Coronavirus Lockdown

আমপানের ধাক্কায় আরও সঙ্কটে কুমোরটুলি

ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে শিল্পীদের কারও ঘরের চাল উড়ে গিয়েছে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান ও মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২০ ০৩:২৩
Share:

নিরাশ্রয়: আমপান উড়িয়ে িনয়ে গিয়েছে মৃৎশিল্পীদের স্টুডিয়োর চাল। রবিবার, কুমোরটুলিতে। নিজস্ব চিত্র

টানা লকডাউনে এমনিতেই সঙ্কটজনক অবস্থা হয়েছিল। আমপানের কবলে পড়ে এ বার ‘কোমা’য় চলে যাচ্ছেন তাঁরা। এমনই পরিস্থিতি কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের।

Advertisement

ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে শিল্পীদের কারও ঘরের চাল উড়ে গিয়েছে। কারও বা প্রতিমা গড়ার জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সব ক্ষতির পূরণ কী ভাবে হবে, জানা নেই তাঁদের। কারণ, করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা এমনিতেই এ বছরের দুর্গাপুজো নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এরই মধ্যে একটানা চলতে থাকা লকডাউনের বিধি ছেদ টেনেছে অন্য পুজো-পার্বণেও। ফলে হাতের উপর হাত রেখেই দিন কাটছে শিল্পীদের। এখনও পর্যন্ত তাঁদের ঘরে দুর্গাপুজোর কোনও বায়না আসেনি বললেই চলে।

তবু যে ক’টি দুর্গাপ্রতিমা শিল্পীরা তৈরি করছিলেন, তার বেশির ভাগই আমপানের দাপটে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে গুদামের অবিক্রিত বাসন্তী, অন্নপূর্ণা, শীতলা প্রতিমা। কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সাংস্কৃতিক সমিতির সম্পাদক বাবু পাল বলেন, ‘‘২০-২৫টি অন্নপূর্ণা ও শীতলা প্রতিমা এবং প্রায় ৩০-৪০টি লক্ষ্মী প্রতিমা বাইরে রাখা ছিল। সেগুলো সব ঝড়ে নষ্ট হয়েছে।’’ সমিতি সূত্রের খবর, লকডাউনের মধ্যে অন্নপূর্ণা, বাসন্তী ও শীতলাপুজো পড়ায় সে সব বাতিল করেছেন উদ্যোক্তারা। অন্নপূর্ণা প্রতিমার দাম পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা, শীতলা প্রতিমার দাম তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা এবং দেড় থেকে দু’হাজার টাকা মূল্যের লক্ষ্মী প্রতিমার মিলিয়ে লক্ষাধিক টাকার ঠাকুর নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে আর্থিক সঙ্কটের মুখে কুমোরটুলির প্রায় সাতশো শিল্পী। সরকারের সাহায্য ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো এ বার অসম্ভব, জানাচ্ছেন তাঁরাই।

Advertisement

শিল্পীরা জানাচ্ছেন, ধীরে ধীরে সব কিছু খুলে যাচ্ছে দেখে জুন মাস থেকে তাঁরাও করোনার সব বিধি মেনে কাজ শুরু করার কথা ভেবেছিলেন। মৃৎশিল্পীরা স্থির করেছিলেন, লকডাউন উঠে গেলে জুন থেকেই কারিগরদের ডাকতে শুরু করবেন। কারণ, হাতে সময় অনেক কমে গিয়েছে। প্রতিমার বায়না পেলে কী ভাবে দ্রুত গতিতে কাজ করা যায় সে সবই পরিকল্পনা চলছিল। কিন্তু আমপানের তাণ্ডবে তোলপাড় স্টুডিয়ো থেকে গুদাম। মজুত করা জিনিস, প্রতিমা সব লন্ডভন্ড হওয়ায় কাজ ফের কবে শুরু হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কুমোরপাড়ায়।

কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সমিতির সম্পাদক কার্তিক পাল বলেন, ‘‘প্রতি বৈশাখের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ৮-১০টা বড় পুজোর বায়না পাই। এ বার একটাও পাইনি। লকডাউন ভাত আগেই কেড়ে নিয়েছে। ঘুরে দাঁড়ানোর যেটুকু বা চেষ্টা চলছিল, তা-ও আমপান শেষ করে দিল।’’ লকডাউনের জন্য চৈত্র, বৈশাখে শীতলা প্রতিমা কিনতে এ বার কুমোরটুলিতে কেউ আসেননি। পটুয়াপাড়ার শিল্পীদের প্রতি ঘরে সে সব পড়ে রয়েছে। এ বছর বিদেশ থেকে আসা দুর্গা প্রতিমার বায়নাও বাতিল হয়েছে। শিল্পী মিন্টু পাল বলেন, ‘‘করোনার জন্য বিদেশ থেকে দশটি প্রতিমার বায়না আমার বাতিল হয়েছে। চরম সঙ্কটে পড়েছি। ঘূর্ণিঝড়ে আমার স্টুডিয়ো নষ্ট হয়েছে। দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করছিলাম। প্রবল বৃষ্টিতে গলে গিয়েছে।’’

শিল্পীদের কথায়, ‘‘মৃৎশিল্পের এমন সঙ্কট কোনও দিন এসেছে বলে শুনিনি। এই মন্দার মধ্যেও যেটুকু প্রতিমা তৈরি হয়েছিল সেগুলিও ঝড়ে নষ্ট হয়ে গেল।’’ কার্তিকবাবু বলেন, ‘‘শিল্পীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। তার উপরে ছাদটুকুও কেড়ে নিল আমপান। শিল্পীদের স্টুডিয়োর মোট ক্ষতি কত, এখনও সেই পূর্ণাঙ্গ হিসেব আসেনি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন, মৃৎশিল্পকে বাঁচাতে কুমোরটুলির শিল্পীদের পাশে দাঁড়ান।’’

আরও পড়ুন: ছোঁয়াচ এড়াতে শহরের সর্বত্রই চলুক সাইকেল, উঠছে দাবি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন