Coronavirus in Kolkata

জ্বরে অচেতন বৃ্দ্ধ পড়ে ফুটপাতে, পুলিশের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দর্শক বাসিন্দারা

কোভিড আতঙ্ক নিয়ে শহরে একের পর এক অমানবিক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২০ ১৬:১৯
Share:

এই বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁকে ধরতে রাজি নন কেউ। —নিজস্ব চিত্র।

শ্যামবাজার ট্রাম ডিপোর উল্টো দিকের ফুটপাত। সারি সারি হকারদের স্টল ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তার মধ্যেই একটি স্টলের সামনের তক্তপোষে চিৎ হয়ে শুয়ে এক বৃদ্ধ। পরনে প্যান্ট-শার্ট। প্রায় অচেতন। সামনে দিয়ে অনেকেই হেঁটে যাচ্ছেন। কেউ কেউ পুলিশ বা পুরসভাকে ফোন করছেন। কিন্তু বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁকে ধরতে রাজি নন কেউ।

Advertisement

কোভিড আতঙ্ক নিয়ে শহরে একের পর এক অমানবিক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। দু’দিন আগেই পাটুলিতে এক বৃদ্ধার মৃত্যুর পর প্রতিবেশী থেকে শুরু করে আত্মীয়েরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। বৃদ্ধা কোভিড আক্রান্ত ছিলেন না। কিন্তু তাঁর দুই ছেলে এবং পুত্রবধূ করোনা আক্রান্ত ছিলেন। তাই করোনার ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি সৎকার করতেও। শেষে পুলিশকে সৎকার করতে হয় ওই বৃদ্ধার।

আজও দেখা গেল, স্থানীয় বাসিন্দারা শুধু পুলিশে খবর দিয়েই দায় সেরেছেন। স্থানীয়দের দাবি, ওই বৃদ্ধের বাড়ি বাগবাজারে। পারিবারিক কোনও সমস্যার জন্য গত কয়েক মাস ধরেই বাস শ্যামবাজার ট্রাম ডিপোর উল্টো দিকে ফুটপাথে। স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘‘গত কাল বিকেল থেকে ওই বৃদ্ধকে দেখা যায় তক্তপোষের উপর শুয়ে থাকতে। বৃদ্ধ স্থানীয়দের জানান যে, তাঁর জ্বর এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক ছড়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: মেডিক্যালের হস্টেলে পড়ুয়াকে ধর্ষণে অভিযুক্ত চিকিৎসক

আরও পড়ুন: ফ্ল্যাট থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধ​

স্থানীয়দের একাংশ বুধবার সকাল থেকে শ্যামপুকুর থানা, পুরসভার স্বাস্থ্যদ ফতরে ফোন করা শুরু করেন। অন্য এক যুবক বলেন, ‘‘বেলা ৯টা নাগাদ পুলিশের একটি গাড়ি আসে। তাঁরা একটা অ্যাম্বুল্যান্সও নিয়ে আসে। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সে চালক-সহ পিপিই কিট পরা দু’জন থাকলেও তাঁরা বৃদ্ধকে তুলতে রাজি হননি। তাঁরা স্থানীয়দের বলেন বৃদ্ধকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে দিতে।” অন্য এক যুবকের কথায়, ‘‘আমাদের পিপিই কিট নেই। আমরা কোন সাহসে ধরব ওই বৃদ্ধকে।” তাঁর পাশে থাকা এক প্রৌঢ় পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ এসে দেখে গেল। অ্যাম্বুল্যান্স এল। তার পরেও তুলে নিয়ে গেল না।” ওই প্রৌঢ়ের দাবি, ‘‘পাবলিক মানে সাধারণ মানুষ কী করবে। আমরা ফোন করতে পারি। বাকিটা তো সরকারকে করতে হবে।”

এ ভাবেই সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে যায়। স্থানীয় কেউ সহযোগিতা না করায় ফিরে যায় অ্যাম্বুল্যান্স। ওইখানেই পড়ে থাকেন বৃদ্ধ। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা তো খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে গিয়েছি। স্থানীয় বাসিন্দারা সামান্য সহযোগিতা না করলে আমাদের পক্ষেও কাজ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমরা তাও স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে চেষ্টা করছি দ্রুত বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি করার।” এদিন বেলা তিনটে নাগাদ পুলিশ ফের অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসে। কোভিড সন্দেহভাজন বা কোভিড আক্রান্তদের জন্য নির্দিষ্ট ‘১০২’ অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই বৃদ্ধকে আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানেই তাঁকে ভর্তি করা হয় বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন