কাশীপুর

কারখানার ঝোপে বোমা ফেটে মৃত্যু

বিস্ফোরণে হাত, পা ও ঘাড়ের মাংস উঠে গিয়েছে। বুকে ও পেটে ঢুকে গিয়েছে বোমার স্‌প্লিন্টার। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি। সবাই ছুটে আসতেই বিড়বিড় করে তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘কাটারির কোপ মারতেই ফেটে গেল!’’ একটু থেমে বললেন, ‘‘জল।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:০১
Share:

বিস্ফোরণের পরে ঘটনাস্থলে বম্ব স্কোয়াডের তল্লাশি। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

বিস্ফোরণে হাত, পা ও ঘাড়ের মাংস উঠে গিয়েছে। বুকে ও পেটে ঢুকে গিয়েছে বোমার স্‌প্লিন্টার। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি। সবাই ছুটে আসতেই বিড়বিড় করে তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘কাটারির কোপ মারতেই ফেটে গেল!’’ একটু থেমে বললেন, ‘‘জল।’’ আর কোনও কথাই বলতে পারেননি। পাশে তখন দাঁড়িয়ে তাঁর ছেলে। হাতের আঙুল ফেটে গিয়েছে তাঁরও।

Advertisement

শুক্রবার দুপুরে এলাকার বাসিন্দারা আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন গুরুতর জখম ওই ব্যক্তিকে। সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। তাঁর ছেলে ও জামাইকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

কলকাতা পুলিশের ডিসি (উত্তর) শুভঙ্কর সিংহসরকার বলেন, ‘‘বোমা ফেটে এক জন মারা গিয়েছেন। আর কোনও বোমা পাওয়া যায়নি। কারা বোমা রেখেছিল, তার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ ওই ঘটনার পরে বম্ব স্কোয়াড পুলিশ-কুকুর নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। পরে পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে আর কোনও বোমা পাওয়া যায়নি।

Advertisement

ঘটনাস্থল কাশীপুরের একটি জাহাজ মেরামতির কারখানা। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ ওই কারখানার ভিতরে জমিতে কাজ করছিলেন সাফাইকর্মী সঞ্জীব দাস, তাঁর ছেলে বছর পনেরোর সাগর দাস ও জামাই অমৃত সরকার। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রবিশঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘বিকট শব্দ শুনেই ওই জমির পাশের পাঁচিলের ফাঁক দিয়ে দেখি জঙ্গলের মধ্যে থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছেন ওঁরা। এর মধ্যে সঞ্জীবের অবস্থা গুরুতর। এর পরে আমরাই পুলিশে খবর দিই।’’ অমৃত পরে বলেন, ‘‘আমরা সকলেই জঞ্জাল সাফাই করছিলাম। জঙ্গলের ঝোপের মধ্যে কাটারি দিয়ে কোপ মেরেছিলেন শ্বশুর। তার পরেই বিস্ফোরণ হয়।’’

গত বুধবারই লালবাজারে কলকাতা পুলিশের মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে শহরের অস্ত্র ভাণ্ডার খুঁজে বার করার কাজে আরও বেশি তৎপর হতে বলেছিলেন খোদ পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। কিন্তু তার পরেও সেই তৎপরতার নির্দেশ যে, খাতায়-কলমেই রয়ে গিয়েছে, তা ফের প্রমাণ হল বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত পুর-নির্বাচনের আগে থেকেই রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় কাশীপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি বোমা ও গুলি চলার ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময়ে দুষ্কৃতীরা বিভিন্ন জায়গায় বোমা লুকিয়ে রেখেছিল বলে এলাকাবাসীরা মনে করছেন। তাঁদের আশঙ্কা, এ রকম অনেক জায়গাতেই বোমা লুকিয়ে রাখা আছে। পুলিশ এ সব উদ্ধারে তৎপর না হলে এমন ঘটনা আরও ঘটবে। তেমনই এই জায়গায় বোমা লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।

পুলিশ সূত্রের খবর, মাস কয়েক আগেই ওই একই জায়গা থেকে কয়েকটি বোমা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু তার পরেও পুলি‌শ-কুকুর এনে এলাকায় কোনও রকম তল্লাশি করার বিষয়ে তৎপর হয়নি পুলিশ।

এক বেসরকারি সংস্থার ওই জমিতে মূলত জাহাজ মেরামতির কাজ হয়। ওই সংস্থার এক কর্তা সন্দীপ হালদার বলেন, ‘‘জায়গাটিতে প্রায় দশ পনেরো দিন ধরেই সাফাইয়ের কাজ চলছিল। সেখানে এ রকম ঘটনা কী করে ঘটল, বুঝতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন