আসছে ফণী, জরুরি বৈঠক পুরসভায়

বৃহস্পতিবার ফণীর মোকাবিলায় জরুরি বৈঠক হয় কলকাতা পুরসভায়। ঘুর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে কলকাতায় যেন প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে সে জন্য প্রশাসনকে সব রকম ভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৯ ০১:০২
Share:

তড়িঘড়ি: মা উড়ালপুলের পাশে হোর্ডিং খোলার কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

দুর্ঘটনা এড়াতে রাস্তার ধারে বাতিস্তম্ভ, ট্রান্সফর্মার কিংবা বিদ্যুতের খুঁটিতে হাত দিতে নিষেধ করছে কলকাতা পুরসভা। এমনকি বিপজ্জনক বাড়িও খালি করতে বাসিন্দাদের কাছে অনুরোধ করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। শহরে ফণী আছড়ে পড়ার আগে বৃহস্পতিবার মাইকে এ সব নিয়ে প্রচার শুরু করল কলকাতা পুরসভা। একই সঙ্গে হাতিবাগান, গড়িয়াহাট থেকে বেহালায় পলিথিনের ছাউনিতে ঢাকা স্টলের মালিকদের বলা হল দু’-তিন দিনের জন্য অন্যত্র সরতে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ফণীর মোকাবিলায় জরুরি বৈঠক হয় কলকাতা পুরসভায়। ঘুর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে কলকাতায় যেন প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে সে জন্য প্রশাসনকে সব রকম ভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়, ঝড়ের সময়ে দুর্ঘটনা এড়াতে শহর জুড়ে উঁচু জায়গা থেকে সব ধরনের হোর্ডিং, ব্যানার খুলে দেওয়া হবে। শহরের রাস্তায় বেআইনি বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়ারও নির্দেশ দেন ফিরহাদ। পুরসভার আলো দফতর এবং সিইএসসিকে ওই কাজ দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

মেয়র ফিরহাদ বলেন, ‘‘বছর খানেক আগে শহরের একাধিক জায়গা জলে ডুবে যাওয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছিল। সে সব এড়াতে সিইএসসিকে বলা হয়েছে নিচু জায়গায় জল জমে ডুবে যেতে পারে তেমন ট্রান্সফর্মার কিংবা পিলার চিহ্নিত করে সরিয়ে দিতে।’’ এ দিনের ওই বৈঠকে মেয়র ছাড়াও পুর কমিশনার, কেএমডিএ-র চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার, দমকল দফতরের ডিজি, পূর্ত, সেচ, জনস্বাস্থ্য, সিইএসসি-সহ পুরসভার পদস্থ কর্তারা হাজির ছিলেন।

Advertisement

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ফণীর তাণ্ডবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হতে পারে। ঘুর্ণিঝড়ের জেরে সে দিন গাছ ভেঙে, উপড়ে পড়ার প্রবল সম্ভাবনাও রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এমন পরিস্থিতিতে পুরসভার পার্ক এবং উদ্যান দফতরকে বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে হাত করাত এবং স্বয়ংক্রিয় করাত নিয়ে তৈরি থাকবে পুরসভার বিশেষ দল, এমনটাই জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। অতীতে ঝড়ে গাছ ভেঙে শহরের জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার ঘটনা একাধিক বার ঘটেছে। তেমন ঘটনায় প্রাণহানিও হয়েছে। পুরকর্তারা জানান, এখনই শহরে প্রায় ২৫০টি মতো এমন গাছ রয়েছে যেগুলি বিপজ্জনক অবস্থায়। সেগুলি কেটে ফেলার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। তবে তার আগেই ঘুর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে। ফণীর দাপটে সেই সব গাছের কতগুলি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছে পুরসভা।

পুরসভার নিকাশি দফতরকে বলা হয়েছে এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়লে দ্রুত পাম্প চালু করতে। এ জন্য শহর জুড়ে প্রায় সাড়ে তিনশোরও বেশি পাম্প তৈরি রাখা হয়েছে। বরো অফিসগুলিকে বলা হয়েছে প্রয়োজনে পাম্প ভাড়া করে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে। গঙ্গার ধারে যে সমস্ত লকগেট রয়েছে, তা প্রবল বৃষ্টির সময়ে বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

মেয়র জানান, শহরের অনেক জায়গায় বড় বড় কাঠামোয় হোর্ডিং রয়েছে। ঝড়ের সময়ে সেগুলি উড়ে গিয়ে, কাঠামো ভেঙে বড় বিপদ হতে পারে। সে সব ভেবেই এ দিন দুপুর থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাণিজ্যিক এবং অবাণিজ্যিক সব হোর্ডিং, ফ্লেক্স কেটে ফেলা শুরু করা হয়েছে। ফিরহাদ জানান, শহরে বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের সাময়িক আশ্রয় দেওয়ার জন্য ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থা করেছে পুরসভা। এর পাশাপাশি, তৈরি থাকছে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরও। আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য পুরভবনে দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স রাখা থাকবে। এ ছাড়া বিভিন্ন বরোতেও থাকবে মোবাইল অ্যাম্বুল্যান্স। প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম-সহ ওআরএস, হ্যালোজেন ট্যাবলেট নিয়ে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে পুর স্বাস্থ্যকর্মীদের।

পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে পুরভবনে সজাগ থাকবে কন্ট্রোল রুম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন