Hawala

Partha Arpita Case:মজুত কোটি কোটি টাকা কি হাওয়ালা চক্রের ইঙ্গিত?

গত কয়েক দিনে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের পাশাপাশি তদন্ত যত এগিয়েছে, ততই হাওয়ালা-তত্ত্বে শান দিয়েছে বিভিন্ন মহল।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২২ ০৬:৫৭
Share:

ফাইল ছবি

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির সঙ্গে কি ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে হাওয়ালা যোগ? গত কয়েক দিনে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের পাশাপাশি তদন্ত যত এগিয়েছে, ততই হাওয়ালা-তত্ত্বে শান দিয়েছে বিভিন্ন মহল। অভিযোগ, দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে মুখ খোলেনি তদন্তকারী সংস্থা। তবে চক্রের জাল যে ছড়ানো, তা নিয়ে এক প্রকার নিশ্চিত তদন্তকারীরাও।

Advertisement

নিয়োগ-দুর্নীতির তদন্তে মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট থেকে ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বুধবার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটেও তল্লাশি চালানো হয়। সেখান থেকেও উদ্ধার হয় আরও বেশি পরিমাণ টাকা ও সোনা। সূত্রের খবর, ফ্ল্যাটের ভিতরে শৌচালয়-সহ একাধিক জায়গা থেকে খোলা বা প্যাকেটে মোড়া অবস্থায় কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে।

বিপুল সেই টাকা উদ্ধারের পরেই বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন, কোথা থেকে এল এত টাকা? কেনই বা কোটি কোটি টাকা মজুত করে রাখা হয়েছিল? আর এখানেই অনেকে হাওয়ালার তত্ত্ব সামনে আনছেন। প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতাতেও কি তবে সক্রিয় হাওয়ালা চক্র? মাস দুই আগে রাজ্যের একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। গ্রেফতার হওয়া কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রাজ্যে হাওয়ালা চক্রের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য তদন্তকারীরা হাতে পেয়েছিলেন বলে খবর। এমনকি, হাওয়ালা চক্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়ে এ রাজ্যে টাকা আসা-যাওয়ার তথ্যপ্রমাণ আগের একাধিক হাওয়ালা যোগের তদন্তে পেয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা।

Advertisement

নির্বাচনের আগেও বার বার হাওয়ালা চক্রের সক্রিয় হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কলকাতার গত পুরভোটের আগে খাস শহর থেকে এক কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে হাওয়ালা তত্ত্ব সামনে এসেছিল বলে খবর। যদিও শহরে হাওয়ালা চক্র নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে নারাজ কলকাতা পুলিশের কর্তাদের একটি অংশ।

প্রশ্ন উঠেছে, বেআইনি অর্থ লেনদেনে অপরাধীদের কাছে কেন ‘বিশ্বাসযোগ্য’ হাওয়ালা? জানা গিয়েছে, সরকারের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বেআইনি টাকা বিদেশে পাঠাতেই সক্রিয় গোটা হাওয়ালা ব্যবস্থা। গোটা ব্যবস্থাটাই চলে বিশ্বাসের উপরে। একদল দালাল বা হাওয়ালাদার এ দেশে বা শহরে বসে টাকা সংগ্রহ করে। বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকে এদের এজেন্ট।

বেআইনি টাকা বিদেশে সরাতে চাইলে প্রথমে এ দেশের হাওয়ালাদারের কাছে সেই টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়। সঙ্গে দেওয়া হয় সাঙ্কেতিক শব্দ। টাকার আসল মালিক যে দেশে ওই টাকা পাঠাতে বলে, সেই দেশের এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাওয়ালাদার। এ দেশ থেকে বার্তা পাওয়ার পরে ভিন্ দেশে থাকা ওই এজেন্ট টাকা পৌঁছে দেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা ব্যক্তির কাছে। টাকা দেওয়ার আগে যাচাই করে নেওয়া হয় কোড। বিনিময়ে মোটা টাকা কমিশন নেয় হাওয়ালাদার।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা একাধিক হাওয়ালা যোগের তদন্তে নেমে জানতে পারে যে ‘স্টার’, ‘পান খায়া’ ইত্যাদি শব্দ ‘পাসওয়ার্ড’ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। মুখে মুখে লেনদেন হওয়ায় ব্যাঙ্ক বা বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রে এর প্রমাণ থাকে না। ফলে সরকারের যেমন বিপুল রাজস্ব ক্ষতি হয়, তেমনই বেআইনি আয়ের তথ্যও এ ভাবে সরানো যায়।

প্রাক্তন পুলিশকর্তা পঙ্কজ দত্ত বলছেন, ‘‘অবৈধ ভাবে অর্জন করা টাকা ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মাধ্যমে বিদেশে পাঠাতে গেলেই নজরে আসার আশঙ্কা থাকে। তাই অপরাধীরা নজর এড়াতে এই চক্রের সাহায্য নিয়ে বিদেশে টাকা পাঠায়। এর ফলে অপরাধীর নাম ও পরিচয় যেমন গোপন থাকে, তেমনই আয়ের উৎস অজানা থেকে যায়। গোটা প্রক্রিয়ার পিছনের থাকে অনেক বড় কোনও চক্র।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন