Coronavirus in Kolkata

কোভিড রোগীর ভর্তি ঘিরেও রমরমা দালাল-চক্রের

স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে দেখাচ্ছে, বাঙুর ও কলকাতা মেডিক্যালে শয্যা খালি রয়েছে।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ০৩:৪২
Share:

প্রতীকী ছবি।

এম আর বাঙুরই হোক বা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। যে কোনও একটির আইসিইউ-তে ভর্তি করতে হলে লাগবে পাঁচ হাজার টাকা। শুধু ‘কনফার্ম’ করতে হবে যে, রোগীকে ভর্তি করবেন। আর পুরো টাকাটা আগেই তুলে দিতে হবে হাতে।

Advertisement

সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে দালাল-চক্রের সক্রিয়তা নতুন কোনও খবর নয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতেও যে সেই দালালেরা সক্রিয়, এ বার সেই ছবিও সামনে চলে এল!

এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে শহরের কয়েক জন করোনা রোগীর পরিবারের। তেমনই একটি পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছিল এক দালালের মোবাইল নম্বর। ফোন করতেই জানা গেল, এম আর বাঙুর বা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে করোনা রোগী ভর্তি করিয়ে দেবেন তিনি। দাবি করলেন, তিনি এম আর বাঙুরেরই কর্মী। তবে কোন বিভাগে কাজ করেন, তা বলতে চাননি। শুধু জানালেন, পাঁচ হাজার টাকা দিলেই শয্যা মিলবে। বাঙুরে না-হলে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ— কোথাও একটা ভর্তি করিয়ে দেবেন।

Advertisement

একই অভিজ্ঞতা উল্টোডাঙার এক তরুণের। করোনায় আক্রান্ত বাবাকে একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সরকারি হাসপাতালে আনতে চেয়ে বার বার স্বাস্থ্য ভবনে ফোন করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁকে জানানো হয়, কোথাও শয্যা খালি নেই। ওই যুবক দেখেন,

স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে দেখাচ্ছে, বাঙুর ও কলকাতা মেডিক্যালে শয্যা খালি রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতর থেকে তাঁকে বার বারই জানানো হয়, শয্যা নেই।

এক দিকে বেসরকারি হাসপাতালের বিল বেড়ে চলেছে। অন্য দিকে, আইসিইউ-এ থাকা বাবাকে বাড়িতেও আনতে পারছিলেন না। তাই মরিয়া হয়ে তিনি ফোন করতে থাকেন বিভিন্ন জায়গায়। আর তখনই এক আত্মীয়ের মাধ্যমে কথা হয় এক দালালের সঙ্গে। তিনি জানান, এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেবেন। পাঁচ-ছ’হাজার টাকা লাগবে। উপায় না-দেখে ওই যুবক প্রথমে রাজি হয়ে যান। যদিও পরে স্বাস্থ্য দফতর থেকেই ফোন করে তাঁর বাবাকে অন্য এক বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে।

একই অভিজ্ঞতা যাদবপুরের শ্যামাপল্লির এক রোগীর ছেলের। ২৪ ঘণ্টা ধরে কোভিড আক্রান্ত বাবাকে ভর্তির জন্য ফোন করে গিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরে। কিন্তু কোনও সুরাহা না হওয়ায় তাঁর যখন দিশাহারা অবস্থা, তখনই তাঁর মোবাইলে ফোন করে এক ব্যক্তি জানান, বাবাকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গিয়ে ভর্তির সব ব্যবস্থা করে দেবেন।

স্বাস্থ্য দফতরে ফোন করে বাবাকে ভর্তি করতে পারছেন না, অথচ তাঁরই মোবাইলে ফোন করে বলা হচ্ছে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়ে যাবে! প্রথমে বুঝতে না-পারলেও পরে বুঝে যান, ওই ব্যক্তি দালাল। কিন্তু করোনা রোগীকে দালালের ভরসায় নিয়ে যাবেন না বলে জানিয়ে দেন তিনি। তখনই ফোন কেটে দেন সেই ব্যক্তি।

প্রশ্ন উঠেছে, স্বাস্থ্য দফতর থেকে হাসপাতালে বলে না-দিলে রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। তা হলে এই দালালেরা রোগী ভর্তি নিশ্চিত করছেন কী ভাবে? সরকারই বা কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?

রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম স্বীকার করেছেন এ ধরনের অভিযোগের কথা। তিনি বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন