এই বৃদ্ধা পড়ে যাওয়ার পরই গন্ডগোল বাধে। নিজস্ব চিত্র।
একই পরিবারের সঙ্গে একাধিক অভাবনীয় ঘটনা। এবং সেটা একই দিনে। আর গোটাটার সাক্ষী থাকল কলকাতা বিমানবন্দর।ঘণ্টা দশেকের মধ্যে এমন সব ঘটনা ঘটে যাওয়ায় রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়েছেন বেহালার মিত্র পরিবার। আপাতত পরিবারের কর্ত্রী সন্দীপা মিত্র পুলিশের হাতে বন্দি।
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ। একটি অ্যাপ ক্যাব এসে থামে কলকাতা বিমানবন্দরের অন্তর্দেশীয় টার্মিনালে। গাড়ির ভিতরে অশীতিপর এক বৃদ্ধা, মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক, একই বয়সের এক জন মহিলা এবং দুই তরুণী।
বিমানবন্দর চত্বরে তখন ওৎ পেতে বসে ছিলেন এক দল পুলিশ। ক্যাবটি থামতেই এক তরুণীকে তাঁরা গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার আগে পুলিশ কথাও বলে ক্যাবে থাকা মধ্য চল্লিশের মহিলা ও ব্যক্তির সঙ্গে। জানা যায়, ওই তরুণীর নাম শেফালি হালদার। বাড়ি চেতলা এলাকায়। মাসখানেক আগে বেহালার সন্দীপা মিত্রের বাড়িতে বৃদ্ধাকে দেখাশোনার কাজে যোগ দিয়েছিলেন।
দেখুন ভিডিয়ো
মঙ্গলবার সন্দীপা তাঁর বৃদ্ধা মা মালাদেবী, মেয়ে ঐশিকা এবং আত্মীয় অরিন্দম রায়কে নিয়ে পুরী যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলেন। মালার দেখাশোনা করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল শেফালিকে। কিন্তু শেষ মূহূর্তে বেঁকে বসে শেফালির পরিবার। পুলিশে খবর দেয় তারা। তারপরেই পুলিশ শেফালিকে বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।শেফালিকে পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পরে আতান্তরে পড়েন সন্দীপারা। কিন্তু তখনও বোঝা যায়নি, নাটক এখনও অনেক বাকি।
এ দিন ঐশিকা বলেন, “শেফালিকে নিয়ে যাওয়ার পরের প্রায় আধ ঘণ্টা আমরা একটা হুইলচেয়ারও জোগাড় করতে পারিনি। দিদা পক্ষাঘাতে প্রায় পঙ্গু। তাঁকে হুইলচেয়ার ছাড়া নড়ানো সম্ভব নয়।” শেষ পর্যন্ত যখন তাঁরা হুইলচেয়ার জোগাড় করে মালাদেবীকে নিয়ে টার্মিনালের ভিতর ঢুকতে পারেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ১১টা ৫০-এর ভুবনেশ্বরগামী বিমান ছেড়ে দিয়েছে। অরিন্দম বলেন,“এর পর আমরা বিমান সংস্থার সঙ্গে কথা বলি। দীর্ঘ টালবাহানার পর শেষ পর্যন্ত বুধবার ওই একই বিমানে আমাদের টিকিটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। আমরা যখন বাড়ি ফেরার জন্য তৈরি হচ্ছি, সেই সময়ে মাসিমা শৌচালয়ে যাওয়ার কথা বলেন।” তার পরে ওই পরিবারের সঙ্গে শুরু হয় আর এক প্রস্থ নাটক।
মালাদেবীকে শৌচাগারে নিয়ে যান নাতনি ঐশিকা। সাহায্য করার জন্য বিমান সংস্থার একজন মহিলা কর্মীও গিয়েছিলেন। বিমানবন্দর সূত্রে খবর, ওই কর্মী অন্তঃসত্ত্বা। ঐশিকার অভিযোগ, ওই বিমানকর্মীর অসতর্কতার জন্য শৌচাগারে পড়ে যান মালাদেবী। ঐশিকার কাছ থেকে সেই খবর পেয়ে শৌচাগারে পৌঁছন সন্দীপা।পাল্টা অভিযোগ করেছেন বিমান সংস্থার ওই মহিলা কর্মী। তিনি পরে বিমান বন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ কর্মীদের জানিয়েছেন, সন্দীপা শৌচাগারে ঢুকেই তাঁকে গালিগালাজ করা শুরু করেন। অন্তঃসত্ত্বা ওই কর্মীকে ধাক্কাও মারেন বলে অভিযোগ। এর পরওই বিমান কর্মী সিআইএসএফ-এর কাছে অভিযোগ করেন। সন্দীপার অভিযোগ, সিআইএসএফ কর্মীরা শৌচাগারের দরজা ভেঙে প্রায় নগ্ন অবস্থায় সন্দীপাকে বাইরে নিয়ে আসে।
ঐশিকার অভিযোগ, সিআইএসএফ দুপুর দু’টো থেকে ৪টে পর্যন্ত তাঁদের আটকে রেখে শেষ পর্যন্ত এনএসসিবিআই থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ঐশিকা বলেন,“দিদার হাতে চোট লেগেছে। তাঁর এখনই চিকিৎসা দরকার। অথচ বিমানবন্দর এবং থানাতে সব মিলিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা আটকে রাখার পর দিদাকে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বিমান কর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে সন্দীপাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।