হোটেল ধ্বংস, বৈঠকে স্থপতিরা

যে বাড়ি ঘিরে এই বিতর্ক, সেটি লিটল রাসেল স্ট্রিটের ‘ওল্ড কেনিলওয়ার্থ হোটেল’। সাবেক ঔপনিবেশিক বাংলো ধাঁচের ধবধবে বাড়িটিতে শাবল-গাঁইতির ঘায়ে অনেকেই অশনি সঙ্কেত দেখছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০২:৩২
Share:

ভাঙা হচ্ছে কেনিলওয়ার্থ হোটেল। সোমবার, লিটল রাসেল স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র

কয়েক বছর আগেই বালিগঞ্জে এক সাবেক রাজপরিবারের বাড়ি ‘ভেঙে’ ফেলার আবদারে চাপের মুখে পড়েছিলেন পুরসভার হেরিটেজ কমিটির সদস্যেরা। এ বার একদা ‘সংরক্ষণযোগ্য’ বলে চিহ্নিত একটি সাবেক হোটেল ভাঙার ঘটনায় পুর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল।

Advertisement

ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাড়ি সরানোর চাপে জ্ঞানী-গুণিজনেদের কেউ কেউ যে পুরসভার হেরিটেজ কমিটি থেকে সরে গিয়েছেন, এমন অভিযোগ বারবারই উঠেছে। এ বার পুর অনুমোদনের ভিত্তিতেই ঐতিহ্যশালী তকমাধারী একটি হোটেল ভাঙার ঘটনায় পুরসভার হেরিটেজ তালিকায় গোলমেলে রদবদলের অভিযোগ উঠল। তবে কেন এমনটা হল, তার সদুত্তর মেলেনি পুরসভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

যে বাড়ি ঘিরে এই বিতর্ক, সেটি লিটল রাসেল স্ট্রিটের ‘ওল্ড কেনিলওয়ার্থ হোটেল’। সাবেক ঔপনিবেশিক বাংলো ধাঁচের ধবধবে বাড়িটিতে শাবল-গাঁইতির ঘায়ে অনেকেই অশনি সঙ্কেত দেখছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এ বার স্থপতিদের একটি মঞ্চ ‘কলকাতা আর্কিটেকচার ফাউন্ডেশন’ (ক্যাফ) এবং স্থপতিদের নিয়ামক সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচার’ এ বার পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছে।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, ২০০৯ সালেও পুর তালিকায় কেনিলওয়ার্থ ছিল ‘গ্রেড টু এ’ বাড়ি। যা কখনওই কারও ভাঙার অধিকার নেই। কোন জাদুবলে তা ‘গ্রেড থ্রি’ হয়ে গিয়েছে।
ফলে, বাড়িটি ভাঙাও হচ্ছে মহা সমারোহে। একটি নামী নির্মাণ সংস্থা সেখানে নির্মাণকাজ করবে। একদা পুরসভার হেরিটেজ কমিটির সদস্য, সংরক্ষণ স্থপতি (কনজারভেশন আর্কিটেক্ট) অঞ্জন মিত্রের কথায়, ‘‘ধ্বংসলীলা চলছে। কার স্বার্থে এমন হল, সেটা সবারই জানা জরুরি।’’

ঐতিহ্য তথা স্থাপত্যপ্রেমী বলে পরিচিত লেখক অমিত চৌধুরী বলছেন, ‘‘শহরটাকে তো চেনা যায় তার স্থাপত্য দিয়ে। সব কিছু ভেঙেচুরে শুধু আখাম্বা বহুতল তৈরি হলে তো কলকাতাটা আর কলকাতাই থাকবে না।’’ এমনিতেই কলকাতায় ঐতিহ্যশালী বা হেরিটেজ তকমাধারী বাড়ির তালিকা অসম্পূর্ণ। ফলে, অনেক অপূর্ব সুন্দর বাড়িই নিয়মিত প্রোমোটার-চক্রের খপ্পরে পড়ছে। সেখানে সাবেক হোটেলের এমন করুণ পরিণতি উদ্বেগের কারণ বলেই মনে করছেন কোনও কোনও স্থপতি। কলকাতার দেওয়াল লিখনটা পাল্টাতেই পুরসভার সঙ্গে বসতে চান ক্যাফ-এর অন্যতম সদস্য, স্থপতি অবিন চৌধুরী। তাঁর মতে, ‘‘শুধু কেনিলওয়ার্থ-কাণ্ডের খুঁটিনাটি জানাই নয়, পরে এমন কোনও বাড়ি সারাই বা ভাঙাভাঙি হলে অতীতের ছাপ বজায় রেখে করতে হবে। এ নিয়েই আমরা আলোচনায় বসছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন