নববর্ষে দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বরে ভিড়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
এ বারও যেন তাল কেটেছে ভিড়ের! বেশ কয়েক বছর ধরেই নববর্ষে কালীঘাটের ভিড়টা কমছিল। এ বছর যেন তা প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। আর তাই মনের মতো যজমান না পেয়ে কার্যত হাপিত্যেশ করেই কাটাতে হল সেবায়েত ও পাণ্ডাদের।
দক্ষিণেশ্বরে অবশ্য ছবিটা ছিল উল্টো। শেষ রাত থেকেই মন্দিরের বাইরে লম্বা লাইন পড়েছিল দর্শনার্থীদের। এক সময়ে যা পৌঁছে যায় বালি ব্রিজের মাঝামাঝি পর্যন্ত। দক্ষিণেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষও দাবি করেছেন, ভোর পাঁচটা থেকে শুরু হওয়া ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাঁদের। দুপুরে মন্দির কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পরে বিকেলেও ভিড় ছিল ভালই।
রবিবার রাত পৌনে ১২টায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিয়ে বেরিয়ে যান। তার পর থেকেই মূল মন্দির ও নাটমন্দির-সহ গোটা চত্বরের দোকানগুলিতে জেগে বসে ছিলেন সেবায়েত ও পাণ্ডারা। কিন্তু রাত জেগে বসে থাকাই সার হয়েছে তাঁদের। কয়েক বছর আগেও যেখানে নববর্ষের আগের রাত থেকে পুজো দিতে ভিড় জমাতেন ব্যবসায়ীরা, সেখানে এখন পুরো খাঁ খাঁ অবস্থা। রাত জেগে যজমানের অপেক্ষায় বসে থাকা সেবায়েতরা বললেন, ‘‘এ বার তো ব্যবসা তলানিতে এসে ঠেকল।’’
এক সময়ে পাণ্ডাদের দৌরাত্ম্যের জন্য রীতিমতো বদনাম ছিল কালীঘাটের। যজমান ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য ধাক্কাধাক্কি, মারামারির মতো বিভিন্ন ঘটনা আকছারই ঘটত। তবে এখন সেই অবস্থা বদলে গিয়েছে বলেই দাবি করছেন সেবায়েত ও পাণ্ডারা। কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীদের ভিড় জমল না। সেবায়েত ও পাণ্ডাদের একাংশের মতে, ‘‘এ রাজ্যে ব্যবসায় যে প্রবল মন্দা, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।’’ তাঁরা আরও বলছেন, ‘‘বছরে দু’দিন কালীঘাট মন্দিরের রোজগার তুঙ্গে ওঠে। নববর্ষে ও কালীপুজোয়। গত বছর কালীপুজোতেও তেমন ভিড় হয়নি। আর নতুন বছরের প্রথমেও হল না।’’
রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত কয়েক জন সেবায়েতের ধরাবাঁধা কয়েক জন ব্যবসায়ী যজমান এলেও সেই সংখ্যাটাও কমেছে বলে দাবি তাঁদের। মূলত ব্যবসায়ীদের থেকে পাওয়া দক্ষিণাতেই তাঁদের আয় বাড়ত। কারণ, ব্যবসায়ীদের অনেকেই পুজো মিটলে খুশি হয়ে হাতে এক-দুই হাজারের টাকা গুঁজে দিতেন। কিন্তু সাধারণ দর্শনার্থীদের থেকে টাকা বেশি মেলে না। সেবায়েত ও পাণ্ডাদের কথায়, ‘‘সাধারণ দর্শনার্থীদের থেকে একটু বেশি টাকা চাইলে তাঁরা আবার মন্দির কমিটির কাছে অভিযোগ করেন।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
দক্ষিণেশ্বরে অবশ্য কোনও দিনই পাণ্ডা ব্যবস্থা চালু ছিল না। সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে পুজো দিতে হয়। এ দিনও কেউ কেউ যেমন মন্দির সংলগ্ন ডালা আর্কেড থেকে মিষ্টি, ফুল কিনে এনে পুজো দিয়েছেন। কেউ আবার বাড়ি থেকেই নিয়ে এসেছেন পুজোর সামগ্রী। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানান, ভিড় সামাল দিতে মন্দিরের ভিআইপি গেটও পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি, স্কাইওয়াকের নীচের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে সেখান দিয়ে লোকজনকে হাঁটার অনুমতি দেওয়া হয়। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অছি ও সম্পাদক কুশল চৌধুরী বলেন, ‘‘দুপুর ২টো পর্যন্ত পুজো নিতে হয়েছে। গরমে যাতে লাইন ভেঙে না যায়, তার জন্য আমরা জল বিতরণ করেছি। বারবার জল ছিটিয়ে মন্দির চত্বর ঠান্ডা রাখা হয়েছে।’’
আগে নববর্ষের দিন কালীঘাটে ভিড় সামলাতে পুলিশকে যেখানে হাঁফিয়ে উঠতে হত, সোমবার সেখানে সারা দিন তাঁদের এক রকম ‘বিশ্রাম’ নিয়েই কেটে গিয়েছে। আর সেবায়েত ও পাণ্ডারা সারা দিন বলে চলেছেন, ‘‘ব্যবসায়ীও নেই। আমাদের ব্যবসাও নেই।’’