চিঠি দিয়ে পুর হিসেব চাইল ক্যাগ

কর্মসংস্থান প্রকল্পের টাকা কী ভাবে খরচ হয়েছে, কলকাতা পুরসভার কাছে তার হিসেব চাইল ‘কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল’ (ক্যাগ)। কর্মসংস্থান প্রকল্পে গত তিন বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা পেয়েছে কলকাতা পুরসভা।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৭ ১২:৫০
Share:

কর্মসংস্থান প্রকল্পের টাকা কী ভাবে খরচ হয়েছে, কলকাতা পুরসভার কাছে তার হিসেব চাইল ‘কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল’ (ক্যাগ)।

Advertisement

কর্মসংস্থান প্রকল্পে গত তিন বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা পেয়েছে কলকাতা পুরসভা। সে টাকা খরচও হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। কিন্তু কী ভাবে?

ক্যাগের এই প্রশ্নের জবাব কলকাতা পুরসভা দেয়নি। গত এক বছরে হাফ ডজনেরও বেশি চিঠি পাঠিয়েছে ক্যাগ।

Advertisement

পুরসভার অন্দরেও এ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। একাধিক মেয়র পারিষদ এবং কাউন্সিলর এই বরাদ্দের কথা জানেন না। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য সাফাই, ওই টাকা ১০০ দিনের কাজের জন্য ব্যয় করা হয়েছে।

কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে (এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন স্কিম) গত তিন বছরে ১৫০ কোটি টাকা সরকারি প্রকল্প থেকে অনুমোদন পেয়েছে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু ওই টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া, না রাজ্য সরকারের, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে পুর মহলেই। ক্যাগের অফিসারদের হিসেবে পুরসভারই এক নথি থেকে জানা গিয়েছে, ওই টাকা বরাদ্দ হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল থেকেই। তা উল্লেখ করেই গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই টাকার হিসেব চেয়ে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু এই তথ্য পুরসভার বাজেটে নেই বলে জানিয়েছেন একাধিক কাউন্সিলর।

ক্যাগের চিঠির খবর জানাজানি হতেই বিষয়টি মেয়র পারিষদ এবং কাউন্সিলরদের নজরে এসেছে। পুর নথি থেকেই জানা গিয়েছে, ক্যাগের রেসিডেন্ট অডিট শাখা পুর প্রশাসনকে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চেয়েছে, ওই প্রকল্পের টাকা কোথায় এবং কী ভাবে খরচ হয়েছে, তা তাদের জানানো হোক। প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না পারলেও একাধিক মেয়র পারিষদ মনে করছেন, এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। কাউন্সিলরদের জানানো হোক, ওই টাকা কী ভাবে খরচ করা হল।

পুরসভার এক আমলা জানান, প্রতি বছর পুরসভার আয়-ব্যয়ের হিসেব সংবলিত একটি বড় রিপোর্ট বেরোয়। তার নাম ‘অ্যানুয়াল ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট’। পুর প্রশাসনের দু’এক জন কর্তা ছাড়া বিশেষ কারও কাছে দেওয়া হয় না সেই রিপোর্ট।

ওই রিপোর্টে ২০১৪-’১৫ সালের হিসেব দেওয়া হয়েছে। তাতেই দেখা গিয়েছে, এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন স্কিমের টাকা আসে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প থেকে। তা দেখেই ক্যাগের রেসিডেন্ট অফিস পুর প্রশাসনের কাছে হিসেব চেয়ে পাঠায়। ওই আধিকারিকের অবশ্য দাবি, ওই টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আসে বলে ভুল করে লেখা হয়েছে। আসলে তা দেয় রাজ্য।

ক্যাগ সূত্রের খবর, ওটা যদি অন্য প্রকল্পের টাকা হয়, তা হলে হিসেব দিতে আপত্তি কেন? ক্যাগ জানিয়েছে, খরচের হিসেব দেওয়া তো দূর অস্ত্, গত এক বছর ধরে পরপর চিঠি পাঠিয়েও কোনও জবাব মেলেনি। কিন্তু কেন?

সরাসরি কোনও জবাব দেননি পুরসভার কোনও আধিকারিক। তবে এক প্রকল্পের টাকা অন্য কাজেও ব্যয় হয়ে থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা। মাসখানেক আগে পুর প্রশাসনের কাছে সর্বশেষ চিঠিটি পাঠিয়েছে ক্যাগের রেসিডেন্ট অডিট শাখা। কিন্তু কোনও জবাব না আসায় অডিটের কাজও শুরু করতে পারেনি ক্যাগ।

ক্যাগের চিঠিতে পুরসভার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, সরকারের কোন নির্দেশনামায় ওই টাকা এসেছে? সেই নির্দেশনামার কপি তাদের পাঠানো হোক। কী ভাবে টাকা এসেছে, ওই টাকায় কর্মসংস্থানের কোন কাজ করা হয়েছে, তাতে কর্মসংস্থান কত জনের হয়েছে, সংরক্ষণের নীতি মানা থেকে শুরু করে নির্দেশনামার গাইডলাইন মেনে সব কাজ করা হয়েছে কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। যদিও এ সব প্রশ্নের কোনও জবাব এখনও মেলেনি বলে ক্যাগ সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন