বস্তাবন্দি দেহ পচে ক্ষতচিহ্ন

কোনও ধারালো অস্ত্রের আঘাত নয়, নাদিয়ালের যুবক আনোয়ার আলি পুরকাইতকে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে খুন করা হয়েছিল। তা হলে ঘটনাস্থল ও মৃতদেহ ভরে রাখা বস্তায় অত রক্ত এল কোথা থেকে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৭ ০২:০০
Share:

কোনও ধারালো অস্ত্রের আঘাত নয়, নাদিয়ালের যুবক আনোয়ার আলি পুরকাইতকে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে খুন করা হয়েছিল। তা হলে ঘটনাস্থল ও মৃতদেহ ভরে রাখা বস্তায় অত রক্ত এল কোথা থেকে? সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি সূত্রের খবর, আনোয়ার যক্ষ্মা রোগে ভুগছিলেন। সেই জন্য গলায় দড়ির ফাঁস দিতেই তাঁর মুখ থেকে রক্ত বেরিয়ে আসে। তা ছাড়া, তাঁর মাথা বার বার ঠুকেছিল দুষ্কৃতীরা। সেই আঘাতের ফলে তাঁর মুখ দিয়েও রক্ত বেরোয়।

Advertisement

শনিবার দুপুরে নাদিয়ালের লালপুলে নিজের বাড়ির কাছে খুন হন বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবক। সোমবার বিকেলে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি পরিত্যক্ত কারখানায় আনোয়ারের বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত যুবকের সারা শরীরে ক্ষত ছিল। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছিল, আনোয়ারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বার বার কোপানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশ এখন জেনেছে, ওই ক্ষতের কারণ অন্য।

এসএসকেএম হাসপাতালের এক সূত্রের খবর, আনোয়ারকে খুন করার কিছুক্ষণের মধ্যেই দেহ বস্তাবন্দি করা হয়েছিল। হাওয়া ঢুকতে না পারায় বদ্ধ জায়গায় দেহে পচন দ্রুত শুরু হয়। ফলে, শরীরের জলীয় অংশ থেকে অসংখ্য ফোস্কা তৈরি হয়, চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলে পোস্ট মর্টেম ব্লিস্টার। দেহের হদিস পাওয়ার পর বস্তা ধরে নাড়াচাড়া করার সময়েই সেগুলো আবার ফেটে গিয়েছে। আর তাতেই ওই রকম ক্ষতচিহ্নের মতো দেখাচ্ছিল বলে চিকিৎসকদের মত।

Advertisement

তিন অভিযুক্তের অন্যতম, সইফুদ্দিন মোল্লাকে সোমবার বিকেলে গ্রেফতার করার পরেই রহস্যের জট খোলে। ওই যুবককে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, ১০ হাজার টাকার টোপ দিয়ে তাকে খুনের ষড়যন্ত্রে মনজুর সামিল করেছিল। তবে আনোয়ারের দেহ উদ্ধার হওয়ার ৩৬ ঘণ্টা পরেও ওই খুনে মূল অভিযুক্ত, স্থানীয় প্রোমোটার মনজুর আলম মোল্লা ও তার সঙ্গী জিয়াউল মল্লিক এখনও ফেরার। তদন্তকারীরা জানান, শনিবার রাতের পর থেকে মনজুর তল্লাট থেকে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে। মোবাইল সিমের টাওয়ারের অবস্থান ধরে যাতে তার হদিস না পাওয়া যায়, সেই জন্য মনজুর তার মোবাইল ফোনও বাড়িতে ফেলে গিয়েছে। এনিয়ে নিহত যুবকের বাড়ির লোকজন ক্ষুব্ধ।

মঙ্গলবার আনোয়ারের দাদা শানওয়ার আলি পুরকাইত বলেন, ‘‘ঘটনার পর চার দিন হয়ে হল। অথচ খুনিদের পুলিশ এখনও খুঁজে পাচ্ছে না। তদন্তের দায়িত্ব নাদিয়াল থানা থেকে সরিয়ে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে দেওয়া হোক।’’ লালবাজারের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘নাদিয়াল থানার পুলিশই খুনের কিনারা করেছে। এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বাকি দু’জনের ধরা পড়া সময়ের অপেক্ষা।’’

পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় প্রোমোটার মনজুর আলমের সঙ্গে টাকাপয়সা নিয়ে বিবাদ চলছিল আনোয়ারের। টাকা ফেরত দেবার নাম করেই আনোয়ারকে ডেকে পাঠিয়েছিল মনজুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন