Coronavirus

হাত ধুয়ে, ধুইয়ে দিশারী মনোরোগীরাই

পুরুষদের ওয়ার্ডেও সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টায় রয়েছেন হাসপাতালের আধিকারিকেরা।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২০ ০২:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

সাবান, জলের সম্পর্কটাই সচরাচর বোঝে না অপটু, আনাড়ি হাত। শিথিল স্নায়ুর স্পর্শে কখনও বা পিছলে যায় সাবানটা। গভীর অবসাদে হাতশুদ্ধির তরল বা সাবান জলে হাত কচলে ধুতেও ঘোর অনীহা অনেকেরই। এই দুর্বিপাকে অসহায় সেই হাতগুলোর পাশে হঠাৎই জুটে গিয়েছে শুশ্রূষার, আদরের কয়েকটি হাত।

Advertisement

এগিয়ে আসা সেই হাতের মানুষগুলোও কিন্তু আদতে সমাজ-বিচ্ছিন্ন। নিজেদের দুঃসময়ে ধরার মতো সাহচর্যের হাত সব সময়ে পাননি তাঁরা। তবু করোনা প্রতিরোধে অপেক্ষাকৃত অসুস্থ মানুষগুলির পাশে দাঁড়াতে দ্বিধা নেই তাঁদের। পাভলভ মানসিক হাসপাতালের ওয়ার্ডে আবাসিকদের বারবার হাত ধুইয়ে রোগের ছোঁয়াচ এড়ানোর যুদ্ধে তথাকথিত রোগিণীদের একাংশই এখন অবতীর্ণ হয়েছেন। হাসপাতালের হেড সিস্টারের (নার্সিং সুপার অর্চনা দাঁ) কথা শুনে ওয়ার্ডের ১০-১২ জন মহিলা তৎপর হয়ে এগিয়ে এসেছেন। দিনে চার বেলা খাওয়ার আগে বাকিদের হাত ধোয়ার তদারকি করছেন কিংবা সাবান মাখিয়ে অনেককে হাত ধুতে তাঁরাই সাহায্য করছেন। পুরুষদের ওয়ার্ডেও সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টায় রয়েছেন হাসপাতালের আধিকারিকেরা।

তথাকথিত শিক্ষিত মানুষদের ভিতরেই হাত ধোয়া বা পরিচ্ছন্নতার সচেতনতায় বিস্তর খামতি। সেখানে হাসপাতালের ওয়ার্ড, ছোটদের হোম থেকে সরকারি ভবঘুরে আবাসে জনে জনে হাত ধুইয়ে সচেতনতার প্রচার করতে হিমশিম খাচ্ছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর কথায়, “পরিচ্ছন্নতা বিধি সবাইকে বুঝিয়ে শেখানো কঠিন। মানসিক হাসপাতালের রোগিণীদের এগিয়ে আসাটা সেখানে অত্যন্ত ইতিবাচক।” পাভলভের মেডিক্যাল সুপার গণেশ প্রসাদ বলছেন, “সরকারি নির্দেশ মেনে সাবান, স্যানিটাইজ়ার, জলের জোগানে কার্পণ্য করছি না। তবে ওয়ার্ডের কয়েক জন আবাসিকের সক্রিয় সাহায্য ছাড়া কাজটা ঠিকঠাক সারা কঠিন হত।”

Advertisement

মানসিক হাসপাতালের নিরাময়ের অঙ্গ হিসেবে বাগান করা, হাতের কাজ, আঁকা, থিয়েটার শেখা থেকে ক্যান্টিন সামলানো, কেক তৈরি করার মতো নানা কাজে শরিক হন আবাসিকেরা। করোনা মোকাবিলার তালাবন্দিতে অনেক কিছুই থমকে। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে ওয়ার্ডের বাইরে চলাফেরাতেও ছেদ পড়ছে। ফলে আবাসিকদের অনেকেরই মন খারাপ। তবু কঠিন পরিস্থিতিতে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এসেছেন মৌসুমী, শাকিলা, সংহিতা, সর্বাণীদের মতো কয়েক জন। “গোড়ায় কারও কারও জড়তা ছিল। তবে কয়েক জন মেয়ের দেখাদেখি ক্রমশ অনেকেরই চোখ খুলছে।”— বলছেন মানসিক হাসপাতালের আবাসিকদের সাহচর্য দেওয়ার কাজে শরিক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আধিকারিক শুক্লা দাস বড়ুয়া।

দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো সঙ্কটে অনেকে দিশাহারা হয়ে পড়েন। আবার সঙ্কটেই অনেকে নিজের ভিতরের শক্তিও আবিষ্কার করছেন। করোনা-সঙ্কটের ছায়ায় মানসিক হাসপাতালের মেয়েদের ওয়ার্ড যেন তারই ছবি। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার রত্নাবলী রায়ের কথায়, “মানসিক হাসপাতালের আবাসিকদের অনেকেই সমাজের বোঝা ভাবেন। কিন্তু সহমর্মিতার অনুভূতিতে তাঁরাও পিছিয়ে নেই। দরকারে পাশের লোকটির দায়িত্ব নিতে পারেন, সেটা এখন বুঝিয়ে দিচ্ছেন ওঁরাও।” করোনা-সঙ্কটের আবহে পুরনো অভ্যাসের মতো কিছু ভুল ধারণাও এ ভাবেই খানখান হয়ে যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন