প্রতীকী ছবি।
বৃদ্ধের গায়ে জ্বর ছিল গত কয়েক দিন ধরে। সঙ্গে কাশি। করোনা-আতঙ্কের এই পরিস্থিতিতে বাড়ির লোক ভেবেছিলেন, হাসপাতালে দেখিয়ে নেওয়াই শ্রেয়। সেই মতো রবিবার সকালে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসা তো দূর, মাঝপথেই বৃদ্ধকে নামিয়ে পালিয়ে গেল সেই অ্যাম্বুল্যান্স! অন্য অ্যাম্বুল্যান্স খুঁজে বৃদ্ধকে হাসপাতালে পাঠাতে হিমশিম খেতে হল পুলিশকেও। শেষে তারা নিজেদের গাড়িতে বৃদ্ধকে হাসপাতালে পাঠাল।
পোস্তা থানা এলাকার রবীন্দ্র সরণির এই ঘটনায় প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ওই বৃদ্ধকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলছেন, ‘‘জ্বর মানেই করোনা নয়, এটা আমরা বারবার বলছি। এই সময়ে আবহাওয়া বদলের জন্য এমনিই জ্বর-কাশি হতে পারে। জন-সচেতনতার জন্য জ্বর-কাশিকে লক্ষণ হিসেবে বলা হচ্ছে। কিন্তু আদতে সেই জ্বর বা কাশি হলেই কেউ করোনা আক্রান্ত কি না, সেটা তো চিকিৎসকেরা ঠিক করবেন। এই পরিস্থিতিতে কোনও কিছু ধরে নেওয়া অপরাধ।’’ ঘটনা প্রসঙ্গে পোস্তা থানার ওসি বলেন, ‘‘কারও সামান্য জ্বর-কাশি হলেই যদি ধরে নেওয়া হয় তিনি করোনা আক্রান্ত, তা হলে সেই প্রবণতা মারাত্মক। অনেকেরই ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে করোনা নিয়ে। বৃদ্ধকে আমরা আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’’ আর বৃদ্ধের ছেলের কথায়, ‘‘বাবার জ্বর-কাশি রয়েছে শুনে কিছুতেই ওই অ্যাম্বুল্যান্স-চালক যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। অনেক অনুরোধের পরে জানান, আমাদের গিরিশ পার্কের বাড়ি থেকে বড়জোর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারেন। এর জন্য ১৫০০ টাকা ভাড়া চান।’’ ওই যুবকের আরও দাবি, ‘‘নামিয়ে দিয়ে যাওয়ার সময়ে চালক এ-ও বলেন, করোনা-রোগী নিয়ে অত ঘোরা যাবে না।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, উত্তর কলকাতার রাজেন্দ্র মল্লিক স্ট্রিটে থাকেন বছর পঁয়ষট্টির ওই বৃদ্ধ। তাঁর এক ছেলে রাজ্যের বাইরে থাকেন। আর এক ছেলে এ দিন স্থানীয় সূত্রে পাওয়া একটি নম্বরে যোগাযোগ করে অ্যাম্বুল্যান্স ডাকেন। বৃদ্ধকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যায়। সেখান থেকে তাঁকে আইডি হাসপাতালে যেতে বলা হয়। এর পরেই অ্যাম্বুল্যান্স-চালক বৃদ্ধকে রবীন্দ্র সরণির একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যান। কলকাতা মেডিক্যালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালে করোনা সংক্রমণের চিকিৎসার ব্যবস্থা হলেও আইডি-র শয্যা পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে তা ব্যবহার হওয়ার কথা। সেই কারণেই ওই রোগীকে আইডি-তে যেতে বলা হয়ে থাকতে পারে।’’
বৃদ্ধের ছেলে বলেন, ‘‘রবীন্দ্র সরণির ওই হাসপাতাল বলে দেয়, এই রোগের ক্ষেত্রে আইডি-তেই যেতে হবে। একটা অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে দিতে বলা হলে তারা বলে, নিজেদেরই করতে হবে।’’
এর পরে প্রায় দু’ঘণ্টা রাস্তায় পড়ে থাকেন বৃদ্ধ। স্থানীয় ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিজয় ওঝা বলেন, ‘‘খবর পেয়ে আমি যাই। কিন্তু বহু ফোন করেও অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করতে পারিনি।’’
পরে কাউন্সিলরই খবর দেন থানায়। ওসি-সহ পুলিশকর্মীরা গিয়েও অ্যাম্বুল্যান্স খুঁজতে নাস্তানাবুদ হন। অবশেষে পুলিশের গাড়িতে বৃদ্ধকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পুলিশের দাবি, অভিযুক্ত চালকের খোঁজ শুরু হয়েছে। যে নম্বরে ফোন করে অ্যাম্বুল্যান্সটি ডেকেছিলেন বৃদ্ধের ছেলে, সেই নম্বরে পরে যোগাযোগ করা যায়নি। সেটি বন্ধ ছিল।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)