Coronavirus

ব্যবসা লাটে, নিউ মার্কেট চত্বরে বন্ধ বহু দোকান

শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা চত্বরেই রয়েছে নিউ মার্কেট। ওই বাজারের আশপাশে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি শপিং মল, রেস্তরাঁ এবং অসংখ্য দোকান।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২০ ০৪:৪৩
Share:

সুনসান: আতঙ্কে দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন বহু ব্যবসায়ী। আসছেন না ক্রেতারাও। রোজকার ব্যস্ত নিউ মার্কেট চত্বর প্রায় ফাঁকা। শনিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

প্রতিদিন নিউ মার্কেট চত্বর ঘুরে অন্তত ৩০০ কাপ চা বিক্রি করেন মহম্মদ মাহিব। শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার মুখে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র কুড়ি কাপ চা বিক্রি হয়েছে। এখন কয়েক দিন আর আসব না।’’

Advertisement

মাহিবের মতো একই অবস্থা আরও পাঁচ-ছ’জন চা বিক্রেতার। প্রতিদিন দুপুরে তাঁরা চলে আসেন নিউ মার্কেট চত্বরে। রাত পর্যন্ত বিক্রি করেন লাল চা ও লেবু চা। করোনা-আতঙ্কে শহরের এই বাণিজ্য কেন্দ্রে এ দিন সকাল থেকেই একের পর এক দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসায়িক সংগঠনগুলি নোটিস দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, আগামী সোমবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সমস্ত দোকান। এই পরিস্থিতিতে কার্যত জনমানবশূন্য নিউ মার্কেট চত্বরে চা বেচতে আসার চেয়ে ঘরে থাকাই শ্রেয় বলে মনে করছেন মাহিবেরা।

শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা চত্বরেই রয়েছে নিউ মার্কেট। ওই বাজারের আশপাশে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি শপিং মল, রেস্তরাঁ এবং অসংখ্য দোকান। ‘জয়েন্ট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর অধীনে রয়েছে নিউ মার্কেট-সহ আশপাশের ১৬টি ব্যবসায়িক সংগঠন। ছোট-বড় মিলিয়ে দোকানের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। প্রতিদিন কয়েক লক্ষ ক্রেতা ওই এলাকায় ভিড় করেন। ‘জয়েন্ট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক রাজীব সিংহ বললেন, ‘‘প্রতিদিন প্রচুর ক্রেতা এখানে আসেন। কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, আর কে নয়, তা বোঝা অসম্ভব। আর দোকান খোলা থাকলে ক্রেতারা তো আসবেনই। তাই আমরা ফেডারেশন থেকে তিন দিন সব বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

Advertisement

তবে আনাজ, মাছ-মাংস, মুদিখানা ও ওষুধের দোকানগুলি খোলা থাকবে বলে জানান রাজীববাবু। শনিবার সকাল থেকেই নিউ মার্কেটের পুরনো ভবনের সমস্ত দোকানের ঝাঁপ বন্ধ ছিল। আশপাশের যে ক’টি দোকান এ দিন খুলেছিল, তা-ও বিকেল-সন্ধ্যা হতেই একের পর এক বন্ধ হতে শুরু করে। এমনকি, ফুটপাতে বসা দোকানিদেরও মালপত্র বস্তাবন্দি করতে দেখা যায়। নিউ মার্কেট চত্বরের ফুটপাতে ওড়না বিক্রি করেন চাঁদবাবু শর্মা। তাঁর কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম, বিকেলের দিকে কিছু লোক হয়তো আসবেন। কিন্তু কোনও বিক্রিই নেই। সোমবার পর্যন্ত আর আসব না।’’

নিউ মার্কেট থেকে শাড়ি নিয়ে গিয়ে হাওড়ার রানিহাটিতে বিক্রি করেন শেখ বাবলু। বিক্রি না হওয়া শাড়ি বড় ব্যাগে ভর্তি করে এ দিন সন্ধ্যায় ফেরত দিতে এসেছিলেন তিনি। দোকান বন্ধ দেখে ফোন করলেন পাইকারি ব্যবসায়ীকে। তার পরে ফের বাস ধরতে যাওয়ার পথে বাবলু বললেন, ‘‘করোনার জেরে এখন আর পাড়ায় ঘুরে শাড়ি বিক্রি করতে পারছি না। তাই ফেরত দিতে এসেছিলাম। কিন্তু জানতাম না যে, সকাল থেকেই মার্কেট বন্ধ।’’

বাবলুর মতো অনেক ক্রেতাও জানতেন না, এ দিন সকাল থেকেই ঝাঁপ বন্ধ থাকবে নিউ মার্কেটের। অনেকেই এ দিন বিকেলে চলে এসেছিলেন ধর্মতলায়। তবে ফাঁকা নিউ মার্কেট চত্বরে কিছু ক্ষণ ইতিউতি ঘুরে সকলেই বাড়ি ফিরে যান।

ডানলপের বাসিন্দা তানিয়া চক্রবর্তীর মতো অনেকে আবার জনহীন নিউ মার্কেটের ছবি বন্দি করেছেন মোবাইলে। ‘এসএস হগ মার্কেট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর দুই যুগ্ম সম্পাদক আশরাফ আলি ও কুমারকৃষ্ণ বসুরায়ের কথায়, ‘‘করোনা সংক্রমণ রুখতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে নাগরিকদেরও সহযোগিতা করতে হবে। ব্যবসা পরেও করা যাবে। মানুষের জীবনটা আগে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন