বাড়ি ছাড়ো, ‘অত্যাচারী’ ছেলে-বৌকে বলল কোর্ট

আলিপুর আদালত সূত্রের খবর, বাঁশদ্রোণী এলাকার প্রভাস সাহা ও তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণাদেবী জুলাই মাসে ছেলে প্রশান্ত ও পুত্রবধূ পম্পার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করে মামলা করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৩৪
Share:

বৃদ্ধ দম্পতি প্রভাস সাহা ও কৃষ্ণা সাহা। —নিজস্ব চিত্র।

বৃদ্ধ বাবা-মায়ের উপরে নির্যাতনের অভিযোগে ছেলে ও পুত্রবধূকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন বিচারক। আলিপুর আদালত সূত্রের খবর, বাঁশদ্রোণী এলাকার প্রভাস সাহা ও তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণাদেবী জুলাই মাসে ছেলে প্রশান্ত ও পুত্রবধূ পম্পার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করে মামলা করেন। প্রসঙ্গত, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে দিন কয়েক আগেই অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে আদালতে ছেলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন অশক্ত, অসুস্থ মা। তার পরে ফের এমন ঘটনা।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গড়িয়া কামডহরি এলাকায় ওই বৃদ্ধ দম্পতির একটি ছোট মুদিখানার দোকান ও একটি ছোট বাড়ি রয়েছে। বছরখানেক আগে প্রভাসবাবুর ছেলে প্রশান্তর বিয়ে হয়। বৃদ্ধের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই প্রশান্ত ও তার স্ত্রী পম্পা নির্যাতন শুরু করে। মাঝেমধ্যেই তাঁদের বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হতো। কৃষ্ণাদেবীকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেওয়া হতো না। তাঁদের জন্য খাবারও বানানো হতো না। ওই দম্পতির আয়ের একমাত্র অবলম্বন ছিল দোকানটি।

প্রভাসবাবুর অভিযোগ, মাস ছয়েক আগে প্রশান্ত সেটিও দখল করে নেয়। তার পরেই পথে বসেন তাঁরা।

Advertisement

প্রশান্ত ও পম্পার বিরুদ্ধে প্রথমে বাঁশদ্রোণী থানায় অভিযোগ করেন প্রভাসবাবু ও কৃষ্ণাদেবী। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। এর পরেই আলিপুর আদালতের দ্বারস্থ হন ওই দম্পতি। প্রশান্ত ও পম্পাকে হাজির হওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক আগে সমন জারি করেছিল আদালত।

এ দিন শুনানিতে বিচারক পবিত্র সেন প্রশান্তর কাছে জানতে চান, ‘‘আপনার মা-বাবা আদালতে কেন এসেছেন?’’ প্রশান্ত বলেন, ‘‘সেটা ওঁরাই জানেন।’’ এর পরেই প্রভাসবাবু ও কৃষ্ণাদেবীর সব অভিযোগ শোনেন বিচারক। তিনি নির্দেশ দেন, প্রশান্ত ও পম্পাকে অবিলম্বে বাড়ি ছাড়তে হবে। বাঁশদ্রোণী থানার ওসিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্দেশ কার্যকর করতে হবে। বিচারকের আরও নির্দেশ, দোকানের দখল নিয়ে নেওয়ায় প্রশান্তকে মাসিক ২০ হাজার টাকা বাবা-মাকে খোরপোষ হিসেবে দিতে হবে। যদিও আদালতের নির্দেশ নিয়ে প্রশান্ত কোনও মন্তব্য করেনি।

ওই দম্পত্তির আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী বলেন, ‘‘জোর করে মুদিখানার দোকানটি দখল করা হয়েছে। কিন্তু সেটি রয়ে গিয়েছে প্রভাসবাবু ও কৃষ্ণাদেবীর নামে। তাঁদের আয়ের একমাত্র পথ ওই দোকান। সে কারণেই বিচারক ২০ হাজার টাকা খোরপোষের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ওই দোকান দখল মুক্ত করতে মামলা চলবে।’’

প্রতিবেশীদের কথায়, ওই দোকান থেকেই কষ্ট করে সংসার চালিয়েছেন সাহা দম্পতি। প্রশান্ত একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করে। বিয়ের আগে থেকেই সে বাবা ও মায়ের উপরে নির্যাতন চালাত। অশান্তি মেটাতে কয়েক বার সালিশি বৈঠকও হয়েছিল। কিন্তু সুরাহা হয়নি। প্রভাসবাবু ও কৃষ্ণাদেবীর এক আত্মীয়ের কথায়, অনটনের মধ্যেও একমাত্র ছেলের নানা আবদার রাখার চেষ্টা করতেন বাবা-মা। কিন্তু বিয়ের পর থেকে অত্যাচারের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। রাতে বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বার করে দিত। সারা রাত রাস্তাতেই কাটাতেন প্রভাসবাবু ও কৃষ্ণাদেবী। সমস্ত বিষয়ই বিচারককে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন আইনজীবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন