মগ্ন: চলছে শোলার কাজ। কুমোরটুলিতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
উত্তরসূরিদের আর এ পেশায় নামাতে চান না শম্ভুনাথ মালাকার, রঞ্জিৎ সরকার, অমর ঘোষেরা। শোলার তৈরি ছোট ছোট প্রতিমা এক সময়ে রমরমিয়ে বিক্রি হত কুমোরটুলিতে। কিন্তু শোলা চাষ আর আগের মতো না হওয়ায় সঙ্কটে পটুয়াপাড়ার শোলাশিল্পীরা।
কুমোরটুলিতে পঞ্চাশ বছর ধরে শোলার কাজ করছেন শম্ভুনাথ। ঠাকুরদা-বাবার দেখানো পথে শোলার নানা জিনিস তৈরি করেই এখনও সংসার চালান শম্ভুনাথ। হাতে হাতে তাঁর সঙ্গে কাজ করেন ছেলে সুজিত। এই শিল্পে সঙ্কটের কথা ভেবে শম্ভুনাথের আক্ষেপ, ‘‘এখন যা দুরবস্থা, পরের প্রজন্মকে আর এই পেশায় নামাতে চাই না। ওরা আসতেও চায় না।’’
অথচ বছর দশেক আগেও কুমোরটুলিতে শোলাশিল্পীদের কদর ছিল। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, তখন শহরতলির ভাঙড়, রাজারহাট ছাড়াও দুই চব্বিশ পরগনায় শোলার চাষ হত যথেষ্ট। এখন সেই জায়গার দখল নিয়েছে বহুতল বাড়ি। এ ছাড়াও দিনাজপুর, মালদা, বর্ধমান, হুগলির বিভিন্ন এলাকাতেও আগে চাষ হত। এখন শোলার চাষ হয় কেবল বনগাঁ, সুন্দরবন, মেদিনীপুরে। চাষ কম হওয়ায় দামও বেশি। বছর দশেক আগে বান্ডিল পিছু (৫-৭টা প্রতি বান্ডিলে) প্রায় ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হত। এখন একটা লম্বা, হৃষ্টপুষ্ট শোলার দামই পড়ে ২৫-৩০ টাকা।
শিল্পীদের আফসোস, চাষ কমে যাওয়ায় শোলার আমদানিও তলানিতে ঠেকেছে। আগে সপ্তাহে দু’দিন উল্টোডাঙা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় শোলার হাট বসত। এখন সপ্তাহে এক দিন বসলেও তেমন ভালো মানের শোলার আমদানি নেই। শিল্পী শম্ভুনাথ মালাকারের কথায়, ‘‘গত বছর প্রায় দশটি শোলার প্রতিমা বিদেশে গিয়েছে। এ বার মাত্র পাঁচটি। বিদেশ থেকে বায়না এলেও শোলার অভাবে কাজ করতে পারি না।’’ যদিও শিল্পীদের মতে, এই সঙ্কটের কারণে এখন তৈরি হচ্ছে ফাইবারের প্রতিমা, যা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে।
কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতির সম্পাদক তথা শোলাশিল্পী রঞ্জিত সরকারের কথায়, ‘‘যদিও শোলার বদলে ফাইবার মানে, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। এখনও বিদেশ থেকে অনেকেই শোলার ঠাকুরের বায়না করেন। কিন্তু ভাল মানের শোলার অভাবে তা করা হয়ে ওঠে না।’’ শোলা-সঙ্কটের জন্য তাই বাধ্য হয়ে ফাইবার দিয়ে তৈরি প্রতিমা ও সাজে হাত লাগাচ্ছেন শিল্পীরা। রঞ্জিতবাবুর খেদ, ‘‘পূর্বসূরিরা শোলার কাজ করে যে মর্যাদা পেতেন তা এখন কোথায়? পরের প্রজন্মের মধ্যে আর এই পেশায় আসার প্রবণতা দেখছি না। হারিয়ে যাবে একটা শিল্প!’’