রবীন্দ্র সরোবরে চলবে কি পরিবেশবান্ধব গাড়ি, বিতর্ক

রবীন্দ্র সরোবরের মতো একটি জাতীয় সরোবরে টয় ট্রেন কেন চলবে, তা নিয়ে অনেক দিন আগেই আপত্তি জানিয়েছিলেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ। পরিকাঠামোজনিত কিছু অসুবিধাও ছিল।

Advertisement

কৌশিক ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৯ ০১:২২
Share:

রবীন্দ্র সরোবরের এই এলাকাতেই ব্যাটারিচালিত গাড়ি চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নিজস্ব চিত্র

রেললাইন পেতে রবীন্দ্র সরোবরে টয় ট্রেন প্রকল্প বাতিল হলেও ব্যাটারিচালিত পরিবেশবান্ধব গাড়ি চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। কেএমডিএ-র প্রস্তাবিত ওই প্রকল্প ঘিরে নতুন করে দেখা দিয়েছে বিতর্ক।

Advertisement

রবীন্দ্র সরোবরের মতো একটি জাতীয় সরোবরে টয় ট্রেন কেন চলবে, তা নিয়ে অনেক দিন আগেই আপত্তি জানিয়েছিলেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ। পরিকাঠামোজনিত কিছু অসুবিধাও ছিল। তার পরিবর্তে টয় ট্রেনের আদলে পরিবেশবান্ধব গাড়ি এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ কতটা দূষণমুক্ত রাখবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মী ও প্রার্তভ্রমণকারীদের একাংশ। ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত করার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করার কথাও ভেবেছেন।

কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ জানান, পরিবেশ এবং পরিকাঠামোগত কারণেই রবীন্দ্র সরোবরে রেললাইন পেতে ডিজেলচালিত টয় ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। প্রযুক্তিগত অসুবিধার কারণে বৈদ্যুতিক ট্রেনও চালানো যাবে না। সেই কারণেই এলাকা ঘুরে দেখা এবং শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য বিকল্প হিসেবে ব্যাটারিচালিত গাড়ির কথা ভাবা হয়েছে। তার জন্য অর্থও বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু লোকসভা নির্বাচন চলার ফলে আপাতত সব প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে।

Advertisement

ব্যাটারিচালিত গাড়ি ব্যবহারে সমস্যা কোথায়?

প্রাতর্ভ্রমণকারীদের একাংশের অভিযোগ, ব্যাটারিচালিত গাড়ি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার ফলে তাঁদের অসুবিধায় পড়তে হবে। সরোবরের ভিতরের যে রাস্তায় ওই গাড়ি চলবে, সেখানে সকাল এবং বিকেলে প্রাতর্ভ্রমণকারীরা হাঁটেন। তাঁদের মতে, এই গাড়ি চললে সব সময়েই রাস্তার একাংশ আটকে থাকবে। রবীন্দ্র সরোবর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হাইকোর্ট মনোনীত ‘মনিটরিং কমিটি’-র সদস্য সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ‘‘পরিবেশগত কিছু কারণ মাথায় রেখেই এখানে গাড়ি চালানো বন্ধ করা দরকার। ব্যাটারিচালিত গাড়ি চালানো শুরু হলে অনেকেই এই গাড়ি চড়ার আকর্ষণে আসবেন। ফলে, লোকসংখ্যা বাড়বে। চত্বরটা নোংরা হবে। এলাকার নির্জন পরিবেশটাও নষ্ট হবে। গাড়ি চললে সরোবরের রাস্তায় হাঁটাচলার অসুবিধা তো রয়েছেই। তা ছাড়া, সরোবরের মধ্যে এমন কোনও দর্শনীয় বস্তু নেই, যা দেখার জন্য গাড়ি প্রয়োজন। এই বিষয়ে ‘মনিটরিং কমিটি’র সদস্যদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা প্রয়োজন।’’

কর্তৃপক্ষ জানান, প্রাতর্ভ্রমণকারীদের আপত্তি ওঠায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সকাল এবং বিকেলের একটি নির্দিষ্ট সময় ছেড়ে দিলে দুপুরে কত জন সরোবরে বেড়াতে আসবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তা ছাড়া, বহিরাগত কোনও সংস্থাকে এই গাড়ি চালাতে দিলে, প্রকল্পটি লাভজনক না হলে ক’দিন পরেই তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প টিকিটের বিনিময়ে চালাবে কি না, তা নিয়েও সিদ্ধান্ত হয়নি। রবীন্দ্র সরোবরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সুধীন নন্দী বলেন, ‘‘এ বিষয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়।’’

কেএমডিএ সূত্রের খবর, ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত রবীন্দ্র সরোবরে টয় ট্রেন চালাত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এক বার টয় ট্রেনের একটি বগিতে আগুন লাগার পরে সেই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে যে রাস্তা দিয়ে ট্রেন চলাচল করত, তার একাংশ জুড়েই তৈরি হয়েছে লেক গার্ডেন্স উড়ালপুলের স্তম্ভ। এখানে টয় ট্রেন প্রকল্প চালু করা নিয়ে কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ প্রথমে ভাবনাচিন্তা করলেও পূর্ত দফতরের তৈরি উড়ালপুলের থাম ভাঙা সম্ভব নয়। লাইন পাতার জন্য বিকল্প কোনও রুটও নেই বলে কেএমডিএ সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন