ধৃত আর এক দম্পতি

পরপর ডাকাতি একই দলের কাজ

শহর ও শহরতলির ১২টি ডাকাতির পাণ্ডা এক দম্পতি ধরা পড়েছিল বৃহস্পতিবার রাতেই। রবিবার বিকেলে গোয়েন্দা পুলিশের জালে ফের পাকড়াও আরও এক দম্পতি। যারা রিজেন্ট পার্ক, হরিদেবপুর ও গল্ফগ্রিনের ডাকাতিতে মূল পাণ্ডা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:১৩
Share:

শহর ও শহরতলির ১২টি ডাকাতির পাণ্ডা এক দম্পতি ধরা পড়েছিল বৃহস্পতিবার রাতেই। রবিবার বিকেলে গোয়েন্দা পুলিশের জালে ফের পাকড়াও আরও এক দম্পতি। যারা রিজেন্ট পার্ক, হরিদেবপুর ও গল্ফগ্রিনের ডাকাতিতে মূল পাণ্ডা। পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে ধৃত রেজ্জাক শেখ ও লীলা এবং রবিবার ধৃত রহিম আলি ওরফে লালচাঁদ ওরফে রেহান এবং তার স্ত্রী দীপ্তি ওরফে রিয়া, সকলেই একই দলের সদস্য। দলের মূল চক্রী লালচাঁদ নিজেই।

Advertisement

এ দিন বিকেলে লালচাঁদ ও দীপ্তির সঙ্গেই ধরা পড়ে আলি হোসেন ওরফে শানু নামে তাদের আর এক সঙ্গী। ধৃতদের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র-সহ লুঠের বেশ কিছু জিনিসপত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, এ দিন বিকেলেই কলকাতা থেকে পালানোর ছক কষেছিল ওই তিন জন। এর আগে পরপর ওই ডাকাতিগুলির ঘটনায় দু’দফায় দুই মহিলা-সহ মোট দশ জনকে গ্রেফতার করেছে লালবাজার এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ।

লালবাজার সূত্রে খবর, একই দলের সদস্য হওয়ায় ডাকাতির ছকটাও সকলেরই এক। গভীর রাতে স্বামী-স্ত্রী গাড়িতে চেপে বেড়াতে বেরোনোর ঢঙে টহলদার পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়া এবং ডাকাতি সেরে একই কায়দায় ডেরায় ফিরে যাওয়া। রেজ্জাক-লীলার মতোই লালচাঁদ-দীপ্তিও একই গাড়িতে থাকত। চালকের আসনে লালচাঁদ, পাশে দীপ্তি। একই কায়দায় তাদের গাড়ির দু’পাশেও মোটরবাইকে থাকত সহযোগীরা। এ ক্ষেত্রেও ডাকাতির সময়ে বাইরে গাড়িতে বসে থাকত দীপ্তি। তার পরে লুঠের মাল গাড়িতে তুলে সকলে মিলে চম্পট দিত। গাড়িতে মহিলা থাকায় সে ভাবে সন্দেহের উদ্রেক হতো না কারও। এক তদন্তকারী জানান, গল্ফগ্রিনের ডাকাতিতেও এ ভাবেই বাইরে গাড়িতে বসে সব দিকে নজর রেখেছিল দীপ্তি।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, লালচাঁদ থাকত ই এম বাইপাসের ধারে, তিলজলার একটি ফ্ল্যাটে। বনগাঁয় বাড়ি হলেও লালচাঁদের সঙ্গেই থাকত দীপ্তি। গোয়েন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে দীপ্তি বাইপাসের ধারে একটি পানশালায় নাচগানের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। সেই পানশালায় যাতায়াতের সূত্রে তার প্রেমে পড়ে গিয়েছিল লালচাঁদ। পরে দু’জনের বিয়ে হয়।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, লালচাঁদের সঙ্গে আসলাম, রেজ্জাক শেখ ওরফে রাজা নিয়মিত যেত ই এম বাইপাসের ওই পানশালায়। সেখানেই আসলামের সঙ্গে পরিচয় হয় মুনমুনের। গত সপ্তাহে আসলাম ও তার বান্ধবী মুনমুনকেও গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বর্তমানে তারা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। অন্য দিকে, রেজ্জাক ও লীলার পরিচয় হয়েছিল জেলে। জেল থেকে বেরিয়ে বিয়ের পরে তারা ফের ডাকাতি শুরু করে। এক পুলিশকর্তা জানান, বাইপাসের ওই পানশালায় আসা দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যেচে আলাপ করত দীপ্তি। পরে লালচাঁদের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিত। এ ভাবেই তৈরি হয়েছিল ওই ডাকাত দল। সেই দলটিই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন দিকে ডাকাতি চালাচ্ছিল। লালচাঁদ-দীপ্তি, রেজ্জাক-লীলাই শুধু নয়, আসলামও একই কায়দায় মুনমুনকে সঙ্গে নিয়ে ডাকাতি করত।

পুলিশ সূত্রের খবর, হরিদেবপুর, রিজেন্ট পার্ক এবং গল্ফগ্রিনের তিনটি ডাকাতির ক্ষেত্রেই গ্রিল কেটে বাড়িতে ঢুকেছিল দুষ্কৃতীরা। ভিতরে ঢোকার পরে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ডাকাতি করে তারা। তদন্তকারী এক অফিসার জানান, ধৃতেরা বা ওই দলের বেশির ভাগ সদস্য আগে গ্রিল কেটে চুরিতে সিদ্ধহস্ত ছিল। কেউ কেউ আবার ছিনতাইয়েও যুক্ত ছিল। লালচাঁদের মাধ্যমে ওই দুষ্কৃতীদের হাতে অস্ত্র আসায় ডাকাতি শুরু করে তারা।

রবিবার বিকেলে লালচাঁদ, দীপ্তি ও শানুকে ধরা হয় বেশ নাটকীয় ভাবে। রবিবারের বিকেলে ট্যাক্সি থেকে নেমে দীপ্তিকে নিয়ে দ্রুত রাস্তা পার হয়ে এনআরএস হাসপাতালের পাশে সাবওয়ের দিকে যাচ্ছিল আসলাম ও শানু। আচমকা তাদের সামনে এসে দাঁড়ায় ষণ্ডামার্কা বেশ কয়েক জন যুবক। তিন জন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের পাকড়াও করে একটি টাটা সুমো গাড়িতে তোলে ওই যুবকরা। নিমেষেই ভিড়ে মিশে যায় গাড়িটি। ওই ষণ্ডামার্কা যুবকেরাই কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মী।

এ দিন এক গোয়েন্দা অফিসার বলেন, ‘‘শহরের প্রায় ২৫টি চুরির ঘটনায় লালচাঁদ জড়িত। গত আড়াই বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চললেও পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল সে। এ বার পুলিশের হাতে ধরা পরায় ওই চুরির ঘটনার কিনারা করা সম্ভব হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement