কোচের বরাত যেতে পারে নতুন হাতে, শঙ্কায় কর্তারা 

রেল বোর্ড সূত্রের খবর, কানাডার একটি সংস্থার সঙ্গে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে এমসিএফ-এর কথা চলছে। ওই প্রযুক্তি পেলে এ দেশেই আন্তর্জাতিক মানের মেট্রোর কোচ তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা থাকবে না।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:১০
Share:

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কোচ।

রেল বোর্ডের ইচ্ছে, তাই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কোচ তৈরির বরাত দেওয়া হতে পারে রায়বরেলীর ‘মডার্ন কোচ ফ্যাক্টরি’ (এমসিএফ)-কে। কিন্তু রেলের এই সিদ্ধান্তে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মেট্রোর প্রাক্তন এবং বর্তমান কর্তাদের একাংশ।

Advertisement

তাঁদের অভিযোগ, চেন্নাইয়ের ‘ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি’ (আইসিএফ)-র মতো এমসিএফ-এরও আধুনিক মেট্রোর কোচ তৈরির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা এবং পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে।

রেল সূত্রের খবর, ‘ট্রেন ১৮’-এর সাফল্যের পরে কম খরচে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কোচ তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল চেন্নাইয়ের আইসিএফ-কে। কিন্তু আধুনিক মেট্রোর কোচ তৈরির মতো প্রযুক্তি এবং অভিজ্ঞতা তাদের নেই বলেই অভিযোগ তুলেছিলেন মেট্রোকর্তাদেরই একাংশ। বছর দেড়েক আগে চেন্নাই থেকে আসা কলকাতা মেট্রোর চারটি রেক প্রযুক্তিগত নানা বাধায় এখনও পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরু করতে পারেনি। সেই কারণে ফের একই সংস্থার উপরে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কোচ তৈরির দায়িত্ব বর্তালে পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই। রেল সূত্রের খবর, ‘ট্রেন ১৮’-এর উৎপাদন বাড়ানোর কাজে সরকারি গুরুত্ব বাড়ায় আইসিএফ-কে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কোচ তৈরি থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তার পরিবর্তে রেলের অধীনস্থ এমসিএফ-কে ওই কাজের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে বলে খবর। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এখনকার কোচগুলি বেঙ্গালুরুর ‘ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড’ (বিইএমএল)-এর তৈরি। ওই সংস্থার তৈরি ১৪টি রেক কিনতে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষের খরচ হয়েছে ৯০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। অর্থাৎ, রেক-পিছু ৬৫ কোটি টাকা। রেল বোর্ড এই খরচ কমাতে চায়। কিন্তু মেট্রোকর্তাদের একাংশের অভিযোগ, রায়বরেলীর এমসিএফ আজ পর্যন্ত নিজেরা কোনও ট্রেন তৈরি করেনি। সেখানে তাদের এত বড় দায়িত্ব দেওয়া কতটা সমীচীন, সেই প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা।

Advertisement

তা হলে কী ভাবে ওই কোচ তৈরি করবে এমসিএফ?

রেল বোর্ড সূত্রের খবর, কানাডার একটি সংস্থার সঙ্গে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে এমসিএফ-এর কথা চলছে। ওই প্রযুক্তি পেলে এ দেশেই আন্তর্জাতিক মানের মেট্রোর কোচ তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা থাকবে না। গুণমানের সঙ্গে আপসও করতে হবে না। এক মেট্রোকর্তার কথায়, ‘‘শুধু গুণমান বজায় রাখাই নয়, আরও উন্নত মানের কোচ তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। রায়বরেলীতে স্টিলের বদলে অ্যালুমিনিয়ামের কোচ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে রেলের।’’

মেট্রোর পরীক্ষার জন্য রায়বরেলীর কারখানায় পৃথক ‘টেস্ট লাইন’ তৈরি করা হচ্ছে বলেও খবর। চেন্নাইয়ের কারখানায় স্ট্যান্ডার্ড গেজ মেট্রোর ওই রেক পরীক্ষার মতো পরিকাঠামো নেই বলে অভিযোগ। কলকাতার পাশাপাশি নাগপুর মেট্রোর রেকও সরবরাহ করা হতে পারে রায়বরেলীর কারখানা থেকে।

কলকাতা মেট্রোর প্রাক্তন এবং বর্তমান কর্তাদের একাংশের অবশ্য দাবি, মেট্রোর কোচ তৈরির ক্ষেত্রে ‘প্রপালসন’ (যে প্রযুক্তিতে ট্রেন চলে) তৈরির প্রযুক্তি পাওয়াই যথেষ্ট নয়। আধুনিক মেট্রোয় স্বয়ংক্রিয় উপায়ে যে ভাবে চালকের ভূমিকা ছাড়াই কন্ট্রোল রুম থেকে ট্রেন দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়, তার ব্যবস্থা থাকাও জরুরি।’’ ওই প্রযুক্তি রায়বরেলীর কারখানার হাতে না আসা পর্যন্ত আশ্বস্ত হতে পারছেন না তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন