আপন দিদি তো! তার দেহ থেকে গন্ধ পাব কেন?

সোমবার পাভলভ মানসিক হাসপাতালে মেডিক্যাল বোর্ডের সঙ্গে পার্থর প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা হয়। হাসপাতাল সূত্রে পাওয়া সেই কথাবার্তার কিছু অংশ।মা একেবারে সাদাসিধে মহিলা ছিলেন। খুব শিক্ষিতা। বাংলা সিনেমা দেখতে ভালবাসতেন। আমার ঠাম্মা আর কাকারা একেবারে ভাল লোক ছিল না। ঠাম্মাই তুকতাক করে আমার মা-কে অসুস্থ করে মেরে ফেলেছে। আমাদের গোটা পরিবারে ওঁর কালো ছায়া পড়ে রয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫ ০৩:২৬
Share:

পাভলভ মানসিক হাসপাতালে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।

আপনাকে আজ আগের থেকে অনেক ভাল লাগছে। কিছু দরকার লাগলে বলবেন।

Advertisement

শুনলাম বাবা একটা ‘লাস্ট নোট’ লিখে গিয়েছেন। তাতে আমার সম্পর্কে অনেক ভাল-ভাল কথা লিখেছেন। সেটা দেখতে পেলে খুব ভাল হতো।

Advertisement

আমরা পুলিশকে বলব, যদি ওঁরা আপনাকে দেখানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। তবে আপনাকে কিন্তু আরও কয়েকটা ওষুধ খেতে হবে। আপনার অ্যানিমিয়া রয়েছে। পেটটাও ভাল ভাবে পরিষ্কার হচ্ছে না। ওষুধ খাবেন তো?

খাব। আমাকে রবীন্দ্রনাথের কিছু বই দিয়েছে। আরও কয়েকটা অন্য বই দিলে ভাল হয়। বেঙ্গলি আমি ভেঙে ভেঙে পড়তে পারি। ক্লাস নাইন-টেনে পড়ার সময় মা শিখিয়েছিলেন।

আপনার মা কি খুব কড়া ছিলেন? আপনি ভয় পেতেন?

মা একেবারে সাদাসিধে মহিলা ছিলেন। খুব শিক্ষিতা। বাংলা সিনেমা দেখতে ভালবাসতেন। আমার ঠাম্মা আর কাকারা একেবারে ভাল লোক ছিল না। ঠাম্মাই তুকতাক করে আমার মা-কে অসুস্থ করে মেরে ফেলেছে। আমাদের গোটা পরিবারে ওঁর কালো ছায়া পড়ে রয়েছে। কেউ স্বাভাবিক হতে পারেনি।

আপনার দিদি কী ভাবে মারা গিয়েছিলেন?

আধ্যাত্মিক চর্চা শুরু করেছিল দিদি। সেই জগৎ ওকে এতটাই টেনেছিল যে ও বলত, এর শেষ দেখে ছাড়বে। সেই শেষ দেখার জন্য জীবনের সব আকর্ষণ নাকি ত্যাগ করতে হয়। এর মধ্যে খাওয়াদাওয়া, বিনোদন সবই পড়ে। অন্য বিনোদন তো অনেক আগেই ছেড়েছিল, শেষ পর্যন্ত কুকুর দু’টো মারা যাওয়ার পর খাওয়াও ছেড়ে দিল দিদি। শুধু জল খেত। ছ’মাস ওই ভাবে ছিল।

আপনি বাধা দেননি?

কেন বাধা দেব? কে জীবন কী ভাবে কাটাবে তা স্থির করার অধিকার সকলেরই আছে। দিদি আধ্যাত্মিক পথে যেতে চেয়েছিল। উপোস করাটা তার একটা অংশ।

আপনার বাবা এটা জানতেন? তিনি বারণ করেননি?

বাবা অন্য ঘরে থাকতেন। আমি আর দিদি একটা ঘরে থাকতাম। বাবা আমাদের ঘরে আসতেন না। ফলে বাবা অনেক দিন পর্যন্ত জানতে পারেননি। আমি দিদির মৃতদেহকে খাবার দিতাম। এক দিন বাবা সব জেনে যান। তখন তিনি ওই খাবার ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন।

আপনি দিদির মৃতদেহ নিয়ে এক ঘরে থাকতেন কী করে? গন্ধ বার হতো না?

না। আমার আপন দিদি তো! তার দেহ থেকে বার হওয়া গন্ধ পাব কেন? (এর পরেই আচমকা ‘দিদি, দিদি’ বলে চিৎকার করে কিছু ক্ষণের জন্য গুম হয়ে থাকেন পার্থ)

আপনার বাবা কি দিদির মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে মারা গিয়েছেন?

দিদি মারা গিয়েছেন জেনে বাবা অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। এক দিন কাকার সঙ্গে কফিশপে গিয়ে সম্পত্তি নিয়ে কী সব কথা বলে এলেন। তার পর থেকেই মনমরা হয়ে থাকতেন। এক দিন বাথরুম থেকে পোড়া গন্ধ পেলাম। নীচ থেকে নিরাপত্তাকর্মীদের ডেকে আনলাম। ওরাই ধাক্কা মেরে বাথরুমের দরজা ভেঙে বাবার দেহ বার করল।

সম্পত্তির ব্যাপারে আপনার কোনও পরিকল্পনা আছে?

সম্পত্তি আমার লাগবে না। কাল আমি আপনাদের বলেছিলাম, দিদির যে কয়েক লক্ষ টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ডে আছে সেটা পেলে ভাল হয়। আজ বলছি, ওই টাকার কিছুই আমি চাই না। আমরা আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী। একটি মঠের সঙ্গে যুক্ত। ওদের একটা সোসাইটি আছে, যারা হিন্দু ও খ্রিষ্ট্রান মতের মিলনের কথা বলে। আমি মাদার হাউসের সিস্টারদের সঙ্গে কথা বলতে চাই।

পুলিশ আপনাকে জেরা করতে চায়।

একমাত্র মাদার হাউসের সিস্টারদের সামনেই আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।

আপনাদের পরিবারে বেশ কিছু সদস্যেরই কি মানসিক সমস্যা ছিল?

(এই প্রশ্ন শুনে বেশ রেগে যান পার্থ। আর তাঁকে দিয়ে কথা বলানো যায়নি।)

তথ্য: সোমা মুখোপাধ্যায় ও পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন