ফের রাস্তায় ধস, এ বার দায় পুরসভার

ক্রমশ পায়ের তলার মাটি সরছে মহানগরের! শহরের রাস্তায় একের পর এক ধস। ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। কখনও ধসের পিছনে থাকছে রাস্তার নীচে সাম্রাজ্য বিস্তার করা ইঁদুরেরা। কখনও বা গঙ্গাজল কিংবা অকেজো নিকাশি পাইপ ভাঙা। মূল কারণটা যা-ই হোক, কলকাতার মাটি যে ক্রমশ আলগা হচ্ছে তা নিয়ে একমত কলকাতা পুরসভার অনেক কর্তাই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১
Share:

ধসের পরে রাস্তা মেরামতির কাজ। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

ক্রমশ পায়ের তলার মাটি সরছে মহানগরের!

Advertisement

শহরের রাস্তায় একের পর এক ধস। ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। কখনও ধসের পিছনে থাকছে রাস্তার নীচে সাম্রাজ্য বিস্তার করা ইঁদুরেরা। কখনও বা গঙ্গাজল কিংবা অকেজো নিকাশি পাইপ ভাঙা। মূল কারণটা যা-ই হোক, কলকাতার মাটি যে ক্রমশ আলগা হচ্ছে তা নিয়ে একমত কলকাতা পুরসভার অনেক কর্তাই।

বুধবার সন্ধ্যায় উল্টোডাঙা স্টেশনের কাছে রাস্তা ধসে তৈরি হয়েছিল গর্ত। বৃহস্পতিবার সকালে রাস্তার একাংশ ধসে গেল শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনের কাছে। দু’জায়গাতেই যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে।

Advertisement

গত কয়েক মাসে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রাস্তা ধসেছে। এর জন্য মাটির তলায় মেঠো ইঁদুরের ডেরাকেই দায়ী করেন পুর-কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকালে সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের কাছে ধসের পিছনেও একই কারণের কথা জানিয়েছিলেন তাঁরা। বুধ ও বৃহস্পতিবারের ঘটনায় অবশ্য পুর-কর্তৃপক্ষ দায়ী করছেন অকেজো নিকাশি পাইপ ও গঙ্গাজলের পাইপ ভাঙাকেই। কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “পুরনো নিকাশির পাইপ ভেঙে যাওয়ায় রাস্তার মাটি বসে গিয়েছিল। তার ফলে এলাকায় ধস নামে।”

পুরসভার বক্তব্য, বৃহস্পতিবার শোভাবাজারের কাছে রাস্তা অবশ্য সে ভাবে ধসেনি। মাটির তলায় থাকা গঙ্গাজলের পাইপ ফেটে যাওয়ায় জল বেরোতে থাকে। তার চাপেই রাস্তায় ফাটল তৈরি হয়। সেই ফাটল বেড়ে রাস্তার একাংশ বসে গিয়েছিল।

পুরকর্তাদের একাংশ বলছেন, এই দু’জায়গায় রাস্তা ধসে যাওয়ার পিছনে পুরসভার গাফিলতিও কম নয়। বছর দশেক আগে উল্টোডাঙার ওই রাস্তাটি সারানো হয়েছিল। তখন পাইপের আশপাশে মাটি ঠিক মতো ভরাট করা হয়নি। সেই মাটি আলগা হয়ে ধস নেমেছিল। শোভাবাজারের ঘটনায় গঙ্গাজলের পুরনো পাইপ বন্ধ না করাতেই বিপত্তি তৈরি হয়েছে।

পুরসভার গাফিলতি যে রয়েছে, তা কার্যত স্বীকার করেছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (ইঞ্জিনিয়ারিং) অতীন ঘোষও। উল্টোডাঙায় মাটি ভরাট ঠিক মতো না হওয়া নিয়ে তিনি বলেন, “রাস্তা ভেঙে গেলে তা মেরামতি করার জন্য যতটা সময়ের প্রয়োজন, যানবাহনের চাপে অনেক সময়েই তা করা সম্ভব হয় না। ফলে, রাস্তার এই অংশ ফের বসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।” পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, “পুরসভার তত্‌কালীন কর্মীদের গাফিলতিতেই মাটি ঠিক মতো ভরাট করা হয়নি।”

বৃহস্পতিবারের ঘটনা নিয়ে অতীনবাবুর বক্তব্য, গঙ্গাজল সরবরাহের জন্য আগে বিভিন্ন জায়গায় পুরসভার পৃথক পাইপলাইন ছিল। পরবর্তীকালে এগুলির বেশির ভাগই বন্ধ করে দেওয়া হয়। দু’একটি পাইপলাইন রয়ে গিয়েছে। সেই গঙ্গাজলের লাইনের একটি ২৪ ইঞ্চি পাইপ ফেটেই এই বিপত্তি। “তবে এটা ধস নয়,” মন্তব্য মেয়র পারিষদের।

এ দিন সন্ধ্যায় শোভাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাটি কেটে বড় গর্ত করেছেন পুরকর্মীরা। তার ভিতরে নেমে ফাটা পাইপ খোঁজার কাজ চলছে। পাইপ ফেটে জল জমে গিয়েছে রাস্তার উপরেও। পুরসভা জানিয়েছে, উল্টোডাঙা ও শোভাবাজারে রাস্তায় ধস নামলেও তার ফলে নাগরিক পরিষেবায় বিশেষ প্রভাব পড়বে না। তবে উল্টোডাঙা ডিপো থেকে ট্রাম চলাচল আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। আজ, শুক্রবারের মধ্যেই দু’জায়গায় সারাইয়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

পুরসভার একাংশ অবশ্য বলছেন, উল্টোডাঙায় বড় বিপর্যয় কান ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে। কী রকম?

পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, ঘটনাস্থলের কয়েক ফুট দূরে রাস্তার তলায় একটি ইটের নিকাশি নালা (ব্রিক স্যুয়ার) রয়েছে। আছে পানীয় জলের পাইপও। সেগুলি ফেটে গেলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন