Cyclone Amphan

গরমে নির্জলা টানা তিন দিন, শহরে বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভ

বিক্ষোভকারীদের উপরে লাঠি চালানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২০ ০৩:৩৮
Share:

ক্ষুব্ধ: ঘূর্ণিঝড়ের পরে জল এবং বিদ্যুৎহীন অবস্থা চলছেই। দ্রুত পরিষেবা চালু করার দাবিতে শেষমেশ পথে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করলেন ভুক্তভোগীরা (বাঁ দিকে)। শনিবার সন্ধ্যায়, কসবায় বিজন সেতুর মুখে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

ঘূর্ণিঝড় হয়েছে বুধবার। কিন্তু শনিবার রাতেও শহরের বহু এলাকা অন্ধকার। চলছে জলের জন্য হাহাকারও। ধৈর্য হারিয়ে আপাত শান্ত গৃহস্থও শামিল হয়েছেন বিক্ষোভে, রাস্তা অবরোধে। সর্বত্রই পুরসভা এবং বিদ্যুৎ সংস্থা সিইএসসি-র ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় মানুষকে। পথ অবরোধ হয় শহরের পঞ্চাশটি জায়গায়। পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে এ দিন রাত পর্যন্ত প্রশাসনের তরফে কিছু জানানো হয়নি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, জলের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা দেখতে পুরসভাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

মে মাসের গরমে বিদ্যুৎ কিংবা জল না পেয়ে শুক্রবার থেকেই রাস্তায় নেমে মানুষ বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেছিলেন। এ দিন সেই বিক্ষোভের সুর আরও চড়া হয়। শুক্রবারের তুলনায় শনিবার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভে মানুষের জমায়েতও অনেক বেশি ছিল। কোথাও কোথাও বিক্ষোভকারীরা বিদ্যুৎকর্মী কিংবা পুলিশের উপরেও চড়াও হন। আবার বিক্ষোভকারীদের উপরে লাঠি চালানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধেও।

এ দিন সকাল থেকেই নেতাজিনগর, গড়িয়া, আজাদগড়, যাদবপুর, জোকা, বেহালা, ই এম বাইপাসে বিদ্যুৎ ও জলের দাবিতে রাস্তা অবরোধ হয়। শুক্রবারের পরে এ দিন বিকেলেও কসবার বাসিন্দারা বিজন সেতুর কাছে রাস্তা অবরোধ করেন। বিক্ষোভে শামিল হয়ে মহিলারাও রাস্তায় বসে পড়েন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, কলকাতা পুরসভা গাছ কাটতে দেরি করছে। গতি নেই সিইএসসি-র কাজেও। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস অনেক আগে পাওয়া সত্ত্বেও পুরসভা কিংবা সিইএসসি নিজেদের দুর্যোগ মোকাবিলার পরিকাঠামোকে উন্নত করেনি বলেও অভিযোগ বিক্ষোভকারীদের।

Advertisement

এ দিন চেতলায় মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা অবরোধকারীদের সঙ্গে কথাও বলেন। জোকায় অবরোধে আটকে কাকদ্বীপে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যেতে পারেননি ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীই সে কথা জানিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী পরে বলেন, ‘‘কলকাতা পুরসভাকে বলেছি, জলের জন্য যেন কষ্ট না হয়। প্রয়োজনে পাউচ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। কাজের লোক নেই। করোনার জন্য অনেকে ছুটিতে। ২৫-৩০ শতাংশ লোক কাজ করছেন। সকলের সাহায্য নেব। কিন্তু বাস্তব সমস্যাটাও তো বুঝতে হবে।’’ সিইএসসি-কে জেনারেটর ভাড়া করে পরিস্থিতি সামাল দিতেও বলেছেন তিনি।

লালবাজারের খবর, কলকাতায় এ দিন ৫০টি জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। গড়িয়া থেকে টালিগঞ্জের মধ্যেই সাতটি জায়গায় রাস্তা অবরোধ হয়। নেতাজিনগর, ডানলপে পুলিশ আবাসনের বাসিন্দারাও বিক্ষোভ দেখান। এন এস সি বসু রোডের অশোকনগর পার্কের কাছে রাস্তা অবরোধে প্রথম সারিতে ছিলেন বৃদ্ধারা।

সত্তরোর্ধ্ব মুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাড়িতে অসুস্থ স্বামী। বিদ্যুৎ-জল ছাড়া আর থাকতে না পেরে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি।’’ আর এক অবরোধকারী মধুমিতা চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘বাড়িতে অসুস্থ শাশুড়ি রয়েছেন। জল চাইতে রাস্তায় নেমেছি।’’ বিকেলে রিজেন্ট পার্ক থানায় হাজির হন ৯৭ নম্বর ওয়ার্ডের একদল বাসিন্দা। সেখানকারই মুর অ্যাভিনিউয়ের শ’খানেক বাসিন্দা দুপুর থেকে একই কারণে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখান। অভিযোগ, স্থানীয় কাউন্সিলর মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়কে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে রাতে রিজেন্ট পার্ক থানার পুলিশ লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভ হটিয়ে দেয়।

পুলিশের আশঙ্কা, পরিষেবার উন্নতি না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালের কাছে অবরোধে আটকে পড়েন সেখানকার চিকিৎসক-নার্সরা।

জল ও বিদ্যুতের দাবিতে উত্তর শহরতলির পানিহাটি, রহড়া, কামারহাটি, সোদপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় রাস্তা অবরোধ হয়। অবরুদ্ধ হয় কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে। রহড়া থানার পুলিশকে লক্ষ্য করে উড়ে আসে ইট। বি টি রোডের টবিন রোড মোড়, কামারহাটির আর এন টেগোর রোডেও রাস্তায় নামেন বাসিন্দারা। ডানলপ পুলিশ আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভিতরে গাছ ভেঙে পড়ে রয়েছে। বিদ্যুৎ, জল কিছুই নেই।

বিদ্যুৎ না থাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়েরা। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পুরো দিন বারাসত থানার হৃদয়পুর, কাজিপাড়ায় রাস্তা অবরুদ্ধ ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন