সিঙ্গুরের সেই ন্যানো কারখানার কাঠামো। ফাইল চিত্র
কলকাতা পুরবাসীর করের টাকায় সিঙ্গুরের ন্যানো কারখানা ভাঙার বিল মেটানো নিয়ে আতান্তরে পুর প্রশাসন। প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল পুরসভা থেকেই তা মেটানো হবে। পরে বাধা আসে পুরসভার অফিসার মহল থেকে। দিন কয়েক আগে মেয়র পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ওই বিল পাঠানো হবে নগরোন্নয়ন দফতরে। পুরকর্তারা ভেবেছিলেন নগরোন্নয়ন দফতরের কাঁধে সেই দায় চাপিয়ে রেহাই পেয়ে যাবেন। সম্প্রতি ওই দফতর জানিয়ে দিয়েছে তারা অপারগ। শিল্প ও বাণিজ্য দফতরে দেখুন। তাতেই কপালে হাত পুরকর্তাদের। এ দিকে আবার ওই কাজে যুক্ত একাধিক ঠিকাদারের বক্তব্য, ২ বছর হতে চলল, এখনও টাকা মেটানো হয়নি। এর পরে তো আদালতে যেতে হবে।
২০১৬ সালের অক্টোবরে ন্যানো কারখানা ভাঙার কাজ করেছে পুরসভার ৫টি দফতর। কাজ তড়িঘড়ি করার জন্য একাধিক ঠিকাদার সংস্থা নিয়োগ করা হয়েছিল। ভাঙার জন্য বিল হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা। ভাঙার আগে এবং পরে সিদ্ধান্ত হয় পুর প্রশাসনের রাজস্ব তহবিল থেকে টাকা মেটানো হবে। পুর নথিতে লেখা হয়েছিল ‘পেমেন্ট ফর দ্য ডেমোলিশন ওয়ার্ক অ্যান্ড আদার অ্যালায়েড ওয়ার্কস অ্যাট দ্য সিঙ্গুর প্রজেক্ট সাইট স্যাল বি পেড ফ্রম দ্য রেভিনিউ ফান্ড অফ দ্য কর্পোরেশন’। কিন্তু বাধ সাধেন পুরসভারই পদস্থ কর্তাদের একাংশ। তাঁদের যুক্তি ছিল, কলকাতা থেকে তোলা করের টাকা সিঙ্গুরের কারখানার জন্য ব্যয় করলে অডিটে প্রশ্ন উঠবে। তাতে কেউ স্বাক্ষর করতে রাজি হননি। এ নিয়ে একাধিক মেয়র পরিষদ বৈঠকও হয়েছে।
সম্প্রতি এক বৈঠকে ঠিক হয় পুরসভার পক্ষে সমস্যা হলে ওই বকেয়া বিল মেটানোর ভার রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কোর্টে পাঠানো হোক। তাই-ই হয়েছিল। গত ২ অগস্ট পুরসভা থেকে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি ঠেলে দেওয়া হয় নগরোন্নয়ন দফতরের কোর্টে। কিন্তু তা ‘বাউন্স’ হয়ে ফিরে এসেছে পুর কমিশনারের কাছে। গত ৬ অগস্ট নগরোন্নয়ন দফতরের বিশেষ সচিব সুজাতা ঘোষ কলকাতা পুরসভার কমিশনার খলিল আহমেদকে চিঠি লিখে সিঙ্গুরের বিল মেটানো যে তাদের পক্ষে সম্ভব নয় তা জানিয়ে দিয়েছেন। চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘দিজ ডিপার্টমেন্ট ডাজ নট হ্যাভ এনি বাজেট হেড ফর ডেফ্রাইয়িং সাচ এক্সপেনসেস।’ ওই চিঠিতেই তিনি আরও জানিয়েছেন রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য দফতরে ওই প্রস্তাব পাঠানো হোক।
সিদ্ধান্তে দোলাচলে পড়ে সব
চেয়ে বিপাকে পড়েছেন ওই কাজের সঙ্গে যুক্ত গোটা দশেক ঠিকাদার।
তাঁরা জানান, রাজ্যের অন্য তিনটি দফতরের পক্ষে কাজ করেছেন যে ঠিকাদারেরা, তাঁদের বিল মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ পুরসভার হয়ে কাজ করা ঠিকাদারেরা এখনও এক পয়সাও পাননি।