সিঙ্গাপুর থেকে ভাইয়ের ফোন এল কলকাতায় দাদার কাছে। কিন্তু দাদা দেখলেন তাঁর মোবাইলে দেশের একটি সাধারণ নম্বর ভেসে উঠছে। ফোন ধরে তিনি জানতে চাইলেন, ভাই কলকাতায় এসেছে কি না। ভাই জবাবে জানালেন, তিনি সিঙ্গাপুর থেকেই ফোন করছেন।
ঘটনার ব্যাখ্যা না পেয়ে বিধাননগর পুলিশের দ্বারস্থ হন এক ব্যক্তি। ঘটনায় আগে তিন জনকে ধরতে পারলেও মূল চক্রীর খোঁজ মিলছিল না। অবশেষে প্রায় আড়াই বছরের মাথায় তাকে দিল্লি থেকে ধরল বিধাননগর সাইবার থানার পুলিশ। সরকারি কৌঁসুলি বিভাস চক্রবর্তী জানান, এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক চক্রের হদিস মিলেছে। ধৃতের নাম অভিষেক রঞ্জন (৩৫)। মঙ্গলবার দিল্লির রামলীলা ময়দানের কাছে পীরাগার্থী এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার বিধাননগর আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়।
পুলিশ জানায়, ২০১৫-র মার্চে পাঁচ নম্বর সেক্টরের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় টেলিকম এনফোর্সমেন্ট রিসোর্স অ্যান্ড মনিটরিং সেলের তরফে অভিযোগ হয়েছিল। পরে সেই ঘটনার তদন্তে নামে সাইবার থানা। পাঁচ নম্বর সেক্টরের সিসট্রন বিল্ডিং এ টেলস্পিন প্রোজেক্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামক একটি সংস্থায় হানা দিয়ে দেখা যায়, বিদেশ থেকে যে সব ফোন কলকাতায় আসছে, তার বেশ কিছু ফোন সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। তাঁরা ওই ফোনের কল সম্পর্কে অবগত নন। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, পাঁচ নম্বর সেক্টরের ওই অফিসে একটি সার্ভার বসানো হয়েছিল। বিদেশ থেকে আসা ফোন কল ডাইভার্ট করার কাজ হচ্ছিল সেখানে। এর ফলে এক দিকে যেমন কেন্দ্রের রাজস্বের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে, তেমনই ওই ফোনকলগুলির উপরে সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণও থাকছে না। ফলে নিরাপত্তার দিক থেকেও তা খুব বিপজ্জনক।
এই তথ্য পেয়ে পুলিশ ওই সংস্থার তিন ব্যক্তিকে আগেই গ্রেফতার করে। পুলিশ সূত্রের খবর, তিন জনকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, দিল্লির বাসিন্দা ধৃত অভিষেক তাঁদের তথ্যপ্রযুক্তির অন্য ধরনের কাজের সুযোগ দেবে বলে। সেই অনুসারে এই সংস্থা চালু করা হয়। বাস্তবে যে এমন অনৈতিক এবং বেআইনি কাজ হচ্ছে সে সম্পর্কে তাঁরা কিছু জানেন না। এর পরেই মূল চক্রী অভিষেকের খোঁজ শুরু করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত অভিষেক মুম্বইয়ের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করেছে। তবে পুলিশের দাবি, শুধু অভিষেক নয়, এই চক্রে রয়েছে আরও অনেকে যুক্ত। চক্রের বাকিদের খোঁজে অভিষেককে জেরা করছে পুলিশ।
বিধাননগর পুলিশের এক কর্তা জানান, এই ঘটনার রহস্যভেদ করা চ্যালেঞ্জ ছিল। দেরি হলেও চক্রের পাণ্ডাকে ধরা গিয়েছে। দেশের নিরাপত্তার দিক থেকে এই চক্র বিপজ্জনক। তাই চক্রের গোটা কর্মকাণ্ড এবং সদস্যদের বিষয়ে তথ্য পেতে এ দিন আদালতে ধৃতের ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন করা হয়েছে।