির মতো ডেঙ্গির প্রকোপ কোথায় কোথায় বেশি, তা জেনে নিয়ে সেই অনুযায়ী রাস্তা চিহ্নিত করাও শুরু হয়েছে। সেই সব রাস্তা এবং ওয়ার্ড ধরে ধরে পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানাচ্ছে কলকাতা পুরসভা। তবে, এই পরিস্থিতিতেও খোলা নর্দমার বিপদ কাটছে না বলে অভিযোগ। ভুক্তভোগীদের দাবি, ঘরে ঘরে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও এ নিয়ে হেলদোল নেই প্রশাসনের। বছরের পর বছর সরকারি নানা দফতরে চিঠি দিয়েও সুরাহা হচ্ছে না। মশার আঁতুড়ঘর হয়ে থেকেই যাচ্ছে খোলা নর্দমা!

Advertisement

উত্তর কলকাতার কালীকুমার ব্যানার্জি লেনের এমনই একটি নর্দমা নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ সামনে এসেছে। তাঁদের দাবি, সেখানে রাস্তার এক দিক জুড়ে রয়েছে বিশাল নর্দমা। প্রায় ৭৫ মিটার লম্বা ও তিন থেকে চার ফুট চওড়া সেই নর্দমায় এখন মশার লার্ভা ঘুরছে। জমা জলের দুর্গন্ধে টেকা দায়। তার উপরে স্থানীয়দের অনেকে সেখানেই আবর্জনা ফেলে যান। ওই নর্দমা বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দেওয়া হচ্ছে বলে স্থানীয়দের একাংশের দাবি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন ডেঙ্গি
পরিস্থিতিতে পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে নর্দমার পাশের বাড়ির বাসিন্দাকেই চিঠি ধরিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাপস মান্না নামে ওই বাসিন্দা বললেন, ‘‘শহরে খোলা নর্দমা থাকবে কেন? এ সব তো পুরসভার দেখার কথা। কিন্তু তা না করে পুরসভা থেকে আমার নামে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ দিকে, আমিই ২০১৫ সাল থেকে নানা জায়গায় ওই নর্দমা ঢেকে দেওয়ার জন্য আবেদন করে চলেছি।’’

একই রকম পরিস্থিতি উত্তর কলকাতার ১০, ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু জায়গায়। বেলেঘাটা এবং ফুলবাগান এলাকার কয়েকটি খোলা নর্দমার পাশেও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে বাসিন্দাদের বসবাস করতে দেখা গিয়েছে। তিলজলা, তপসিয়া ও ট্যাংরার বস্তিগুলিতে এমন খোলা নর্দমার সংখ্যা আরও বেশি। একই রকম অবস্থা দক্ষিণ কলকাতার সংযুক্ত এলাকায়। বাগবাজারে এমনই একটি খোলা নর্দমার কাছে থাকেন সুবিমল সাহা। তিনি আবার বললেন, ‘‘পুরসভাকে জানানো হলে ওরা শুধু তেল ছিটিয়ে চলে যায়। সেটুকু করতেও পাড়ার লোকেদের কাছ থেকে বখশিস চাওয়া হয়। এখন ডেঙ্গির মরসুমে অবস্থা আরও খারাপ। এলাকায় মশা ঘুরছে বলে জানানো হয়েছিল। তাতে তেল ছড়ানোর জন্য এ বার আরও বেশি টাকা চাওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

কিন্তু কলকাতায় কি এমন খোলা নর্দমা থাকার কথা?

পুরসভা সূত্রের খবর, পাঁচ বছর আগেই শহরকে খোলা নর্দমামুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। দক্ষিণ কলকাতার সংযুক্ত এলাকার জন্য এই কাজ করতে ইতিমধ্যেই প্রায় পাঁচশো কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছে। মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ বললেন, ‘‘পুজোর পরেই দক্ষিণ কলকাতায় কাজ শুরু হবে। শহরের কোথাও খোলা নর্দমা থাকার কথা নয়। আমার কাছে এলে বিষয়টি দ্রুত দেখে দেওয়া হবে।’’ কিন্তু এত দিন দেখা হয়নি কেন? মেয়র পারিষদ (বস্তি উন্নয়ন) স্বপন সমাদ্দার বললেন, ‘‘মেয়র নিজে এ বিষয়ে আলাদা গুরুত্ব দিতে বলেছেন। গত প্রায় চার-পাঁচ বছর ধরেই ছোট ছোট নর্দমা ঢেকে দিয়ে নীচে পাইপলাইন বসানোর কাজ জোরকদমে শুরু করেছি। কিন্তু এই ধরনের কাছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, অর্থনৈতিক সঙ্গতি আর ভৌগোলিক সাহায্য লাগে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা আমার আছে, টাকারও সমস্যা হবে না। কিন্তু ভৌগোলিক দিক থেকে আটকে যেতে হচ্ছে। শহরের বহু বস্তিতে এমন অবস্থা যে, নর্দমা ঢেকে দিলে জল বার করা মুশকিল হবে। ফলে বুঝেশুনে এগোতে হচ্ছে।’’

মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার যদিও বললেন, ‘‘কিন্তু কাজ পড়ে থাকার জন্য যদি উল্টে সাধারণ মানুষকেই নোটিস ধরানো হয়, সেটা অন্যায়। এই অন্যায় কাজ দ্রুত শুধরে নেওয়াই ভাল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন