নিয়ম অনুযায়ী মতো পাঁচ বছর অন্তর বন্দিশালার চিকিৎসক বদল করার কথা। কিন্তু অধিকাংশ জেলেই সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। তার জেরে বা়ড়ছে সমস্যা! সাম্প্রতিক একটি ঘটনা সেই বিতর্ক আরও উস্কে দিচ্ছে।
আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে কর্তব্যরত এক চিকিৎসককে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, জেলে ঢোকার সময় অমিতাভ চৌধুরী নামে ওই ডাক্তারের ব্যাগে লক্ষাধিক টাকা, অনেক মোবাইল ফোন, গাঁজা, ব্লেড, দেশলাই পাওয়া যায়। সেগুলো বন্দিদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ওই ঘটনার পরে কারা দফতরের অন্দরে প্রশ্ন উঠছে, বিভিন্ন জেলে যে-সব চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছেন, তাঁদের বদলি করা হচ্ছে না কেন?
কারা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন বন্দিশালায় সরকারি চিকিৎসক নিয়োগ করে স্বাস্থ্য দফতর। কারা দফতরের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই স্বাস্থ্য ভবন থেকে চিকিৎসকদের নিয়োগ এবং বদলির যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট সময়ের পরেও চিকিৎসকদের সময়মতো বদলি হচ্ছে না। ২০১৫ সালে হায়দার আজিজ সফি কারামন্ত্রী থাকাকালীন স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং কারা-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, যে-সব চিকিৎসক পাঁচ বছর ধরে একই জেলে কাজ করছেন, তাঁদের বদলি করা হবে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত অধিকাংশ জায়গায় কার্যকর হচ্ছে না।
কারা দফতরের এক কর্তা জানান, এক জন মেডিক্যাল অফিসার টানা ১৫ বছর আলিপুর জেলে কাজ করছেন। এটা কোনও ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন বন্দিশালায় এমন অনেক চিকিৎসক, মেডিক্যাল অফিসার আছেন, যাঁদের নিয়মমাফিক বদলি হয় না। কেন হয় না, সেই প্রশ্নের সঙ্গেই কারাকর্মীদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, ধৃত অমিতাভবাবু প্রায়ই রাতের ডিউটি নিতেন কী ভাবে?
কারা দফতরের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে থাকা সরকারি চিকিৎসকদের ডেপুটেশনে পাঠানো হয় সংশোধনাগারে। তাঁদের বদলির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হয় স্বাস্থ্য ভবন থেকে। এর সঙ্গে কারা দফতরের কোনও সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুন: রাতের সল্টলেকে মেয়েরা হাঁটবে না!
ডাক্তার বদলির সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই বলে কারা দফতর দাবি করলেও রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী তা মানতে রাজি নন। তিনি জানাচ্ছেন, কারা দফতরের সঙ্গে কথা বলেই সংশোধনাগারে চিকিৎসক নিয়োগ এবং বদলি সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করা হয়। অনেক সময় নির্দিষ্ট সময়ের পরেও চিকিৎসক বদলি করা হয়নি। পর্যাপ্ত চিকিৎসক মেলে না বলেই বদলি ও নতুন নিয়োগ নিয়ে সঙ্কটে পড়তে হয় স্বাস্থ্য দফতরকে।