অফিসার অপসারণ কাণ্ড

তদন্ত রিপোর্ট শীঘ্রই, আশ্বাসে রাশ আন্দোলনে

তদন্ত কতটা এগোল, জানানো হয়নি। তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অফিসার অপসারণ নিয়ে গড়া তদন্ত কমিটিকে ২৮ অগস্টের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন উপাচার্য সুগত মারজিত। উপাচার্য তদন্ত রিপোর্ট পেশের নির্ঘণ্ট বেঁধে দেওয়ার পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধিকার রক্ষা যৌথ মঞ্চ তাদের প্রস্তাবিত আন্দোলন স্থগিত করে দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৫
Share:

তদন্ত কতটা এগোল, জানানো হয়নি। তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অফিসার অপসারণ নিয়ে গড়া তদন্ত কমিটিকে ২৮ অগস্টের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন উপাচার্য সুগত মারজিত। উপাচার্য তদন্ত রিপোর্ট পেশের নির্ঘণ্ট বেঁধে দেওয়ার পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধিকার রক্ষা যৌথ মঞ্চ তাদের প্রস্তাবিত আন্দোলন স্থগিত করে দিয়েছে।

Advertisement

আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স বা অর্থ অফিসার হরিসাধন ঘোষকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিছু দিন পরে জানানো হয়, ওই পদটিই তুলে দেওয়া হচ্ছে। তার পরেই শুরু হয় ধর্না-আন্দোলন-বিক্ষোভ। যৌথ মঞ্চের সেই আন্দোলনে অন্যতম দু’টি দাবি ছিল: l ফিনান্স অফিসারের পদ বিলোপ করা চলবে না। l ওই পদে হরিসাধনবাবুকেই ফিরিয়ে আনতে হবে। সেই আন্দোলন ঘিরে ব্যাপক হাঙ্গামা বাধে। নিগৃহীত হন কিছু শিক্ষক। বিস্তর টানাপড়েনের পরে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর নির্দেশে ওই অফিসারের অপসারণ সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত কমিটি গড়া হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।

ফিনান্স অফিসারের অপসারণ নিয়ে তদন্ত চেয়ে সিন্ডিকেটের ঘরের বাইরে বেশ কয়েক দিন ধরে ধর্না চালিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার রক্ষা যৌথ মঞ্চ। ওই আন্দোলন ঘিরে তৎকালীন উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের সামনেই শাসক দলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদে বা টিএমসিপি-র নেতা-কর্মীদের হাতে নিগৃহীত হন আন্দোলনকারীদের মঞ্চে থাকা কয়েক জন শিক্ষক। তার পরে ঘটনাপ্রবাহ দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকে। সুরঞ্জনবাবু কলকাতা ছেড়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-পদে যোগ দেন। সুগত মারজিতকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য করে আনা হয়। তাঁরই ডাকে অভিযুক্ত ছাত্রনেতা ক্ষমা চেয়ে নেন আন্দোলনকারী শিক্ষকদের কাছে। রাজ্যপালের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ২৮ জুলাই আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দাবি মেনে ফিনান্স অফিসার সংক্রান্ত বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। তার পরে যৌথ মঞ্চ সাময়িক ভাবে তাদের আন্দোলন স্থগিত করে দেয়।

Advertisement

কিন্তু সেই তদন্ত কমিটি কবে রিপোর্ট দেবে, তা পরিষ্কার না-হওয়ায় বুধবার থেকে ফের আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাধিকার রক্ষা যৌথ মঞ্চ। বৃহস্পতিবার তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জমায়েতের ডাক দিয়েছিল। বিভিন্ন কলেজ থেকে শিক্ষকেরা সেই জমায়েতে জড়ো হতে শুরু করেন। ইতিমধ্যে শুরু হয় সিন্ডিকেটের বৈঠক। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই যৌথ মঞ্চের প্রতিনিধিদের জানানো হয়, ২৮ তারিখের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছেন উপাচার্য।

সেই বার্তা পাওয়ার পরেই যৌথ মঞ্চের সম্পাদক দিব্যেন্দু পাল বলেন, ‘‘আমরা উপাচার্যের উপরে আস্থা রাখছি। তবে ২৮ তারিখের পরেও যদি রিপোর্ট পেশ করা না-হয়, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’’ উপাচার্যের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত রাখলেও ২০ অগস্ট ‘দাবি দিবস’ পালনের ডাক দিয়েছে যৌথ মঞ্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্ট্যাটিউট’ বা বিধি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান না-হলে তারা প্রয়োজনে নিজেরা প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন এবং তিনিই সিন্ডিকেটে প্রতিনিধিত্ব করবেন বলেও মঞ্চ এ দিন জানিয়ে দিয়েছে।

ফিনান্স অফিসারের অপসারণ নিয়ে টানাপড়েন চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। সেই বিষয়ে তদন্ত কমিটির সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলেও তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি উপাচার্য। মুখ খুলতে নারাজ তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান অরুণ চট্টোপাধ্যায়ও।

তবে উপাচার্য সুগতবাবু জানান, সিন্ডিকেটের এ দিনের বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক গোলযোগ সংক্রান্ত আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বা সিএজি-র কাছে কয়েক বছরের হিসেব ফের জমা দেওয়ার বিষয়টিও এ দিনের আলোচনায় উঠে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অশিক্ষক কর্মচারীদের পদোন্নতির বিষয়টি প্রায় আট বছর ধরে আটকে আটকে আছে। সিন্ডিকেটের এ দিনের বৈঠকে ওই বিষয়ে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা হয়েছে বলে জানান উপাচার্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন